
(উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত)
📖Class 10 History Chapter 5 Notes: মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় ‘বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ’-এর জন্য সেরা নোটস খুঁজছ? তোমার প্রস্তুতিকে আরও নিখুঁত করতে এই পেজটি তোমার ‘Ultimate Exam Guide’ হয়ে উঠবে! 🔥 ছাপাখানা কীভাবে শিক্ষায় বিপ্লব আনল, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষায় বাঙালিরা কীভাবে এগিয়ে গেল, আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেন শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী গড়ে তুললেন – অধ্যায়ের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে সহজ ভাষায়, পয়েন্ট করে আলোচনা করা হয়েছে, যাতে তুমি সহজেই মনে রাখতে পারো। চলো, শুরু করা যাক! 👇
ভূমিকা: উনিশ শতকে যখন ভারতে রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন সভাসমিতি গড়ে উঠছে, ঠিক তখনই বাঙালি তথা ভারতীয়রা জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতির জগতেও এক নতুন পথের সন্ধান শুরু করে। ঔপনিবেশিক শাসনের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে জন্ম নেয় নানা বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ। এই অধ্যায়ে আমরা জানব ছাপাখানা কীভাবে শিক্ষার প্রসারে বিপ্লব আনল, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষায় ভারতীয়রা কীভাবে এগিয়ে এল এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে এক নতুন শিক্ষাভাবনার জন্ম দিলেন। চলো, শুরু করা যাক! ✨
বিষয় ১: 📜 বাংলায় ছাপাখানার বিকাশ ও তার প্রভাব 📜📖Class 10 History Chapter 5 Notes


ছাপাখানার হাত ধরেই জ্ঞান পৌঁছে গিয়েছিল সাধারণ মানুষের কাছে। উনিশ শতকে এর বিকাশ বাংলার ইতিহাসে এক নতুন মোড় এনেছিল।
১.১ বাংলায় ছাপাখানার সূচনা:
- প্রথম পদক্ষেপ: মনে রাখবে, ভারতে প্রথম ছাপাখানা কিন্তু বাংলায় বসেনি, বসেছিল গোয়ায়, পোর্তুগিজদের হাতে (১৫৫৬ খ্রি.)। বাংলায় আধুনিক ছাপাখানা আসে এর প্রায় ২০০ বছর পর!
- পথিকৃৎ কারা?:
- জেমস অগাস্টাস হিকি: কলকাতায় প্রথম বেসরকারি প্রেস স্থাপন করেন (১৭৭৭ খ্রি.)।
- মি. অ্যান্ড্রুজ: হুগলিতে ছাপাখানা খোলেন (১৭৭৮ খ্রি.)।
- চার্লস উইলকিনস: তিনিও হুগলিতে ছাপাখানা খোলেন (১৭৭৮ খ্রি.) এবং বাংলা হরফের প্রথম নকশা তৈরি করেন। তাঁকে তাই ‘বাংলা মুদ্রণশিল্পের জনক’ বলা হয়।
- বাংলা হরফের কারিগর: উইলকিনসের নকশাকে আরও সুন্দর ও ব্যবহারযোগ্য করে তোলেন হুগলির পঞ্চানন কর্মকার। তাকেও বাংলা হরফের জনক বলা হয়। পরবর্তীকালে সুরেশচন্দ্র মজুমদার ‘লাইনোটাইপ’ তৈরি করে আরও উন্নতি ঘটান।
- প্রথম বাংলা বই: উইলকিনস ও পঞ্চাননের তৈরি হরফেই প্রথম বাংলা বই ছাপা হয় – নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড রচিত ‘A Grammar of the Bengal Language’ (১৭৭৮ খ্রি.)। এটি হুগলিতে অ্যান্ড্রুজের ছাপাখানায় ছাপা হয়।
- শ্রীরামপুর মিশন প্রেস (১৮০০ খ্রি.): এই প্রেস ছিল একটি মাইলফলক! উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড (এঁদের বলা হয় ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’) এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকেই বাংলা ও অন্যান্য ভাষায় প্রচুর বই, বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তক ও ধর্মীয় গ্রন্থ (যেমন বাইবেলের অনুবাদ) ছাপা হয়। বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র ‘সমাচার দর্পণ’ (সাপ্তাহিক, ১৮১৮) এবং প্রথম সাময়িকপত্র ‘দিগদর্শন’ (মাসিক, ১৮১৮) এখানেই প্রথম ছাপা হয়।
১.২ ছাপা বই ও শিক্ষাবিস্তার:
- জ্ঞান সর্বসাধারণের জন্য: ছাপাখানার আগে হাতে লেখা পুঁথি ছিল খুব দামি। ছাপা বই সস্তা হওয়ায় সাধারণ গরিব ছাত্রছাত্রীরাও বই কেনার সুযোগ পেল। শিক্ষা আর শুধু বড়লোকদের থাকল না।
- পাঠ্যপুস্তকের বিপ্লব: স্কুল-কলেজের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে প্রচুর পাঠ্যবইয়ের দরকার হল। ছাপাখানা সেই চাহিদা মেটাল।
- অবশ্যই মনে রেখো: মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ‘শিশুশিক্ষা’ এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ (১৮৫৫ খ্রি.) শিশুশিক্ষায় বিপ্লব এনেছিল। ‘বর্ণপরিচয়’-এর লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছিল!
- মাতৃভাষায় শিক্ষা: বাংলা ভাষায় প্রচুর বই ছাপা হওয়ায় মাতৃভাষায় পড়াশোনা করা সহজ হল।
- জ্ঞানচর্চার প্রসার: শুধু পাঠ্যবই নয়, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম, সংবাদপত্র ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে বই ও পত্রিকা ছাপা হওয়ায় মানুষের জানার পরিধি বাড়ল, যুক্তিবাদ ও আধুনিক চিন্তার প্রসার ঘটল।
১.৩ ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ:
- ব্যবসা হিসাবে মুদ্রণ: বই ও পত্রপত্রিকার চাহিদা বাড়ায় ছাপাখানা একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হল।
- বাঙালি উদ্যোক্তাদের উত্থান:
- গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য: প্রথম বাঙালি মুদ্রণ ব্যবসায়ী। ‘বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস’ স্থাপন করেন ও প্রথম সচিত্র বাংলা বই ‘অন্নদামঙ্গল’ (১৮১৬ খ্রি.) প্রকাশ করেন।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: ‘সংস্কৃত যন্ত্র’ নামে প্রেস খোলেন (১৮৪৭ খ্রি.) এবং ‘সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি’ নামে বইয়ের দোকান খোলেন। তিনি শুধুমাত্র ভালো বই ছাপাতেন না, বই বিক্রিও করতেন! তিনি বাংলা হরফের সংস্কারও করেন (‘বিদ্যাসাগর সাট’)।
- বটতলা প্রকাশনা: কলকাতার এই অঞ্চলের প্রেসগুলি খুব কম দামে নানা রকম জনপ্রিয় বই (পাঁচালি, কেচ্ছা, ধর্মীয় বই, রহস্য উপন্যাস ইত্যাদি) ছাপত। সাধারণ পাঠকের কাছে বই পৌঁছে দিতে এদের ভূমিকা ছিল বিরাট।
- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী: ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ (১৮৯৫ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন। ছবি ছাপার প্রযুক্তিতে বিপ্লব আনেন (হাফটোন ব্লক, রঙিন মুদ্রণ)। তাঁর প্রেস থেকে ছাপা বই ও ‘সন্দেশ’ পত্রিকা (১৯১৩ খ্রি.) ছিল খুবই উন্নত মানের।
- অন্যান্য: দুর্গাচরণ গুপ্ত (গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা), বরদাপ্রসাদ মজুমদার (দেব সাহিত্য কুটির), পি. এম. বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি (পঞ্জিকা, ডাইরেক্টরি) প্রমুখের উদ্যোগও উল্লেখযোগ্য।
- লাইনোটাইপ: সুরেশচন্দ্র মজুমদার প্রবর্তিত এই মেশিনে হরফ সাজানোর পদ্ধতি (১৯৩৫) মুদ্রণে আরও গতি আনে।


বিষয় ২: 🔬 বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশ 🔬📖Class 10 History Chapter 5 Notes
শুধুমাত্র সাহিত্য বা সমাজ সংস্কার নয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বাঙালি তথা ভারতীয়রা এই সময় নিজেদের উদ্যোগ প্রমাণ করতে শুরু করে।
২.১ বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার:
- প্রাথমিক ধাপ: এশিয়াটিক সোসাইটি, শ্রীরামপুর কলেজ, ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানচর্চা শুরু হয়। কয়েকজন বিদেশি বাংলায় বিজ্ঞান গ্রন্থ লেখেন বা অনুবাদ করেন।
- গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান:
- ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স (IACS) (১৮৭৬):
- প্রতিষ্ঠাতা: ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার (ভারতীয় উদ্যোগে বিজ্ঞান গবেষণার পথিকৃৎ)।
- গুরুত্ব: ভারতের প্রথম বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র। এখানেই সি ভি রমন ‘রমন এফেক্ট’ আবিষ্কার করে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার (১৯৩০) পান।
- কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ (১৯১৪):
- প্রতিষ্ঠাতা: স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, স্যার তারকনাথ পালিত, স্যার রাসবিহারী ঘোষ।
- গুরুত্ব: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে উচ্চতর বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার প্রধান কেন্দ্র।
- কৃতি শিক্ষক ও ছাত্র: আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় (শিক্ষক, বেঙ্গল কেমিক্যালসের প্রতিষ্ঠাতা), সি ভি রমন (শিক্ষক), সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা (কৃতি ছাত্র ও পরে বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী)।
- বসু বিজ্ঞান মন্দির (বোস ইন্সটিটিউট) (১৯১৭):
- প্রতিষ্ঠাতা: আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু।
- গুরুত্ব: পদার্থবিদ্যা ও উদ্ভিদবিদ্যায় বিশ্বমানের মৌলিক গবেষণা।
- আবিষ্কার: ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র (উদ্ভিদের প্রাণ ও অনুভূতি প্রমাণ), বেতার তরঙ্গ গবেষণা। পরবর্তীকালে এখানেই শম্ভুনাথ দে কলেরার টক্সিন আবিষ্কার করেন।
- ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স (IACS) (১৮৭৬):
২.২ কারিগরি শিক্ষার বিকাশ:
- সরকারি উদ্যোগ: ব্রিটিশ সরকার মূলত নিজেদের প্রশাসনিক কাজের জন্য ইঞ্জিনিয়ার তৈরির লক্ষ্যে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শিবপুর (প্রতিষ্ঠা ১৮৫৬, পূর্বে ক্যালকাটা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ) স্থাপন করে।
- জাতীয় উদ্যোগ (স্বদেশি যুগ):
- জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (১৯০৬): বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় গঠিত এই পরিষদ সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকেও গুরুত্ব দেয়।
- বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট (BTI) (১৯০৬): তারকনাথ পালিত প্রমুখের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এটি ছিল কারিগরি শিক্ষার প্রধান স্বদেশি প্রতিষ্ঠান। এর প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন প্রমথনাথ বসু। এটিই পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৫৫) রূপান্তরিত হয়।
🧠 মনে রাখো:
- বেঙ্গল কেমিক্যালস: প্রতিষ্ঠাতা – প্রফুল্লচন্দ্র রায় (স্বনির্ভরতার প্রতীক)।
- জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (১৯০৬): স্বদেশি যুগের বিকল্প শিক্ষা উদ্যোগ।
- BTI (১৯০৬): জাতীয় কারিগরি শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র, যা পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

বিষয় ৩: 📚 বিকল্প শিক্ষা ভাবনা: শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী 📚📖Class 10 History Chapter 5 Notes
ঔপনিবেশিক শিক্ষার সীমাবদ্ধতা দেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক নতুন ধরনের শিক্ষার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যা প্রকৃতির কাছাকাছি, আনন্দের মধ্যে এবং জীবনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
৩.১ ঔপনিবেশিক শিক্ষা: সমালোচনা:
- কেন সমালোচনা?: রবীন্দ্রনাথ প্রচলিত ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থাকে ‘কলের পুতুল’ বা ‘কেরানি তৈরির কারখানা’ মনে করতেন। তাঁর মতে, এই শিক্ষা ছিল:
- যন্ত্রসর্বস্ব ও আনন্দহীন: মুখস্থনির্ভর, পরীক্ষাকেন্দ্রিক।
- প্রকৃতি ও জীবনবিচ্ছিন্ন: চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ।
- মাতৃভাষা অবহেলিত: ইংরেজি মাধ্যম হওয়ায় ভাবনার স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত।
- সংকীর্ণ: শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ বিকাশের পরিবর্তে ঔপনিবেশিক শাসনের সহায়ক কর্মী তৈরি করাই লক্ষ্য।
৩.২ রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা ও শান্তিনিকেতন:
- মূল ভাবনা: শিক্ষা হবে প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে, আনন্দের মাধ্যমে, স্বাধীন চিন্তার বিকাশে সহায়ক এবং শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ (শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, আধ্যাত্মিক) বিকাশের উপায়।
- শান্তিনিকেতন (ব্রহ্মচর্যাশ্রম, ১৯০১): রবীন্দ্রনাথ পিতা দেবেন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন আশ্রমে এই বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
- বৈশিষ্ট্য: খোলা আকাশের নিচে ক্লাস, প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য, ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে সহজ সম্পর্ক, গান-নাচ-অভিনয়-ছবি আঁকা শিক্ষার অঙ্গ, ঋতু উৎসব পালন।
৩.৩ বিশ্বভারতী (১৯২১) ও শ্রীনিকেতন (১৯২২):
- বিশ্বভারতী: শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়টিকেই তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করেন।
- লক্ষ্য: প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিলন ঘটানো, বিশ্বজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র তৈরি করা (“যত্র বিশ্বম্ ভবত্যেকনীড়ম্”)।
- ব্যবস্থা: দেশ-বিদেশের পণ্ডিতদের আগমন, বিভিন্ন বিষয়ে (কলা, বিজ্ঞান, দর্শন, সঙ্গীত, শিল্পকলা, পল্লি উন্নয়ন ইত্যাদি) পঠনপাঠন ও গবেষণা। এটি ১৯৫১ সালে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পায়।
- শ্রীনিকেতন: শান্তিনিকেতনের কাছেই এটি স্থাপিত হয়।
- লক্ষ্য: গ্রামের মানুষের সার্বিক উন্নয়ন, তাদের স্বনির্ভর করে তোলা।
- ব্যবস্থা: কৃষি, গোপালন, সমবায়, স্বাস্থ্য, কুটিরশিল্প ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাবহারিক শিক্ষা ও গবেষণা। লেনার্ড এলমহার্স্ট এর কাজে রবীন্দ্রনাথকে বিশেষভাবে সাহায্য করেন।

৩.৪ মানুষ, প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয়:
- রবীন্দ্রনাথের কাছে শিক্ষা কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। তাঁর শিক্ষাচিন্তায় প্রকৃতি, মানুষ ও জ্ঞানার্জন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
- প্রকৃতি থেকে শিক্ষা, মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে শিক্ষা, এবং পুস্তকের জ্ঞান – এই তিনের সমন্বয়েই মানুষ পূর্ণাঙ্গ হয়ে ওঠে।
- শিক্ষা মানুষকে সংকীর্ণতা মুক্ত করে বিশ্বপ্রকৃতি ও বিশ্বমানবতার সঙ্গে যুক্ত করবে।
উপসংহার: এই অধ্যায়ে আমরা দেখলাম কীভাবে উনিশ ও বিশ শতকের বাঙালি তথা ভারতীয়রা মুদ্রণ, বিজ্ঞান, কারিগরি এবং শিক্ষা – এই ক্ষেত্রগুলিতে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার পাশাপাশি বা তার বাইরে বেরিয়ে এসে নিজস্ব চিন্তা ও উদ্যোগের স্বাক্ষর রেখেছিল। এই ‘বিকল্প’ পথগুলিই ভারতের ভবিষ্যৎ নির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই উদ্যোগগুলির বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা আমাদের দেশের আধুনিক হয়ে ওঠার যাত্রাপথকে বুঝতে সাহায্য করে।
✨ পাঁচ ফোড়ন (অধ্যায়ের সেরা ৫ তথ্য) ✨
এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে পাঁচটি বিষয় তোমাকে মনে রাখতেই হবে:
- 🖨️ ছাপাখানার বিপ্লব: বাংলায় শ্রীরামপুর মিশন প্রেস (১৮০০) এবং পরে বিদ্যাসাগর, উপেন্দ্রকিশোর প্রমুখের হাত ধরে ছাপাখানার ব্যাপক প্রসার ঘটে, যা সুলভে ‘বর্ণপরিচয়’ (১৮৫৫)-এর মতো বই মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে গণশিক্ষার পথ খুলে দেয়।
- 🔬 বিজ্ঞান চর্চার জাতীয় উদ্যোগ: ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার প্রতিষ্ঠিত IACS (১৮৭৬), আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর বসু বিজ্ঞান মন্দির (১৯১৭) ও কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ (১৯১৪) ভারতে আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার ভিত্তি স্থাপন করে।
- 💡 বিকল্প শিক্ষা ভাবনা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঔপনিবেশিক শিক্ষার বাইরে বেরিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে, আনন্দের মাধ্যমে, সৃজনশীলতার বিকাশে জোর দিয়ে শান্তিনিকেতন (১৯০১) ও বিশ্বভারতী (১৯২১) প্রতিষ্ঠা করেন, যা এক নতুন শিক্ষাদর্শের জন্ম দেয়।
- 🛠️ কারিগরি শিক্ষার স্বদেশি প্রয়াস: দেশের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে স্বদেশি যুগে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (১৯০৬) এবং বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট (BTI) (১৯০৬) প্রতিষ্ঠিত হয়, যা কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয় (BTI থেকেই পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)।
- 🌟 পথিকৃতদের অবদান: বিদ্যাসাগর (ছাপাখানা, হরফ), উপেন্দ্রকিশোর (মুদ্রণ প্রযুক্তি), মহেন্দ্রলাল সরকার (বিজ্ঞান গবেষণা), জে.সি. বোস (উদ্ভিদের প্রাণ), পি.সি. রায় (বেঙ্গল কেমিক্যাল) এবং রবীন্দ্রনাথ (শিক্ষা দর্শন) – এই অধ্যায়ে তাঁদের অবদান অপরিহার্য।
💫 একনজরে একাদশ (অধ্যায়ের ১১টি বিস্তারিত ঝলক) 💫
একটু বিস্তারিতভাবে মনে রাখার জন্য এই ১১টি পয়েন্ট দেখে নাও:
- 📖 প্রথম বাংলা হরফ ও বই: চার্লস উইলকিনস ও পঞ্চানন কর্মকারের প্রচেষ্টায় বাংলা হরফ তৈরি হয় এবং হ্যালহেডের ‘A Grammar of the Bengal Language’ (১৭৭৮) ছিল প্রথম মুদ্রিত বাংলা বই।
- ⛪ শ্রীরামপুর ত্রয়ী ও প্রেস: কেরি, মার্শম্যান ও ওয়ার্ডের শ্রীরামপুর প্রেস (১৮০০) থেকে প্রথম বাংলা সংবাদপত্র (‘সমাচার দর্পণ’) ও সাময়িকপত্র (‘দিগদর্শন’) প্রকাশিত হয় (১৮১৮)।
- 📚 বিদ্যাসাগরের অবদান: ‘সংস্কৃত যন্ত্র’ প্রেস প্রতিষ্ঠা, যুগান্তকারী ‘বর্ণপরিচয়’ (১৮৫৫) রচনা এবং বাংলা হরফের সংস্কার (‘বিদ্যাসাগর সাট’)।
- 🎨 উপেন্দ্রকিশোর ও মুদ্রণ প্রযুক্তি: ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ (১৮৯৫) প্রতিষ্ঠা, হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং, রঙিন ছবি ছাপার কৌশল উদ্ভাবন এবং বিখ্যাত ‘সন্দেশ’ পত্রিকা (১৯১৩) প্রকাশ।
- 🔬 IACS ও মহেন্দ্রলাল সরকার: ভারতে বিজ্ঞানচর্চার প্রসারে ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার ১৮৭৬ সালে IACS প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে সি.ভি. রমন নোবেলজয়ী গবেষণা করেন।
- 🎓 কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ: স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, পালিত ও ঘোষের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত (১৯১৪) এই কলেজ সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা-র মতো বিজ্ঞানী তৈরি করে।
- 🌱 বসু বিজ্ঞান মন্দির: আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বসু বিজ্ঞান মন্দির (১৯১৭) প্রতিষ্ঠা করেন এবং ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে উদ্ভিদের প্রাণ প্রমাণ করেন।
- 🧪 বেঙ্গল কেমিক্যালস: আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যালস’ (১৮৯২) প্রতিষ্ঠা করে বিজ্ঞান ও স্বদেশি উদ্যোগের মেলবন্ধন ঘটান।
- 🏫 জাতীয় শিক্ষা পরিষদ: স্বদেশী আন্দোলনের সময় জাতীয় আদর্শে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাদানের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (১৯০৬) গঠিত হয়।
- 🏭 BTI ও কারিগরি শিক্ষা: তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট (১৯০৬) স্থাপিত হয়, যা কারিগরি শিক্ষায় পথিকৃৎ এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বসূরি।
- 🕊️ শান্তিনিকেতন-বিশ্বভারতী-শ্রীনিকেতন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রকৃতি, কলা, মানবতা ও বিশ্বভাবনার সমন্বয়ে শান্তিনিকেতন (১৯০১), বিশ্বভারতী (১৯২১) এবং গ্রামোন্নয়নের লক্ষ্যে শ্রীনিকেতন (১৯২২) প্রতিষ্ঠা করেন।