🌟 Master Madhyamik History Chapter 4: সঙ্ঘবদ্ধতার গোড়ার কথা: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ 📘

Madhyamik History Chapter 4 Notes in Bengali

Madhyamik History Chapter 4 Notes in Bengali: উনিশ শতকের ভারত ছিল এক পরিবর্তনের সাক্ষী। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ছোটবড় নানা প্রতিবাদ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর ভারতীয় জনগণ ধীরে ধীরে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে শুরু করে। প্রাথমিকভাবে অশিক্ষিত দরিদ্র শ্রেণি এই ঐক্যের পথে পা বাড়ালেও, পরবর্তীকালে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণি বিভিন্ন সভা-সমিতি গঠন এবং লেখনীর মাধ্যমে ভারতীয়দের সংঘবদ্ধ করার কাজে অগ্রণী ভূমিকা নেয়। এই অধ্যায়ে আমরা জানব সেই সংঘবদ্ধতার প্রথম প্রয়াসগুলি, ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য, বিভিন্ন সভা-সমিতির উত্থান এবং কীভাবে লেখা ও রেখার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছিল।


⚔️ Madhyamik History Chapter 4:প্রথম ভাগ: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ: প্রকৃতি, চরিত্র ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন ⚔️

🔥 বিদ্রোহের অগ্নিশিখা: ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহ ও তার সুদূরপ্রসারী অভিঘাত 🔥

Madhyamik History Chapter 4 Notes in Bengali: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রধান কেন্দ্রসমূহ

পলাশির যুদ্ধের পরবর্তী একশো বছরের মধ্যে ভারতে ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে জনগণের পুঞ্জীভূত অসন্তোষের চূড়ান্ত অভিব্যক্তি ছিল ১৮৫৭-র বিদ্রোহ। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভ ও অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে ভারতীয় জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল সিপাহিদের দ্বারা। কিন্তু ক্রমে এই বিদ্রোহ জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে মহাবিদ্রোহের রূপ গ্রহণ করেছিল।

💥 বিদ্রোহের সূচনা ও বিস্তার:

  • প্রথম স্ফুলিঙ্গ ✨: ১৮৫৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলার মুর্শিদাবাদের বহরমপুর সেনাছাউনিতে এই বিদ্রোহের প্রথম আভাস পাওয়া যায়।
  • ব্যারাকপুরের ঘটনা 🌪️: ২৯ মার্চ ব্যারাকপুরের বেঙ্গল আর্মি-এর মঙ্গল পান্ডে নামে একজন সিপাহি প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করে এক ব্রিটিশ সামরিক কর্মচারীকে গুলি করেন। মঙ্গল পান্ডে ও তাঁর সহকর্মী ঈশ্বরী পান্ডেকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মঙ্গল পান্ডে ছিলেন মহাবিদ্রোহের প্রথম শহিদ
  • মিরাটে প্রকাশ্য বিদ্রোহ 💣: এই ঘটনার প্রায় দেড়মাস পর ১০ মে মিরাটে বিদ্রোহ প্রকাশ্য রূপ গ্রহণ করে। বিদ্রোহী সিপাহিরা এক ব্রিটিশ সেনাধ্যক্ষকে হত্যা করে। এরপর তারা জেলখানা ভেঙে তাদের সহকর্মীদের মুক্ত করে। পরের দিন ১১ মে তারা বীরবিক্রমে দিল্লিতে প্রবেশ করে। সিপাহিরা মোগল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ‘হিন্দুস্থানের সম্রাট’ বলে ঘোষণা করে।
  • প্রধান কেন্দ্রসমূহ 🗺️: ১৮৫৭-র বিদ্রোহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক প্রসার লাভ করে। এই বিদ্রোহ সর্বাধিক প্রসার লাভ করে অযোধ্যা, কানপুর, ঝাঁসি ও বিহারে। ক্ষমতাচ্যুত সামন্তশ্রেণি, কারিগর শ্রেণি, কৃষক ও অন্যান্য শ্রেণির জনগণ এই বিদ্রোহে যোগ দিয়ে এটিকে গণ অভ্যুত্থানে পরিণত করে। তবে এ কথাও ঠিক যে, জনগণের অংশগ্রহণ সর্বত্র সমানভাবে ঘটেনি। এমনও দেখা গেছে একই অঞ্চলের একাংশ এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিল আবার, অন্য অংশ ব্রিটিশদের সাহায্য করেছিল। সুতরাং এ কথা বলা যেতে পারে যে, ১৮৫৭-র বিদ্রোহে জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম দেখা যায়নি।
১৮৫৭: বিদ্রোহের দিনপঞ্জি: Madhyamik History Chapter 4 Notes

🤔 বিদ্রোহের প্রকৃতি ও চরিত্র নিয়ে বিতর্ক: ১৮৫৭-র বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন রকমের মতবাদ প্রচলিত আছে।

  • সিপাহি বিদ্রোহ 💂: ব্রিটিশ ঐতিহাসিকগণ যেমন চার্লস রেকস, জন কে, রবার্টস, জন লরেন্স, জন সিলি প্রমুখ ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে ‘Mutiny’ বা সিপাহি বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। সমকালীন ভারতীয় ব্যক্তিত্বদের মধ্যে স্যার সৈয়দ আহমদ, দাদাভাই নৌরজি, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজনারায়ণ বসু, কিশোরীচাঁদ মিত্র, অক্ষয়কুমার দত্ত প্রমুখও মনে করেন এই বিদ্রোহ ছিল সিপাহিদেরই বিদ্রোহ। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে সিপাহিদের বিদ্রোহ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এই বিদ্রোহ ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েনি। সকল শ্রেণির জনগণও এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেনি।
  • জাতীয় বিদ্রোহ/ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ 🇮🇳: আর একদল ব্রিটিশ ঐতিহাসিক যেমন-জে বি নর্টন, হোমস, আউট্রাম, ডাফ, ম্যালেসন, চার্লস বল প্রমুখ মনে করেন ১৮৫৭-র বিদ্রোহ সিপাহি বিদ্রোহ হিসেবে শুরু হলেও পরে তা জাতীয় আন্দোলনের রূপ গ্রহণ করে। প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী অশোক মেহতা, স্বনামধন্য বিপ্লবী বিনায়ক দামোদর সাভারকার প্রমুখ এই বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন। প্রখ্যাত চিন্তানায়ক ও মার্কসবাদের প্রবক্তা কার্ল মার্কসও ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। আবার রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, ১৮৫৭-র তথাকথিত প্রথম জাতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ, “না-ছিল প্রথম, না-ছিল জাতীয়, না-ছিল স্বাধীনতার যুদ্ধ”
  • সামন্তশ্রেণির প্রতিক্রিয়া 👑: বিখ্যাত কমিউনিস্ট চিন্তাবিদ রজনীপাম দত্ত এই বিদ্রোহকে পূর্বতন রক্ষণশীল ও সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলির অভ্যুত্থান বলে মনে করেন। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুও এই বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্রের কথা স্মরণ করে দিয়েছেন। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন যে, এই বিদ্রোহ ছিল ক্ষয়িষ্ণু অভিজাত শ্রেণি ও মৃতপ্রায় সামন্তশ্রেণির ‘মৃত্যুকালীন আর্তনাদ’।
  • গণ-অভ্যুত্থান ✊: আধুনিক সময়ের ঐতিহাসিকদের মধ্যে বেশিরভাগই এই বিদ্রোহে জনগণের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। অধ্যাপক সুশোভন সরকার, রণজিৎ গুহ, গৌতম ভদ্র প্রমুখের মতে এই বিদ্রোহে নিম্নবর্গের মানুষেরা যেমন কৃষক, মজুর, কারিগর প্রভৃতি কেবল যোগদানই করেনি তারা বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতেও চেষ্টা করেছিল। দিল্লি থেকে বিহার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে কিছুদিনের জন্য ব্রিটিশ শাসন লোপ পেয়েছিল।
Madhyamik History Chapter 4 Notes in Bengali: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের অবিস্মরণীয় সেনানায়কেরা
Madhyamik History Chapter 4 Notes in Bengali: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের অবিস্মরণীয় সেনানায়কেরা

🌐 বিদ্রোহে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ:

  • ১৮৫৭-র বিদ্রোহে জাতীয়তাবোধের উন্মেষের বিষয়েও ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ বর্তমান। রমেশচন্দ্র মজুমদার, সুরেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখের মতে, সেসময় ভারতবর্ষে জাতীয়তাবোধের জন্ম হয়নি।
  • অবশ্য সেসময় জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র প্রভৃতি আদর্শের সঠিক ধ্যানধারণা ভারতবাসীর মধ্যে গড়ে ওঠেনি, যদিও তারা ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পেতে চাইছিল। কারণ তারা মনে করত দেশটা তাদের, কোনো বিদেশি শাসকের নয়। এটিকে জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক নিদর্শন হিসেবে অবশ্যই গ্রহণ করা যায়। সুতরাং বলা যেতে পারে যে, ১৮৫৭-র বিদ্রোহে বিদ্রোহীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে না-হলেও কিছুটা পরিমাণে জাতীয়তাবোধের প্রকাশ ঘটেছিল।

👨‍🎓 শিক্ষিত বাঙালি সমাজের মনোভাব:

  • আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি ১৮৫৭-র বিদ্রোহের প্রতি নির্লিপ্ত মনোভাব গ্রহণ করেছিল। তারা মনে করত এই বিদ্রোহের নেতারা মধ্যযুগীয় সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট ছিল।
  • তারা মনে করত ব্রিটিশ শাসন একটি কুসংস্কারমুক্ত সমাজ তৈরি করে যেমন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তেমনি দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে। এই কারণে তারা এই বিদ্রোহ থেকে শুধুমাত্র সরেই থাকেনি, পরোক্ষভাবে বিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশদের সাহায্য ও সহযোগিতা করেছিল। প্রমোদ সেনগুপ্তের মতে, বাঙালি বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় নিজেদের ব্যক্তিগত তথা শ্রেণিস্বার্থে ব্রিটিশদেরকে সমর্থন করেছিল।
Madhyamik History Chapter 4 Notes: ঐতিহাসিক বিতর্কের তাৎপর্য

📜 মহারানির ঘোষণাপত্র (Queen’s Proclamation, ১৮৫৮):

  • মহাবিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও, এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ছিল। এর ফলে ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২ আগস্ট ‘ভারত শাসন আইন’ (An Act for the Better Government of India) পাস করে ভারতের শাসনভার সরাসরি ব্রিটেনের রানির হাতে তুলে দেয়।
  • তৎকালীন ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়া ১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর একটি ঘোষণা জারি করে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত শাসনের দায়িত্বভার নিজের হাতে তুলে নিলেন। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ও প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং এলাহাবাদে এই ঘোষণাপত্রটি পাঠ তথা প্রকাশ করেছিলেন। এই ঘোষণাপত্রটিই মหารানির ঘোষণাপত্র (Queen’s Proclamation) নামে পরিচিত।
  • প্রধান প্রতিশ্রুতিসমূহ:
    • 🤝 স্বত্ববিলোপ নীতি প্রত্যাহার করা হবে। নতুন করে আর কোনো দেশীয় রাজ্য অধিকার করা হবে না।
    • 👑 দেশীয় রাজাদের সঙ্গে কোম্পানির যেসকল চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে সেগুলি মেনে চলা হবে। দেশীয় রাজারা দত্তক গ্রহণ করতে পারবে।
    • 🕉️☪️✝️ ভারতীয়দের পুরাতন রীতিনীতি ও ঐতিহ্যকে রক্ষা করা হবে এবং সততা, ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় উদারতা প্রদর্শন করা হবে।
    • 📜 জাতি ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সকলকে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করা হবে।
    • 🕊️ বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ ব্যক্তিদের হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছাড়া আর সকলের প্রতি সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করা হবে।
    • 🌾 দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি শিল্পে উন্নতি ও জনগণের মঙ্গলসাধনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।
  • মূল্যায়ন: মহারানির ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ভারতীয়দের মধ্যে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল কয়েক বছরের মধ্যেই তা নিরাশায় পরিণত হয়। রমেশচন্দ্র মজুমদার এই ঘটনাকে ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অধ্যায়’ বলে বর্ণনা করেছেন। ঐতিহাসিক বিপানচন্দ্রও মহারানির ঘোষণাপত্রকে ‘রাজনৈতিক ধাপ্পা’ (Political Bluff) বলে অভিহিত করেছেন। তবে ব্রিটেনের পরিপ্রেক্ষিতে এটি ছিল একটি মহাসনদ (Magna Carta)। কারণ এরপর প্রায় ৬০ বছর এই ঘোষণাপত্রই ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি রচনা করেছিল।

🤝 Madhyamik History Chapter 4: দ্বিতীয় ভাগ: সভা সমিতির যুগ — ভারতীয় রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষকাল 🤝

💡 ঐক্যের প্রথম প্রয়াস: উনিশ শতকের সভা-সমিতি ও রাজনৈতিক জাগরণ 💡

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের শোষণ ও বৈষম্যমূলক নীতির প্রয়োগ যত বাড়তে থাকে ততই ভারতীয়দের মনে ক্ষোভ ও অসন্তোষের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক সভাসমিতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি এই কাজে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদের পরিবর্তে সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করলে তা আরও ফলপ্রসূ হবে এই ভাবনা থেকেই উনিশ শতকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সভাসমিতি গঠনের সূচনা হয়। এই কারণে ঐতিহাসিক অনিল শীল এই শতককে সভাসমিতির যুগ (Age of Association) বলে অভিহিত করেছেন। ভারতের এই রাজনৈতিক আন্দোলনের অর্থাৎ সংগঠিত নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথিকৃৎ তথা অগ্রদূত ছিলেন রাজা রামমোহন রায়।

প্রধান সভা-সমিতি:

  • বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা (১৮৩৬) 🗣️:
    • প্রখ্যাত গবেষক যোগেশচন্দ্র বাগল-এর মতে, বাংলার তথা ভারতের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হল ‘বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা’।
    • ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে টাকির জমিদার কালীনাথ রায়চৌধুরী, দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, রামলোচন ঘোষ, গৌরীশঙ্কর তর্কবাগীশ প্রমুখের উদ্যোগে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা প্রতিষ্ঠিত হয়।
    • ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর গৌরীশঙ্কর তর্কবাগীশের সভাপতিত্বে এই সমিতির প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সমিতির সম্পাদক ছিলেন দুর্গাপ্রসাদ তর্কপঞ্চানন।
    • এই সমিতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন বিষয় বিশেষত যেগুলি ভারতীয়দের ভালো-মন্দের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত সেগুলির ওপর আলাপ-আলোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এই সমিতিতে ধর্মীয় কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা একেবারে নিষিদ্ধ ছিল।
    • ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের আইন অনুযায়ী সরকার নিষ্কর জমির ওপর কর ধার্য করা শুরু করলে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা তীব্র প্রতিবাদ করে এবং একটি জনসভা আয়োজনের চেষ্টা করে। তবে এই সমিতি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
  • জমিদার সভা (ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটি) (১৮৩৮) 🏛️:
    • বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার অবলুপ্তির কিছুদিনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয় জমিদার সভা। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ নভেম্বর হিন্দু কলেজে রাধাকান্ত দেবের সভাপতিত্বে কলকাতার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে জমিদার সভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সমিতির প্রথম সম্পাদক ছিলেন প্রসন্নকুমার ঠাকুর। ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে এই সমিতির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় Landholder’s Society বা ভূম্যধিকারী সমিতি। এই সমিতির প্রাণপুরুষ ছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর
    • এই সমিতির কাজকর্ম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হত। এই সমিতি সকল ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে এর সদস্যপদ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিল।
    • ভূম্যধিকারী সমিতি প্রধানত জমিদারদের স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যেই গঠিত হয়েছিল। তবে এই সমিতি প্রজাদের অধিকার আদায়ে সামান্য হলেও সচেষ্ট ছিল।
    • ভারতের জাতীয় আন্দোলনের অগ্রদূত ছিল এই সমিতি। এই সমিতিই সর্বপ্রথম নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে দাবি আদায়ের পথ দেখিয়েছিল।
  • ভারত সভা (ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন) (১৮৭৬) 🇮🇳:
    • একটি সুসংগঠিত ও সর্বভারতীয় সমিতি গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এবং আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের সহযোগিতায় কলকাতার অ্যালবার্ট হলে এক সভায় ‘ভারত সভা’ (Indian Association) প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাজের প্রত্যেক শ্রেণির মানুষই এই সভার সদস্য হতে পারত।
    • উদ্দেশ্য ছিল: (১) দেশে এক শক্তিশালী জনমত গড়ে তোলা; (২) হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলা; (৩) ভারতের বিভিন্ন ভাষাভাষী, জাতি ও ধর্মের মানুষকে রাজনৈতিক স্বার্থে সংঘবদ্ধ করা; (৪) রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে বৃহত্তর সংখ্যক জনগণের সংযোগস্থাপন করা।
    • প্রধান আন্দোলনসমূহ:
      • সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বয়স হ্রাস: সরকার ভারতীয়দের এই চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ বন্ধ করে দিতে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে এই পরীক্ষায় বসার সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৯ বছর করে দেয়। এর বিরুদ্ধে ভারত সভা সারা ভারতজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করে।
      • অস্ত্র আইন (১৮৭৮) ও দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন (১৮৭৮) বিরোধিতা: লর্ড লিটন প্রবর্তিত এই দমনমূলক আইনগুলির বিরুদ্ধে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারত সভা তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন সংঘটিত করে।
      • ইলবার্ট বিল (১৮৮৩) সমর্থন: ভারতীয় বিচারকদের ইউরোপীয়দের বিচার করার অধিকার দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই বিল আনা হলে, ভারতসভা এর সমর্থনে আন্দোলন করে।
    • সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রচিত ‘A Nation in Making’ গ্রন্থে ভারত সভাকে এক সর্বভারতীয় আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন।
  • হিন্দুমেলা (১৮৬৭) 🕉️:
    • ব্রিটিশদের ঔদ্ধত্য ও শোষণ শিক্ষিত ভারতীয়দের মোহভঙ্গ ঘটায়, ফলে তাঁরা জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। এই লক্ষ্যে ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল (চৈত্র সংক্রান্তি) হিন্দুমেলার প্রতিষ্ঠা হয়। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন রাজনারায়ণ বসু, নবগোপাল মিত্র, গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ। এটি ‘চৈত্রমেলা’ নামেও পরিচিত ছিল। হিন্দুমেলার প্রথম সম্পাদক ছিলেন গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ‘ন্যাশনাল’ নবগোপাল মিত্র ছিলেন সহকারী সম্পাদক।
    • উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় ভাবের প্রসার ঘটানো, জাতীয় সংস্কৃতি ও শিল্পের গৌরব বৃদ্ধি করা, দেশাত্মবোধ সৃষ্টি করা, বাঙালির মধ্যে আত্মনির্ভরতার মনোভাব গড়ে তোলা প্রভৃতি।
    • তবে এই জাতীয়তাবাদ ছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদ। হিন্দুমেলার প্রভাব শুধুমাত্র কলকাতাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বাংলার বিভিন্ন স্থানে এই মেলার অনুকরণে মেলা বসেছিল।
Madhyamik History Chapter 4 Notes in Bengali: জাগরণের পথে বাংলা

⚖️ জমিদার সভা বনাম ভারত সভা: উনিশ শতকের দুই রাজনৈতিক ধারা ⚖️

তুলনার বিষয় (Comparison Points)🏛️ জমিদার সভা (ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটি)🇮🇳 ভারত সভা (ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন)
১. প্রতিষ্ঠা ও প্রেক্ষাপট 📅প্রতিষ্ঠাকাল: ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দ (প্রাথমিকভাবে ১৮৩৭)।
প্রতিষ্ঠাতা: দ্বারকানাথ ঠাকুর (প্রাণপুরুষ), রাধাকান্ত দেব (সভাপতি), প্রসন্নকুমার ঠাকুর (সম্পাদক) প্রমুখ।
প্রেক্ষাপট: ঔপনিবেশিক ভারতে জমিদার শ্রেণির স্বার্থরক্ষা এবং ব্রিটিশ সরকারের কাছে তাদের দাবিদাওয়া পেশ করার উদ্দেশ্যে গঠিত। বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার অবলুপ্তির পর এর প্রতিষ্ঠা।
প্রতিষ্ঠাকাল: ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই।
প্রতিষ্ঠাতা: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (প্রধান উদ্যোক্তা), আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখ।
প্রেক্ষাপট: একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে সমন্বিত করার উদ্দেশ্যে গঠিত।
২. প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য 🎯– প্রধানত বাংলা, বিহার ও ওড়িশার জমিদারদের স্বার্থরক্ষা করা।
– চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রসার এবং নিষ্কর জমির অধিকার বজায় রাখার চেষ্টা।
– নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সরকারের কাছে জমিদারদের অভাব-অভিযোগ পেশ করা।
– ভারতে শক্তিশালী জনমত গঠন করা।
– ভারতের বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও ভাষাভাষী মানুষকে রাজনৈতিক স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ করা।
– হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি স্থাপন।
– সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বয়স বৃদ্ধি, অস্ত্র আইন ও দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইনের মতো দমনমূলক আইনের বিরোধিতা করা।
– বৃহত্তর জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক আন্দোলনের সংযোগ স্থাপন।
৩. সদস্যপদের ধরণ/চরিত্র 👥– সদস্যপদ মূলত জমিদার, ভূস্বামী এবং ধনী ব্যবসায়ীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
– বেসরকারি ব্রিটিশরাও সদস্য হতে পারত।
– সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল অত্যন্ত সীমিত। এটি ছিল একটি অভিজাতদের সংগঠন
– সদস্যপদ সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল, বিশেষত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি এর প্রধান চালিকাশক্তি ছিল।
– এটি ছিল একটি অপেক্ষাকৃত গণতান্ত্রিক ও প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন।
– এর লক্ষ্য ছিল একটি সর্বভারতীয় চরিত্র লাভ করা।
৪. কার্যকলাপের পরিধি 🌍– কার্যকলাপ প্রধানত কলকাতা এবং বাংলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, যদিও দেশের অন্যান্য স্থানে শাখা স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছিল।
– লন্ডনে ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি’-র সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে।
– সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সারা ভারতজুড়ে (যেমন: লখনউ, মিরাট, লাহোর, সিন্ধু) এর শাখা স্থাপিত হয় এবং আন্দোলন পরিচালিত হয়।
– ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও আবেদন জানানো হয়। এটি ছিল প্রকৃত অর্থেই একটি সর্বভারতীয় উদ্যোগ
৫. ঐতিহাসিক তাৎপর্য/গুরুত্ব– ভারতের প্রথম উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত।
– নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনের পথপ্রদর্শক।
– জমিদারদের স্বার্থরক্ষায় সীমিত সাফল্য লাভ করে।
– জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছিল।
– ভারতীয়দের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা ও জাতীয়তাবাদের ব্যাপক প্রসার ঘটায়।
– একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সফল আন্দোলন পরিচালনা করে সরকারকে নীতি পরিবর্তনে বাধ্য করে। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এটিকে ‘সর্বভারতীয় আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।

🎨 Madhyamik History Chapter 4:তৃতীয় ভাগ: লেখায় ও রেখায় জাতীয়তাবোধের বিকাশ: বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ 🎨

🖋️🖼️ কলম ও তুলিতে দেশপ্রেম: সাহিত্য-শিল্পে জাতীয় জাগরণ 🖋️🖼️

ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির অসন্তোষের ফলশ্রুতিতে ভারতে জাতীয়তাবোধ তথা জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটতে থাকে। আর এই জাতীয়তাবোধের বিকাশে সাহিত্য-সংস্কৃতি এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। বিভিন্ন সাহিত্যিক ও শিল্পী তাঁদের লেখনী ও চিত্রকলার মাধ্যমে ভারতবাসীকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

প্রধান সাহিত্য ও শিল্পকর্ম:

  • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও ‘আনন্দমঠ’ (১৮৮২) 📖:
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভারতের জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রধান পুরোহিত ছিলেন। তাঁর কথায় সকল ধর্মের ওপর হল স্বদেশপ্রীতি।
    • তাঁর রচিত ‘আনন্দমঠ’ (১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত) বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে ছিল গীতাস্বরূপ। এটি ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এবং সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের পটভূমিকায় রচিত হয়েছিল।
    • এই গ্রন্থে তিনি একদল দেশপ্রেমিকের আত্মোৎসর্গের কথা তুলে ধরে সে যুগের যুবসম্প্রদায়কে দেশপ্রেম ও সংগ্রামী জাতীয়তাবাদের আদর্শে উদ্‌বুদ্ধ করেছিলেন। দেশকে মা রূপে কল্পনা করে বঙ্কিমচন্দ্র যুবসমাজকে স্বদেশপ্রেমের মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন।
    • এই উপন্যাসের অন্তর্গত তাঁর বিখ্যাত ‘বন্দে মাতরম্’ সংগীত (১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে রচিত) পরিণত হয়েছিল ভারতীয় মুক্তিসংগ্রামের মূল মন্ত্রে।
  • স্বামী বিবেকানন্দ ও ‘বর্তমান ভারত’ (১৯০৫) 🧘:
    • শ্রীরামকৃষ্ণের প্রধান শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ আধুনিক ভারতের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় যুগপুরুষ। তিনি তাঁর কর্ম ও লেখনীর মাধ্যমে ভারতবাসীর মনে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন।
    • স্বামী বিবেকানন্দ রচিত ‘বর্তমান ভারত’ (১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত) গ্রন্থে তিনি প্রাচীন যুগের ভারতের ইতিহাস থেকে আধুনিক সময়ের ইতিহাস পর্যন্ত সমস্তটাই তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যক্ত ও বিশ্লেষণ করেছেন।
    • তিনি মতপ্রকাশ করেছেন যে, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চার বর্ণের মানুষেরা পর্যায়ক্রমে বিশ্বকে শাসন করবে। আগামী দিনে ভারতে শূদ্রের জাগরণ হবে
    • এই গ্রন্থের শেষ অধ্যায়ে (‘স্বদেশমন্ত্র’) তিনি ভারতবাসীকে উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানালেন-“হে ভারত, ভুলিও না….তুমি জন্ম হইতেই ‘মায়ের’ জন্য বলিপ্রদত্ত… ভারতবাসী আমার ভাই… ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ”
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ‘গোরা’ (১৯১০) 🕊️:
    • ভারতে জাতীয়তাবোধের বিকাশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখনীও এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। আর এক্ষেত্রে প্রথমেই নাম আসে ‘গোরা’ উপন্যাসের (১৯১০ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত)।
    • ‘গোরা’ উপন্যাসের নায়ক গৌরমোহন ওরফে গোরা জাতিতে ছিলেন আইরিশ, যদিও তিনি নিজেকে একজন নিষ্ঠাবান হিন্দু ও ভারতীয় বলে পরিচয় দিতেন।
    • যখন তাঁর জন্মবৃত্তান্ত প্রকাশ পেল তখন তাঁর মোহভঙ্গ হয়। সকল ধর্মীয় সংস্কারের বন্ধন থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি বলেন-“আমি আজ ভারতবর্ষীয়। আমার মধ্যে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান কোনো সমাজের কোনো বিরোধ নেই। আজ ভারতবর্ষের সকলের জাতই আমার জাত, সকলের অন্নই আমার অন্ন।”
  • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ‘ভারতমাতা’ চিত্র (১৯০৫) 🖼️:
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতির জনক এবং আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার পুরোধা ব্যক্তিত্ব।
    • ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনকালে তিনি হিন্দুদের ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর অনুকরণে ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি অঙ্কন করেছিলেন। প্রথমে এই চিত্রটির নাম ছিল ‘বঙ্গমাতা’, ভগিনী নিবেদিতা চিত্রটির নাম পরিবর্তন করে ‘ভারতমাতা’ রাখেন।
    • গেরুয়া বসন পরিহিতা, চতুর্ভুজা এই মাতৃমূর্তির চার হাতে রয়েছে বেদ (শিক্ষা), ধানের শিষ (অন্ন), জপমালা (দীক্ষা) ও শ্বেতবস্ত্র (বস্ত্র)
    • এই চিত্র স্বদেশি আন্দোলনের সময় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং জাতীয়তাবাদী চেতনায় প্রাণসঞ্চার করেছিল।
  • গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র 🎭:
    • গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলার ব্যঙ্গচিত্র শিল্পের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। তিনি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা ছিলেন।
    • তাঁর আঁকা ব্যঙ্গচিত্রগুলি প্রধানত ‘প্রবাসী’ ও ‘মর্ডান রিভিউ’ পত্রিকায় ছাপা হত। পরবর্তীতে এগুলি তাঁর ‘অদ্ভুতলোক’ (১৯১৫), ‘বিরূপ বজ্র’ (১৯১৭), ‘নবহুল্লোড়’ (১৯২১) প্রভৃতি গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
    • তিনি তাঁর ব্যঙ্গচিত্রগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, উচ্চবিত্ত শ্রেণির দ্বিচারিতা এবং তৎকালীন ঔপনিবেশিক সমাজের তীব্র সমালোচনাও করেছেন।
    • তাঁর অঙ্কিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ব্যঙ্গচিত্র হল ‘প্রচণ্ড মমতা’, ‘জাতাসুর’, ‘খল ব্রাহ্মণ’, ‘সংকর জাতের বাঙালি’, ‘বিদ্যার কারখানা’, ‘বাগ্যন্ত্র’ প্রভৃতি।
    • ‘বিদ্যার কারখানা’ চিত্রে তিনি ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থাকে একটি যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করে দেখিয়েছেন যেখানে বাঙালিরা নিষ্পেষিত হয়ে সাহেবের পোশাকে বেরিয়ে আসছে।
Madhyamik History Chapter 4 Notes in Bengali: কলমের শক্তিতে দেশপ্রেমের জাগরণ

📘 Topic A: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ

আপনি কি সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা অধ্যায়ের প্রথম অংশ, ‘১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ’ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলি পড়েছেন? পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ওই অংশটিও অত্যন্ত জরুরি👉

📘 Topic B: সভা সমিতির যুগ — ভারতীয় রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষকাল

ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতের রাজনীতিতে যে নবজাগরণ শুরু হয়েছিল, তারই প্রেক্ষাপটে সভা-সমিতির গঠন ও তাদের কার্যকলাপ নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নোত্তর এখানে তুলে ধরা হয়েছে👉

📘 Topic C: লেখায় ও রেখায় জাতীয়তাবোধের বিকাশ: বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ

সাহিত্য, শিল্প ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে কীভাবে জাতীয়তাবোধ ছড়িয়ে পড়েছিল, তা সহজ ভাষায় প্রশ্নোত্তর আকারে আলোচনা করা হয়েছে এই পাতায়👉

📝 মক টেস্ট: চতুর্থ অধ্যায় – সঙ্ঘবদ্ধতার গোড়ার কথা

এই অধ্যায়ের উপর ভিত্তি করে বহুবিকল্প প্রশ্ন, অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন সহ মক টেস্টের পূর্ণ সংগ্রহ। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অনন্য সহায়ক👉

error: Content is protected !!
Scroll to Top