
- সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা | Class 10 History Chapter 2 Notes
- ১. 📰 উনিশ শতকের বাংলা সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্যে সমাজের প্রতিফলন
- ২. 🎓 উনিশ শতকের বাংলা শিক্ষা সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা 📚
- ৩. 🤝 উনিশ শতকের বাংলা সমাজ সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা 🙏
- ৪. 🙏 উনিশ শতকের বাংলা ধর্মসংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ⛪
- ৫. 🌟 বাংলার নবজাগরণের চরিত্র ও পর্যালোচনা, উনিশ শতকের বাংলায় 'নবজাগরণ' ধারণার ব্যবহার বিষয়ক বিতর্ক 🧐
- সাহিত্য, সংবাদপত্র ও শিক্ষা সংস্কার: তৈরি তো পরীক্ষার জন্য?
- সমাজ ও ধর্ম সংস্কারের খুঁটিনাটি জানো? প্রশ্নোত্তর পর্ব
- Bengal Renaissance: বিতর্ক ও বিশ্লেষণ – সম্পূর্ণ প্রশ্নোত্তর!
- দ্বিতীয় অধ্যায়ের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি যাচাই! মক টেস্ট দাও এখনই!
সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা | Class 10 History Chapter 2 Notes
অধ্যায়ের মূলভাব: Class 10 History Chapter 2 Notes in Bengali: উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন ও তার প্রসারের ফলে শিক্ষা, সমাজ, ধর্ম ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে যায় । এর ফলস্বরূপ একদিকে যেমন বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় কুপ্রথার বিরুদ্ধে সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়, তেমনই অন্যদিকে পত্রপত্রিকা, সাহিত্য ও জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে, যা বাংলার ইতিহাসে এক নবজাগরণের সূচনা করে ।
১. 📰 উনিশ শতকের বাংলা সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্যে সমাজের প্রতিফলন

এই বিভাগে তুমি জানবে কীভাবে উনিশ শতকের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সাহিত্যকর্ম তৎকালীন বাংলার সামাজিক অবস্থার দর্পণ হয়ে উঠেছিল।
ভূমিকা: উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে এক নবজাগরণ ঘটেছিল । এই সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র এবং সাহিত্য একদিকে যেমন জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের আদর্শ প্রচার করতে থাকে, তেমনই এগুলি তৎকালীন বাংলার সমাজব্যবস্থার এক উজ্জ্বল চিত্র তুলে ধরে ।
ক) বামাবোধিনী পত্রিকা (১৮৬৩) 👩🎓(Class 10 History Chapter 2 Notes)
- পরিচয়: এটি ছিল মূলত নারী সমাজের জন্য প্রকাশিত একটি পত্রিকা। ব্রাহ্মসমাজের নেতা কেশবচন্দ্র সেনের অনুপ্রেরণায় গঠিত ‘বামাবোধিনী সভা’র (১৮৬৩) মুখপত্র হিসেবে এটি প্রকাশিত হয় । এর সম্পাদক ছিলেন উমেশচন্দ্র দত্ত ।
- সমাজের প্রতিফলন:
- নারীশিক্ষা: এই পত্রিকার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল নারীশিক্ষার প্রসার ও উন্নতি ঘটানো । এতে নারীদের কী কী বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া দরকার, তার তালিকাও প্রকাশ করা হয় ।
- সামাজিক সমস্যা: তৎকালীন সমাজে নারীদের দুরবস্থা, বাল্যবিবাহ, বিধবাদের অবস্থা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অসংখ্য লেখা এই পত্রিকায় প্রকাশিত হতো ।
- গুরুত্ব: এটি ছিল তৎকালীন বাংলার নারীসমাজের একটি আদর্শ ও কার্যকরী মুখপত্র ।
খ) হিন্দু প্যাট্রিয়ট (১৮৫৩) (Class 10 History Chapter 2 Notes)
- পরিচয়: এটি ছিল ইংরেজিতে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র । এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ । তবে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনার সময় (১৮৫৫ থেকে) এটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছায় ।
- সমাজের প্রতিফলন:
- কৃষক ও আদিবাসীদের সমর্থন: পত্রিকাটি সাঁওতাল বিদ্রোহে (১৮৫৫-৫৬) বিদ্রোহীদের পক্ষ নিয়েছিল এবং সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেছিল ।
- নীল বিদ্রোহের প্রতি সমর্থন: এর সবচেয়ে বড় অবদান ছিল নীল বিদ্রোহের (১৮৫৯-৬০) প্রতি সক্রিয় সমর্থন । হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় নীলকরদের অকথ্য অত্যাচারের কাহিনী নির্ভীকভাবে প্রকাশ করতেন এবং এর জন্য ‘নীল জেলা’ (Indigo District) নামে একটি নতুন বিভাগও চালু করেছিলেন ।
- সমাজ সংস্কার: পত্রিকাটি নারীশিক্ষা প্রসার ও বিধবাবিবাহ আন্দোলনের সমর্থনে অসংখ্য প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিল ।
গ) হুতোম প্যাঁচার নকশা (১৮৬২-৬৪) 🦉(Class 10 History Chapter 2 Notes)
- পরিচয়: এটি একটি ব্যঙ্গাত্মক সামাজিক নকশা, যার লেখক ছিলেন কালীপ্রসন্ন সিংহ (ছদ্মনাম: হুতোম প্যাঁচা) ।
- সমাজের প্রতিফলন:
- বাবু সংস্কৃতির সমালোচনা: এই গ্রন্থে তৎকালীন কলকাতার ধনী ও মধ্যবিত্ত ‘বাবু’ সমাজের উচ্ছৃঙ্খলতা, ভণ্ডামি, অন্ধ অনুকরণপ্রিয়তা এবং নৈতিক অবক্ষয়কে তীব্র ভাষায় ব্যঙ্গ করা হয়েছে ।
- সামাজিক অনুষ্ঠানের চিত্র: চড়ক, গাজন, রথযাত্রার মতো অনুষ্ঠানে যে সমস্ত অসংগতি ও বাড়াবাড়ি ছিল, সেগুলিকেও হাস্যরসের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ।
- গুরুত্ব: এটি তৎকালীন কলকাতার কথ্য ভাষায় রচিত এবং সমাজের এক নির্ভেজাল দলিল হিসেবে স্বীকৃত ।
ঘ) নীলদর্পণ নাটক (১৮৬০) 🎭(Class 10 History Chapter 2 Notes)
- পরিচয়: এটি বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম নাটক যা বাস্তব সামাজিক সমস্যাকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছিল । এর রচয়িতা ছিলেন দীনবন্ধু মিত্র ।
- সমাজের প্রতিফলন:
- নীল চাষিদের দুর্দশা: নাটকটি নীলকর সাহেবদের দ্বারা বাংলার নিরীহ নীল চাষিদের ওপর অমানবিক অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতনের এক জীবন্ত দলিল হয়ে উঠেছিল ।
- অত্যাচারের বাস্তব চিত্র: দাদন প্রথা, চাষিদের লোকসান, শারীরিক নির্যাতন এবং নারী নির্যাতনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা এই নাটকে পাওয়া যায় । গোলক বসু, তোরাপ, ক্ষেত্রমণি প্রমুখ চরিত্রের মাধ্যমে এই দুর্দশার চিত্র ফুটে ওঠে ।
- গুরুত্ব: এই নাটকটি নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত সমাজের সমর্থন ও সহানুভূতি আদায় করতে এবং ব্রিটিশ সরকারের টনক নড়াতে সাহায্য করেছিল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একে আমেরিকার ‘Uncle Tom’s Cabin’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন ।
ঙ) গ্রামবার্তা প্রকাশিকা (১৮৬৩) 🌾(Class 10 History Chapter 2 Notes)
- পরিচয়: এটি ছিল বাংলার প্রথম গ্রামীণ সংবাদপত্র। এর সম্পাদক ছিলেন হরিনাথ মজুমদার (যিনি ‘কাঙাল হরিনাথ’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন) ।
- সমাজের প্রতিফলন:
- গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি: এই পত্রিকায় গ্রামের সাধারণ মানুষ, কৃষক ও কারিগরদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরা হতো ।
- শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ: জমিদার, মহাজন, নীলকর এবং ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নির্ভীকভাবে সংবাদ প্রকাশ করা ছিল এই পত্রিকার প্রধান উদ্দেশ্য।
- গুরুত্ব: যে সময়ে অন্যান্য সংবাদপত্রগুলি মূলত শহরকেন্দ্রিক ছিল, সেই সময়ে ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ গ্রামীণ বাংলাকে তার কণ্ঠস্বর দিয়েছিল ।
তুলনামূলক সারণী: পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা (Class 10 History Chapter 2 Notes)
প্রকাশনা 📜 | ✍️ রচয়িতা/সম্পাদক | 🗓️ প্রকাশকাল | 🎯 মূল বিষয়বস্তু | 👥 সমাজের প্রতিফলন |
---|---|---|---|---|
👩🎓 বামাবোধিনী পত্রিকা | উমেশচন্দ্র দত্ত (ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্র সেনের অনুপ্রেরণায় ) | ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দ (আগস্ট মাস) | • নারী সমাজের সামগ্রিক উন্নতি, বিশেষত নারীশিক্ষার প্রসার । • নারীদের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা (যেমন – বাল্যবিবাহ, বিধবাদের দুরবস্থা) তুলে ধরা । • নারীদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা । | • তৎকালীন বাঙালি নারী সমাজ, বিশেষ করে অন্দরমহলে আবদ্ধ নারীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সমস্যা ও সার্বিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি । |
🇮🇳 হিন্দু প্যাট্রিয়ট | প্রথম সম্পাদক গিরিশচন্দ্র ঘোষ, তবে সর্বাধিক খ্যাতি অর্জন করেন হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় | ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ (৬ জানুয়ারি) | • নীল বিদ্রোহে কৃষকদের সমর্থন এবং নীলকরদের অত্যাচারের তীব্র সমালোচনা করা । • সাঁওতাল বিদ্রোহে বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ । • ব্রিটিশ সরকারের শোষণমূলক নীতির বিরোধিতা করা । • বিধবাবিবাহ ও নারীশিক্ষার মতো সমাজ সংস্কারকে সমর্থন । | • বাংলার শোষিত ও অত্যাচারিত কৃষক ও আদিবাসী শ্রেণি (যেমন নীল চাষি, সাঁওতাল) । • সংস্কারমনস্ক ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি । |
🦉 হুতোম প্যাঁচার নকশা | কালীপ্রসন্ন সিংহ (ছদ্মনাম: হুতোম প্যাঁচা) | প্রথম ভাগ: ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ একত্রে: ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দ ) | • উনিশ শতকের কলকাতার নব্য ধনী ‘বাবু’ সমাজের উচ্ছৃঙ্খলতা, ভণ্ডামি, নৈতিক অবক্ষয় ও অন্ধ পাশ্চাত্য অনুকরণের তীব্র ব্যঙ্গাত্মক সমালোচনা । • চড়ক, গাজন, রথযাত্রার মতো সামাজিক অনুষ্ঠানের বর্ণনা । | • কলকাতা-কেন্দ্রিক হঠাৎ ধনী হয়ে ওঠা ‘বাবু’ সম্প্রদায় এবং ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানসিকতা, আচার-আচরণ ও অবক্ষয়ের নিখুঁত প্রতিফলন । |
🎭 নীলদর্পণ নাটক | দীনবন্ধু মিত্র | ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ (ঢাকা থেকে প্রকাশিত) | • ব্রিটিশ নীলকর সাহেবদের দ্বারা বাংলার নিরীহ নীল চাষিদের ওপর অমানবিক অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতনের জীবন্ত ও মর্মস্পর্শী চিত্রায়ণ । • দাদন প্রথার কুফল ও তার ফলে চাষিদের সর্বস্বান্ত হওয়ার কাহিনি । | • বাংলার অত্যাচারিত, দুর্দশাগ্রস্ত গ্রামীণ কৃষক সমাজ (বিশেষত নীল চাষি) । • নিষ্ঠুর, শোষণকারী ও লোভী ইউরোপীয় নীলকর সাহেবদের চরিত্র । |
🌾 গ্রামবার্তা প্রকাশিকা | হরিনাথ মজুমদার (‘কাঙাল হরিনাথ’ নামে পরিচিত) | ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দ (এপ্রিল মাস) | • গ্রামীণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরা । • জমিদার, মহাজন, নীলকর ও ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নির্ভীক সংবাদ প্রকাশ। • সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান ও লালন ফকিরের গানও প্রকাশিত হতো । | • উনিশ শতকের বাংলার উপেক্ষিত গ্রামীণ কৃষক, প্রজা এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার বাস্তব প্রতিচ্ছবি । এটি ছিল মূলত গ্রামের কথা বলা প্রথম পত্রিকা । |
২. 🎓 উনিশ শতকের বাংলা শিক্ষা সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা 📚
Class 10 History Chapter 2 Notes in Bengali: এই বিভাগে তুমি জানবে উনিশ শতকে বাংলায় কীভাবে আধুনিক শিক্ষার বিস্তার ঘটেছিল, এই নিয়ে কী ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছিল এবং কারা এই শিক্ষা সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ক) প্রাচ্য-পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক বিতর্ক 🌏🆚🇪🇺 (Class 10 History Chapter 2 Notes)
- পটভূমি: ১৮১৩ সালের সনদ আইনে ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বার্ষিক এক লক্ষ টাকা ব্যয়ের নির্দেশ দেওয়া হয় । এই টাকা কোন শিক্ষায় ব্যয় করা হবে, তা নিয়ে ‘সাধারণ জনশিক্ষা কমিটি’র (১৮২৩) সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় ।
- প্রাচ্যবাদী: এইচ. টি. প্রিন্সেপ, কোলব্রুক, উইলসনের মতো প্রাচ্যবাদীরা সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি ভাষার মাধ্যমে ভারতীয় ঐতিহ্যপূর্ণ শিক্ষার প্রসারের পক্ষে ছিলেন ।
- পাশ্চাত্যবাদী: সন্ডার্স, কলভিন এবং আলেকজান্ডার ডাফের মতো পাশ্চাত্যবাদীরা ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে আধুনিক ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার পক্ষে ছিলেন ।
- মেকলে মিনিট (১৮৩৫): এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে, কমিটির সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষে জোরালো সওয়াল করে একটি প্রস্তাব দেন, যা ‘মেকলে মিনিট’ নামে পরিচিত ।
- ফলাফল: বড়লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক মেকলের প্রস্তাব গ্রহণ করে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মার্চ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাকে সরকারি নীতি হিসেবে ঘোষণা করেন ।

প্রাচ্যবাদী পক্ষ (Orientalist Faction) 🇮🇳 | পাশ্চাত্যবাদী পক্ষ (Anglicist Faction) 🇬🇧 |
---|---|
🎯 লক্ষ্য: ভারতে সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি ভাষার মাধ্যমে প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য, দর্শন ও আইন বিষয়ে শিক্ষাদানের পক্ষে ছিলেন। | 🎯 লক্ষ্য: ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে ইউরোপীয় সাহিত্য, দর্শন এবং আধুনিক বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যা শিক্ষার পক্ষে ছিলেন। |
🧑🤝🧑 প্রধান সমর্থক: এইচ. টি. প্রিন্সেপ, এইচ. এইচ. উইলসন, কোলব্রুক প্রমুখ। | 🧑🤝🧑 প্রধান সমর্থক: টমাস ব্যাবিংটন মেকলে, আলেকজান্ডার ডাফ, সন্ডার্স, কলভিন প্রমুখ। রাজা রামমোহন রায়ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবল সমর্থক ছিলেন। |

খ) শিক্ষাবিস্তারে বিভিন্ন উদ্যোগ (সরকারি ও বেসরকারি) (Class 10 History Chapter 2 Notes)
- খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগ:
- শ্রীরামপুর ত্রয়ী (কেরি, মার্শম্যান, ওয়ার্ড): তাঁরা শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন (১৮০০) ও শ্রীরামপুর কলেজ (১৮১৮) প্রতিষ্ঠা করেন এবং বহু বিদ্যালয় স্থাপন করেন ।
- আলেকজান্ডার ডাফ: তিনি জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন (১৮৩০) প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে পরিচিত ।
- ভারতীয়দের উদ্যোগ:
- রাজা রামমোহন রায়: তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবল সমর্থক ছিলেন এবং অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল (১৮২২) ও বেদান্ত কলেজ (১৮২৬) প্রতিষ্ঠা করেন ।
- ডেভিড হেয়ার: স্কটল্যান্ডের এই ঘড়ি ব্যবসায়ী কলকাতায় হিন্দু কলেজ (১৮১৭) প্রতিষ্ঠায় প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি (১৮১৭) এবং ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি (১৮১৮) প্রতিষ্ঠা করেন ।
- সরকারি উদ্যোগ ও আইন:
- উডের ডেসপ্যাচ (১৮৫৪): স্যার চার্লস উডের এই নির্দেশনামাকে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার ‘ম্যাগনাকার্টা’ বা ‘মহাসনদ’ বলা হয়। এতে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত একটি সুসংহত শিক্ষানীতির কথা বলা হয়েছিল ।
- বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন: উডের ডেসপ্যাচের সুপারিশ অনুযায়ী ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ।
- হান্টার কমিশন (১৮৮২): লর্ড রিপনের আমলে উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে এই শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়, যা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার অগ্রগতি পর্যালোচনা করে।
উনিশ শতকে বাংলার শিক্ষা জগতে যে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছিল, তার পেছনে ছিলেন কয়েকজন মহান ব্যক্তিত্ব। তাঁদের মধ্যে রাজা রামমোহন রায়, ডেভিড হেয়ার এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন অন্যতম। তাঁদের প্রত্যেকেরই লক্ষ্য ছিল শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের উন্নতি, কিন্তু তাঁদের পথ ও পদ্ধতিতে ছিল নিজস্বতা। চলো, এই তুলনামূলক সারণীর মাধ্যমে আমরা তাঁদের শিক্ষাসংস্কারমূলক কাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
তুলনামূলক সারণী: রামমোহন, হেয়ার ও বিদ্যাসাগর (Class 10 History Chapter 2 Notes)
তুলনার বিষয় 📜 | 👑 রাজা রামমোহন রায় | 🕰️ ডেভিড হেয়ার | ❤️ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর |
---|---|---|---|
🎯 দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্য | • সমন্বয়বাদী আধুনিকতা: প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেরা ভাবধারার সমন্বয় ঘটিয়ে আধুনিক ভারত গঠন করা। • কুসংস্কার মুক্তি: আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোয় ভারতবাসীর মন থেকে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দূর করা। | • মানবতাবাদী ও যুক্তিবাদী: একজন মানবতাবাদী হিসেবে এদেশের মানুষের সার্বিক অগ্রগতির জন্য আধুনিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তিনিষ্ঠ শিক্ষার প্রসার ঘটানো। • মানুষ তৈরি: তাঁর লক্ষ্য ছিল প্রকৃত মানুষ তৈরি করা। | • ঐতিহ্যবাহী আধুনিকতাবাদী: দেশীয় ঐতিহ্যের ভিত্তিতে আধুনিক পাশ্চাত্য জ্ঞানকে গ্রহণ করে এক নতুন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা। • সমাজ সংস্কারের হাতিয়ার: শিক্ষাকে, বিশেষত নারীশিক্ষাকে, সামাজিক কুপ্রথা দূর করার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা। |
🏫 প্রধান উদ্যোগ ও প্রতিষ্ঠান | • হিন্দু কলেজ (১৮১৭): প্রতিষ্ঠায় ডেভিড হেয়ারকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করা। • অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল (১৮২২): নিজে প্রতিষ্ঠা করেন। • বেদান্ত কলেজ (১৮২৬): নিজে প্রতিষ্ঠা করেন। • জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন: প্রতিষ্ঠায় আলেকজান্ডার ডাফকে সাহায্য করেন। | • হিন্দু কলেজ (১৮১৭): প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ও সক্রিয় উদ্যোক্তা ছিলেন। • ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি (১৮১৭): পাঠ্যপুস্তক রচনার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন। • ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি (১৮১৮): বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন। • পটলডাঙ্গা অ্যাকাডেমি (হেয়ার স্কুল, ১৮১৮): নিজে প্রতিষ্ঠা করেন। | • সংস্কৃত কলেজের সংস্কার: অধ্যক্ষ হিসেবে এই কলেজের দরজা সকল বর্ণের হিন্দু ছাত্রদের জন্য খুলে দেন। <br> • মডেল স্কুল: বাংলার বিভিন্ন জেলায় বহু মডেল বা আদর্শ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। • মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন (১৮৭২): কলকাতায় এই বিখ্যাত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত। |
🗣️ শিক্ষার মাধ্যম | • ইংরেজি ভাষার সমর্থক: পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার জন্য ইংরেজি ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন। | • ইংরেজি ভাষার ওপর গুরুত্ব: তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলিতে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমেই আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। | • মাতৃভাষার রূপকার: বাংলা ভাষাকে শিক্ষার প্রধান মাধ্যম করার পক্ষে ছিলেন। তিনি বাংলা গদ্যকে সহজবোধ্য ও সুশৃঙ্খল করে পাঠ্যপুস্তক রচনার উপযোগী করে তোলেন। |
👩🎓 নারীশিক্ষা | • পরোক্ষ সমর্থক: তিনি সামগ্রিকভাবে নারীর অধিকার ও মর্যাদা বৃদ্ধির পক্ষে ছিলেন। সতীদাহ প্রথা রদের মাধ্যমে তিনি পরোক্ষে নারীমুক্তির পথ প্রশস্ত করেন। তবে বিদ্যালয় স্থাপনের মতো প্রত্যক্ষ উদ্যোগে তাঁর ভূমিকা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। | • উদ্যোগী সমর্থক: ডেভিড হেয়ার বাংলার নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারে আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি কলকাতায় মেয়েদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন এবং নারীশিক্ষার পক্ষে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। | • সর্বশ্রেষ্ঠ পথিকৃৎ: নারীশিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদান সর্বাধিক। তিনি বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠায় (১৮৪৯) বেথুন সাহেবকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেন ও তার সম্পাদক হন। তিনি নিজ উদ্যোগে প্রায় ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। |
📖 পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রম | • আধুনিক পাঠ্যক্রমের প্রবক্তা: অ্যাংলো-হিন্দু স্কুলের পাঠ্যসূচিতে কারিগরিবিদ্যা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভলতেয়ার, ইউক্লিডের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ রচনা করেন। | • পাঠ্যপুস্তকের জোগানদাতা: পাঠ্যপুস্তকের অভাব দূর করার জন্য বিশেষভাবে ‘ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় বই ছাপাতো। | • শিশুপাঠ্যের জনক: বাংলা ভাষায় শিশুপাঠ্য রচনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। তাঁর লেখা ‘বর্ণপরিচয়’, ‘কথামালা’, ‘বোধোদয়’ ইত্যাদি পাঠ্যপুস্তকগুলি বাংলা প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করে। |
গ) নারীশিক্ষা ও চিকিৎসা বিদ্যার বিকাশ (Class 10 History Chapter 2 Notes)
- নারীশিক্ষা:
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: নারীশিক্ষার প্রসারে তাঁর অবদান সর্বাধিক। তিনি জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনকে ‘ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল’ (১৮৪৯) প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন এবং পরে এর সম্পাদক হন । তিনি নিজ উদ্যোগে বাংলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন (১৮৫৭-৫৮) ।
- বেথুন স্কুল ও কলেজ: বেথুন সাহেবের প্রতিষ্ঠিত ক্যালকাটা ফিমেল স্কুলই বর্তমানে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত । পরবর্তীকালে বেথুন কলেজও (১৮৭৮) স্থাপিত হয় ।
- চিকিৎসা বিদ্যা:
- কলকাতা মেডিকেল কলেজ (১৮৩৫): লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের উদ্যোগে এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ।
- শবব্যবচ্ছেদ: মধুসূদন গুপ্ত ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি এই কলেজে প্রথম ভারতীয় হিসেবে শবব্যবচ্ছেদ করে এক যুগান্তকারী নজির সৃষ্টি করেন ।
- প্রথম মহিলা স্নাতক ও চিকিৎসক: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম মহিলা স্নাতক (বি.এ.) ছিলেন কাদম্বিনী গাঙ্গুলি ও চন্দ্রমুখী বসু (১৮৮৩) । কাদম্বিনী গাঙ্গুলি পরবর্তীকালে কলকাতা মেডিকেল কলেজে পড়ার অনুমতি পান এবং ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসকদের মধ্যে অন্যতম হন ।

৩. 🤝 উনিশ শতকের বাংলা সমাজ সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা 🙏
Class 10 History Chapter 2 Notes in Bengali: এই বিভাগে তুমি জানবে উনিশ শতকে বাংলার সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কুপ্রথার বিরুদ্ধে কীভাবে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল এবং কারা এই সমাজ সংস্কারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ভূমিকা: উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে শিক্ষিত বাঙালি সমাজে এক নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটে। এর ফলে সমাজে প্রচলিত সতীদাহ প্রথা, বিধবাবিবাহে বাধা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, জাতিভেদ প্রথার মতো বিভিন্ন কুসংস্কার ও অমানবিক রীতির বিরুদ্ধে সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়।

ক) সতীদাহ প্রথা রদ আন্দোলন 🔥👩❌ (Class 10 History Chapter 2 Notes)
- প্রথার পরিচয়: স্বামীর মৃত্যুর পর তার জ্বলন্ত চিতায় বিধবা স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার এক নিষ্ঠুর, অমানবিক ও ঘৃণ্য প্রথা প্রচলিত ছিল, যা সতীদাহ প্রথা নামে পরিচিত।
- রামমোহন রায়ের ভূমিকা:
- শাস্ত্রীয় যুক্তি: রাজা রামমোহন রায় ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন। তিনি ‘মনুসংহিতা’ ও অন্যান্য হিন্দুশাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেন যে, সতীদাহ প্রথা শাস্ত্রসম্মত নয়।
- জনমত গঠন: তিনি ‘সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ’ নামে পুস্তিকা প্রকাশ করেন এবং তাঁর সম্পাদিত ‘সম্বাদ কৌমুদী’ পত্রিকায় একাধিক রচনা প্রকাশ করে জনমত গঠন করতে সচেষ্ট হন।
- বিরোধিতা: গোঁড়া ও রক্ষণশীল হিন্দুরা রাধাকান্ত দেবের নেতৃত্বে ‘ধর্মসভা’ গঠন করে এর বিরোধিতা করে।
- আইন প্রণয়ন: অবশেষে রামমোহনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের উদ্যোগে ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা ডিসেম্বর, ১৭ নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহ প্রথা আইনত নিষিদ্ধ করা হয়।
খ) বিধবাবিবাহ আন্দোলন ❤️📜 (Class 10 History Chapter 2 Notes)
- পটভূমি: তৎকালীন হিন্দু সমাজে, বিশেষত কুলীন পরিবারগুলিতে, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের কারণে বহু বালিকা অল্প বয়সেই বিধবা হতো এবং তাদের জীবন ছিল অত্যন্ত দুর্বিষহ।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা:
- শাস্ত্রীয় ভিত্তি প্রতিষ্ঠা: বিধবাবিবাহ নিয়ে সবচেয়ে জোরালো ও কার্যকরী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি হিন্দুশাস্ত্র ‘পরাশর সংহিতা’ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেন যে, শাস্ত্রে হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহের বিধান রয়েছে।
- প্রচার ও আবেদন: এই বিষয়ে জনমত গঠনের জন্য তিনি ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ‘বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ নামে দুটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। এরপর তিনি প্রায় এক হাজার মানুষের স্বাক্ষরসহ একটি আবেদনপত্র সরকারের কাছে পেশ করেন।
- আইন পাস ও বাস্তবায়ন: তাঁরই প্রচেষ্টায় বড়লাট লর্ড ক্যানিং ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জুলাই, ১৫ নং রেগুলেশন দ্বারা বিধবাবিবাহ আইনসিদ্ধ করেন। আইন পাস হওয়ার পর তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ১৮৫৬ সালের ৭ই ডিসেম্বর কলকাতায় প্রথম আইনসম্মত বিধবাবিবাহ সম্পন্ন করান এবং পরবর্তীকালে নিজ পুত্রেরও এক বিধবার সঙ্গে বিবাহ দেন।
গ) নব্যবঙ্গ (ইয়ং বেঙ্গল) আন্দোলন 🧑🎓✨💥(Class 10 History Chapter 2 Notes)

- পরিচয়: হিন্দু কলেজের তরুণ অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর নেতৃত্বে একদল যুক্তিবাদী ও প্রগতিশীল ছাত্র যে সংস্কার আন্দোলন শুরু করেছিলেন, সেই গোষ্ঠী ‘নব্যবঙ্গ’ বা ‘ইয়ং বেঙ্গল’ নামে পরিচিত।
- আদর্শ ও কার্যকলাপ:
- যুক্তিবাদ: ডিরোজিওর অনুগামীরা যুক্তির দ্বারা সব কিছু বিচার করতেন এবং প্রচলিত কুসংস্কারের তীব্র সমালোচনা করতেন।
- ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন’ (১৮২৮): ডিরোজিও এই বিতর্ক সভা প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে হিন্দু সমাজের জাতিভেদপ্রথা, অস্পৃশ্যতা, পৌত্তলিকতা, নারীদের প্রতি বৈষম্য ইত্যাদি বিষয়ে সদস্যরা স্বাধীনভাবে আলোচনা ও সমালোচনা করতেন।
- উগ্র প্রতিবাদ: নব্যবঙ্গীয়রা অনেক সময় নিষিদ্ধ মাংস ভক্ষণ, উপবীত ছিঁড়ে ফেলার মতো উগ্র কাজের মাধ্যমে হিন্দুসমাজের গোঁড়ামিকে তীব্রভাবে আক্রমণ করতেন।
- সীমাবদ্ধতা: তাঁদের আন্দোলন মূলত শহরকেন্দ্রিক ও শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং তাঁদের উগ্র কার্যকলাপের জন্য তাঁরা সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন।
ঘ) ব্রাহ্মসমাজের সমাজসংস্কার ⚛️(Class 10 History Chapter 2 Notes)
- ব্রাহ্মসমাজ জাতিভেদপ্রথা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, অস্পৃশ্যতা প্রভৃতি কুপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
- নারীশিক্ষার প্রসার, বিধবাবিবাহের সমর্থন এবং সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় ব্রাহ্মসমাজ অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
- কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের ফলেই সরকার ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত ‘তিন আইন’ (নেটিভ ম্যারেজ অ্যাক্ট) পাস করতে বাধ্য হয়, যার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হয় এবং অসবর্ণ বিবাহ আইনসিদ্ধ হয়।

৪. 🙏 উনিশ শতকের বাংলা ধর্মসংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ⛪
Class 10 History Chapter 2 Notes in Bengali: এই অংশে তুমি জানবে উনিশ শতকের বাংলায় প্রচলিত ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে কীভাবে নতুন চিন্তাধারার জন্ম হয়েছিল এবং কারা এই ধর্মীয় সংস্কারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ক) ব্রাহ্ম আন্দোলন ও তার বিবর্তন ⚛️(Class 10 History Chapter 2 Notes)
- রামমোহনের একেশ্বরবাদ: রাজা রামমোহন রায় হিন্দুধর্মের আচারসর্বস্বতা ও পৌত্তলিকতার বিরোধিতা করে উপনিষদের ওপর ভিত্তি করে একেশ্বরবাদী নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনার প্রচার করেন। এই উদ্দেশ্যেই তিনি ব্রাহ্মসভা (১৮২৮) প্রতিষ্ঠা করেন।
- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্রাহ্মধর্ম: দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মসমাজকে ব্রাহ্মধর্মে রূপান্তরিত করেন এবং এর নির্দিষ্ট উপাসনা পদ্ধতি চালু করেন। তাঁর সময়ে ব্রাহ্মধর্মের ভিত্তি ছিল উপনিষদ।
- কেশবচন্দ্র সেনের ভক্তিবাদ ও বিভাজন: কেশবচন্দ্র সেনের যোগদানের পর যুক্তিবাদী ব্রাহ্মধর্মে ভক্তি ও আবেগের সঞ্চার হয় এবং এটি আরও বেশি সমাজসংস্কারমুখী ও বিশ্বজনীন হয়ে ওঠে। কিন্তু দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধের ফলে ব্রাহ্মসমাজ ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে ‘আদি ব্রাহ্মসমাজ’ ও ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’ – এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
- সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ ও নববিধান: পরবর্তীকালে কেশবচন্দ্রের কিছু কার্যকলাপের বিরুদ্ধে গিয়ে শিবনাথ শাস্ত্রী, আনন্দমোহন বসু প্রমুখ ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। কেশবচন্দ্রের নেতৃত্বাধীন অংশটি ‘নববিধান ব্রাহ্মসমাজ’ নামে পরিচিত হয়।

আদি ব্রাহ্মসমাজ | ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ |
---|---|
• নেতৃত্ব: মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। • আদর্শ: এই সমাজ ব্রাহ্মধর্মকে হিন্দুধর্মেরই একটি পরিশুদ্ধ রূপ বলে মনে করত। এটি সংস্কারের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল ছিল। | • নেতৃত্ব: ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন। • আদর্শ: এই সমাজ সমস্ত প্রকার সামাজিক কুসংস্কারের বিরোধী ছিল এবং ব্রাহ্মধর্মকে একটি বিশ্বজনীন ধর্ম হিসেবে প্রচার করত। |
দ্বিতীয় বিভাজন (The Second Schism) 💔 (১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দ)
ফলাফল: কেশবচন্দ্রের অনুগামীরা তাঁকে ত্যাগ করেন।
কারণ: কেশবচন্দ্র সেনের কিছু কার্যকলাপ, যেমন – গুরুবাদে বিশ্বাস এবং নিজের অপ্রাপ্তবয়স্কা কন্যার সঙ্গে কোচবিহারের রাজপুত্রের বিবাহ দেওয়া, যা ‘তিন আইন’ (১৮৭২)-এর পরিপন্থী ছিল – এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মতবিরোধ তৈরি হয়।
এখান থেকে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ শাখাটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয় (Class 10 History Chapter 2 Notes)
সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ 👨👩👧👦 | নববিধান ব্রাহ্মসমাজ 🌟 |
---|---|
• প্রতিষ্ঠাতা: শিবনাথ শাস্ত্রী, আনন্দমোহন বসু, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। • আদর্শ: গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত এই সমাজ সমাজ সংস্কারের কাজ চালিয়ে যায় এবং আজও এর অস্তিত্ব রয়েছে। | • প্রতিষ্ঠাতা: কেশবচন্দ্র সেন। • আদর্শ: কেশবচন্দ্রের নেতৃত্বাধীন ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের অংশটি এই নতুন নামে পরিচিত হয়, তবে এটি ধীরে ধীরে তার প্রভাব হারিয়ে ফেলে। |
এইভাবে ব্রাহ্ম আন্দোলন ত্রিধাবিভক্ত হয়ে যাওয়ায় তার ঐক্যবদ্ধ শক্তি কিছুটা হ্রাস পেলেও, প্রতিটি শাখাই উনিশ শতকের বাংলায় ধর্মীয় গোঁড়ামি হ্রাস, সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণ এবং উদারনৈতিক চিন্তাধারার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।
খ) শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সর্বধর্মসমন্বয় ❤️(Class 10 History Chapter 2 Notes)
- মূল আদর্শ: শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের (১৮৩৬-১৮৮৬) ধর্মীয় আদর্শের মূল কথাই ছিল ‘সর্বধর্মসমন্বয়’।
- ‘যত মত, তত পথ’: তিনি নিজে হিন্দু, ইসলাম ও খ্রিস্টীয় মতে সাধনা করে প্রমাণ করেন যে, সকল ধর্মের মাধ্যমেই একই ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ করা যায়। তাই তিনি বলতেন, “যত মত, তত পথ”।
- শিবজ্ঞানে জীবসেবা: তিনি মানবসেবাকেই ঈশ্বরের সেবা বলে মনে করতেন এবং বলতেন “জীবই হল শিব” এবং “যত্র জীব তত্র শিব”।
- প্রভাব: তাঁর সহজ-সরল ও উদার ধর্মীয় ব্যাখ্যা হিন্দুধর্মের গোঁড়ামি হ্রাস করে এবং ধর্মীয় বিভেদ দূর করে জাতীয়তাবোধকে শক্তিশালী করে তোলে।

গ) স্বামী বিবেকানন্দের নব্য বেদান্ত 💪(Class 10 History Chapter 2 Notes)
- পরিচয়: স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২) প্রাচীন অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের এক নতুন, আধুনিক ও কর্মমুখী ব্যাখ্যা দেন, যা ‘নব্য বেদান্ত’ বা ব্যবহারিক বেদান্ত নামে পরিচিত।
- মূল কথা:
- মানুষ তৈরির ধর্ম: তাঁর ধর্ম ছিল মানুষ তৈরির ধর্ম। তিনি মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির পাশাপাশি জাগতিক উন্নতির ওপরও সমান গুরুত্ব দেন।
- সেবার আদর্শ: তাঁর মতে, সকল মানুষই পরমাত্মার অংশ, তাই সাধারণ মানুষের সেবা করাই হলো ঈশ্বরের সেবা করা।
- শিকাগো বক্তৃতা: ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকার শিকাগো বিশ্বধর্ম সম্মেলনে তিনি তাঁর এই নব্য বেদান্ত দর্শনের ওপর বক্তব্য রেখেছিলেন, যা সারাবিশ্বের মানুষকে এক নতুন পথের সন্ধান দিয়েছিল।
- রামকৃষ্ণ মিশন: তিনি তাঁর গুরু শ্রীরামকৃষ্ণের ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’র আদর্শকে বাস্তবায়িত করার জন্য ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১লা মে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন।

৫. 🌟 বাংলার নবজাগরণের চরিত্র ও পর্যালোচনা, উনিশ শতকের বাংলায় ‘নবজাগরণ’ ধারণার ব্যবহার বিষয়ক বিতর্ক 🧐
Class 10 History Chapter 2 Notes in Bengali: এই অংশে তুমি জানবে উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি, এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, সাফল্য, সীমাবদ্ধতা এবং এই ‘নবজাগরণ’ শব্দটি ব্যবহার করা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যে বিতর্ক রয়েছে, সেই সম্পর্কে।
ক) নবজাগরণ কী? ✨(Class 10 History Chapter 2 Notes)
- অর্থ: ‘রেনেসাঁস’ একটি ফরাসি শব্দ, যার অর্থ ‘পুনর্জন্ম’ বা ‘নবজন্ম’।
- বাংলার প্রেক্ষাপট: উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে বাঙালি জাতির মন ও মননে যে অনুসন্ধিৎসা এবং বৌদ্ধিক ও সাংস্কৃতিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, তাকেই বাংলার নবজাগরণ বলা হয়।
খ) নবজাগরণের চরিত্র নিয়ে বিতর্ক 🗣️(Class 10 History Chapter 2 Notes)
💬 উনিশ শতকের বাংলার এই জাগরণকে প্রকৃত অর্থে ‘নবজাগরণ’ বলা যায় কিনা, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে তীব্র মতভেদ রয়েছে।
- নবজাগরণের সপক্ষে মত:
- স্যার যদুনাথ সরকার: তিনি এই নবজাগরণকে প্রকৃত নবজাগরণ বলে অভিহিত করে বলেছেন যে, এটি ইউরোপীয় নবজাগরণের থেকেও গভীর ও ব্যাপক ছিল।
- অধ্যাপক সুশোভন সরকার: তিনিও বাংলার এই জাগরণকে রেনেসাঁস বলে অভিহিত করেছেন এবং মনে করেন যে, ইউরোপীয় নবজাগরণে ইতালির যে ভূমিকা ছিল, ভারতের নবজাগরণে বাংলার সেই ভূমিকা ছিল।
- নবজাগরণ অভিধার বিপক্ষে ও সীমাবদ্ধতা বিষয়ক মত:
- শহরকেন্দ্রিকতা ও গণবিচ্ছিন্নতা: এই নবজাগরণ প্রধানত কলকাতা শহরকেন্দ্রিক এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক ছিল না। ঐতিহাসিক অনিল শীল তাই এই আন্দোলনকে ‘এলিটিস্ট আন্দোলন’ বা অভিজাত গোষ্ঠীর আন্দোলন বলে বর্ণনা করেছেন।
- হিন্দুধর্ম কেন্দ্রিকতা: বাংলার এই নবজাগরণ ছিল প্রধানত হিন্দুদের আন্দোলন, বাংলার মুসলিম সমাজ এই আন্দোলনের বাইরেই ছিল। এর কারণ হিসেবে হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানকে দায়ী করা হয়।
- অন্যান্য সমালোচনা: বিনয় ঘোষ একে একটি ‘ঐতিহাসিক প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন। সুমিত সরকার একে ‘নকলনবিশি’ বলেছেন। আবার অশোক মিত্র এটিকে ‘তথাকথিত নবজাগরণ’ বলে বর্ণনা করেছেন।
গ) নবজাগরণের গুরুত্ব ও সীমাবদ্ধতা (Class 10 History Chapter 2 Notes)
- সাফল্য: অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, এই নবজাগরণের ফলেই বাংলায় যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ, বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসার ঘটেছিল। সাহিত্য ও শিল্পের ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল এবং সমাজ সংস্কার আন্দোলনগুলি গতি পেয়েছিল।
- ব্যর্থতা: সার্বিকভাবে এটি একটি সার্বজনীন রূপ নিতে পারেনি। এটি যুক্তিবাদী ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
উপসংহার: Class 10 History Chapter 2 Notes in Bengali: উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের চরিত্র ছিল অত্যন্ত জটিল। এর বহু সীমাবদ্ধতা থাকলেও, এর ফলেই বাংলার বৌদ্ধিক মানসিকতার উন্নতি ঘটেছিল এবং আধুনিকতার পথ প্রশস্ত হয়েছিল – এখানেই এর সার্থকতা।