Madhyamik History Chapter 1 Question Answer | প্রথম অধ্যায়: ইতিহাসের ধারণা | Free Exam Guide

Madhyamik History Chapter 1 Question Answer

Madhyamik History Chapter 1 Question Answer | আধুনিক ইতিহাস চর্চার বৈচিত্র্য | Free Exam Guide! মাধ্যমিক ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় – ‘ইতিহাসের ধারণা’ – শুধুমাত্র কয়েকটি ঘটনা বা সাল-তারিখের তালিকা নয়, বরং ইতিহাসকে কীভাবে দেখতে হবে, কীভাবে বুঝতে হবে, তার এক নতুন ধারণা দেয়। এই Crucial অধ্যায় থেকে পরীক্ষায় আসা All Important প্রশ্নগুলির Crystal Clear উত্তর পেতে এবং তোমার প্রস্তুতিকে আরও Boost করতে, এই পৃষ্ঠায় একটি Ultimate Q&A Guide তৈরি করা হয়েছে।

এই বিশেষ পৃষ্ঠায় তুমি পাবে প্রথম অধ্যায়ের দুটি প্রধান টপিক:

  1. আধুনিক ইতিহাস চর্চার বৈচিত্র্য 🎨 (খেলাধুলা, খাদ্যাভ্যাস, শিল্পকলা, পোশাক, পরিবেশ, নারী ইতিহাস ইত্যাদি)
  2. আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদান 📖 (সরকারি নথি, আত্মজীবনী, চিঠিপত্র, সংবাদপত্র ইত্যাদি)

– এই দুটি অংশ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (SAQ) এবং বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন ও তাদের আদর্শ উত্তর বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

১. 📜 আধুনিক ইতিহাস চর্চার বৈচিত্র্য 🎨Madhyamik History Chapter 1 Question Answer

এই বিভাগে তুমি জানবে আধুনিক ইতিহাসচর্চায় শুধুমাত্র রাজা-মহারাজাদের কথাই নয়, বরং সাধারণ মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক, যেমন—খেলাধুলা, খাদ্যাভ্যাস, শিল্পকলা, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।


📜 ক) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (SAQ – প্রতিটি ২ নম্বর)

নতুন সামাজিক ইতিহাস ও নিম্নবর্গের ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

১. প্রশ্ন: নতুন সামাজিক ইতিহাস কী?

উত্তর: যে ইতিহাসচর্চায় রাজা-মহারাজা বা অভিজাত সমাজের আলোচনার পাশাপাশি সমাজের নিম্নবর্গের সাধারণ মানুষ, যেমন—কৃষক, শ্রমিক, নারী প্রমুখ সকলের আলোচনা করা হয়, তাকেই ‘নতুন সামাজিক ইতিহাস’ বলা হয় । বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এই ইতিহাসচর্চার সূচনা হয়েছিল ।

২. প্রশ্ন: কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নতুন সামাজিক ইতিহাসের চর্চা করা হয়?

উত্তর: নতুন সামাজিক ইতিহাসের চর্চা করা হয় সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, অর্থাৎ উপর থেকে নীচের দিকে দেখার পরিবর্তে নীচ থেকে ওপরের দিকে দেখার চেষ্টা করা হয় । এই ধারাটি ‘History from below’ নামে পরিচিত ।

৩. প্রশ্ন: নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বলতে কী বোঝো?

উত্তর: ১৯৮০-র দশক থেকে ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের গবেষকদের উদ্যোগে জাতি, শ্রেণি, লিঙ্গ, ধর্ম প্রভৃতি নির্বিশেষে সমাজের নিম্নবর্গের বা Subaltern মানুষদের নিয়ে যে ইতিহাসচর্চা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই ধারা নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বা সাবলটার্ন স্টাডিজ নামে পরিচিত ।

৪. প্রশ্ন: নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ঐতিহাসিকের নাম লেখো।

উত্তর: নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক হলেন এই ধারার জনক রণজিৎ গুহ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে, শাহিদ আমিন, সুমিত সরকার, দীপেশ চক্রবর্তী, গৌতম ভদ্র প্রমুখ ।

৫. প্রশ্ন: রণজিৎ গুহ রচিত নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার জনক রণজিৎ গুহ রচিত এই বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো—

১. ‘সিলেক্টেড সাবলটার্ন স্টাডিজ’ (Selected Subaltern Studies) ২. ‘এলিমেন্টারি অ্যাস্পেক্টস অব পিজেন্ট ইনসারজেন্সি ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’ (Elementary Aspects of Peasant Insurgency in Colonial India) ৩. ‘সাবলটার্ন স্টাডিজ রিডার: ১৯৮৬-১৯৯৫’ (Subaltern Studies Reader: 1986-1995)

৬. প্রশ্ন: ‘অ্যানাল স্কুল’ কী?

উত্তর: ‘অ্যানাল স্কুল’ হলো ফ্রান্সের একটি পত্রিকাগোষ্ঠী, যারা নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে । মার্ক ব্লখ ও লুসিয়েন ফেবর-এর উদ্যোগে ‘অ্যানাল্স অব ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল হিস্ট্রি’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে এই গোষ্ঠী গড়ে ওঠে ।

খেলার ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

খেলার ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

৭. প্রশ্ন: ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উত্তর: ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ—

১) এই বছর মোহনবাগান ক্লাব ইংরেজ মিলিটারি দল ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে হারিয়ে আই.এফ.এ. শিল্ড জয় লাভ করে ।

২) এই বছরই ১২ ডিসেম্বর ব্রিটিশ সরকার ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করে ।

৮. প্রশ্ন: সচিন তেন্ডুলকরের আত্মজীবনীর নাম কী?

উত্তর: ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকরের আত্মজীবনীর নাম হলো ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’ (Playing It My Way) । এটি ক্রীড়া ইতিহাসচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

৯. প্রশ্ন: ‘টোয়েন্টি টু ইয়ার্ডস টু ফ্রিডম’ গ্রন্থটির লেখক কে?

উত্তর: ‘টোয়েন্টি টু ইয়ার্ডস টু ফ্রিডম’ (Twenty Two Yards to Freedom) গ্রন্থটির লেখক হলেন বিশিষ্ট ক্রীড়া ইতিহাসবিদ বোরিয়া মজুমদার । এই গ্রন্থে ঔপনিবেশিক ভারতে ক্রিকেট খেলার ইতিহাস আলোচিত হয়েছে।

১০. প্রশ্ন: খেলার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: খেলার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো— ১. বোরিয়া মজুমদার ও কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান ফুটবল: স্ট্রাইভিং টু স্কোর’ (A Social History of Indian Football: Striving to Score) এবং ২. কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘খেলা যখন ইতিহাস’

খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

১১. প্রশ্ন: মানুষের খাদ্যাভ্যাস থেকে ইতিহাসচর্চার কী ধরনের উপাদান পাওয়া যেতে পারে?

উত্তর: মানুষের খাদ্যাভ্যাস থেকে ইতিহাসচর্চার যে ধরনের উপাদান পাওয়া যেতে পারে সেগুলি হলো—

১. কোনো সমাজের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা। ২. সেই সমাজের খাদ্যাভ্যাস কতখানি অন্য সমাজের দ্বারা প্রভাবিত । ৩. স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা প্রভৃতি ।

১২. প্রশ্ন: ‘ঢাকাই খাবার’ কী?

উত্তর: ঢাকা যখন প্রাদেশিক মুসলিম শাসকদের রাজধানী ছিল তখন সেখানকার রন্ধনপ্রণালীর সঙ্গে পারসিক খাদ্যরীতির সংমিশ্রণ ঘটে। এর ফলে যে নতুন ধরনের খাবার (যেমন – খিচুড়ি, হালিম, চালের গুঁড়োর পিঠে) প্রস্তুত হয়, তা ‘ঢাকাই খাবার’ নামে পরিচিত ।

১৩. প্রশ্ন: খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তর: খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন খ্যাতনামা গবেষক হলেন কে. টি. আচয়, প্যাট চ্যাপম্যান, শরীফউদ্দিন আহমেদ, হারভে লেভেনস্টেইন, জোনাথান রাইট, বিজয়া চৌধুরী, হরিপদ ভৌমিক প্রমুখ ।

১৪. প্রশ্ন: হরিপদ ভৌমিক ইতিহাসে বিখ্যাত কেন?

উত্তর: গবেষক হরিপদ ভৌমিক তাঁর ‘রসগোল্লা: বাংলার জগৎমাতানো আবিষ্কার’ গ্রন্থে দাবি করেছেন যে, বাংলার নদিয়া জেলার ফুলিয়ার হারাধন ময়রা ছিলেন আদি রসগোল্লার সৃষ্টিকর্তা । এই গবেষণার কারণে তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত ।

১৫. প্রশ্ন: নবীনচন্দ্র দাস কে ছিলেন?

উত্তর: নবীনচন্দ্র দাস ছিলেন কলকাতার বাগবাজারের একজন বিখ্যাত ময়রা । নদিয়ার ফুলিয়ার হারাধন ময়রার তৈরি করা রসগোল্লায় কিছুটা পরিবর্তন করে নবীনচন্দ্র ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে স্পঞ্জ রসগোল্লা তৈরি করেন, যা আজও জনপ্রিয় ।

পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

১৬. প্রশ্ন: মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে ইতিহাসচর্চার কী ধরনের উপাদান পাওয়া যেতে পারে?

উত্তর: মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে ইতিহাসচর্চার যে ধরনের উপাদান বা তথ্য পাওয়া যেতে পারে, সেগুলি হলো— ১. মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা। ২. সামাজিক রুচিবোধ ও সাংস্কৃতিক পরিচয় । ৩. সামাজিক উদারতার মাত্রা ও সমাজে প্রচলিত লিঙ্গবৈষম্য

১৭. প্রশ্ন: ‘ব্রাহ্মিকা পদ্ধতি’ কী?

উত্তর: ‘ব্রাহ্মিকা পদ্ধতি’ হলো বাঙালি মেয়েদের এক বিশেষ ধরনের শাড়ি পরার পদ্ধতি, যা মূলত অবাঙালিদের ‘কুচি পদ্ধতি’-তে শাড়ি পরার বিবর্তিত রূপ । এই পদ্ধতিতে শাড়ির কুচির অংশটি বড় হয় এবং কোমর, বুক ও পিঠ টানটান থাকে । উনিশ শতকে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা, বিশেষত জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, প্রথম এই পদ্ধতি চালু করেছিলেন।

১৮. প্রশ্ন: কবে ও কোথায় ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ড্রেস হিস্টোরিয়ানস’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? এর উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে (পাঠ্যবই ২ অনুসারে, ২০১১ পাঠ্যবই ১ অনুসারে) ইংল্যান্ডে ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ড্রেস হিস্টোরিয়ানস’ (The Association of Dress Historians) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস চর্চা করা

১৯. প্রশ্ন: পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তর: পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য গবেষক হলেন কার্ল কোহলার, এমা টারলো, মলয় রায়, নিরুপমা পুন্ডি, ত্রৈলোক্যনাথ বসু প্রমুখ ।

২০. প্রশ্ন: পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো—১. মলয় রায়ের ‘বাঙালির বেশবাস, বিবর্তনের রূপরেখা’ এবং ২. এম্মা টারলোর ‘ক্লোদিং ম্যাটারস: ড্রেস অ্যান্ড আইডেন্টিটি ইন ইন্ডিয়া’ (Clothing Matters: Dress and Identity in India) ।

If you want to read detailed history of evolution in Indian clothing starting from ancient India to post independent modern era then you can visit the following blogs

Unveiling the Fashionable Past: A Journey through the Ancient Indian Clothing and Fashion History
The Fascinating History and Evolution of Clothing in Medieval and Modern India
The Fascinating History and Evolution of Clothing in Medieval and Modern India

শিল্পচর্চার ইতিহাস (সংগীত, নৃত্য, নাটক, চলচ্চিত্র): (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

শিল্পচর্চার ইতিহাস (সংগীত, নৃত্য, নাটক, চলচ্চিত্র): (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

২১. প্রশ্ন: সংগীতের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করছেন এমন কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তর: সংগীতের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করছেন এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য গবেষক হলেন উমেশ জোশী, রাজকুমার, প্যাট্রিক মৌতাল, চার্লস রাসেল ডে, সুকুমার রায়, সুধীর চক্রবর্তী, মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী প্রমুখ ।

২২. প্রশ্ন: সংগীতের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: সংগীতের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো— ১. উমেশ জোশীর ‘ভারতীয় সংগীত কা ইতিহাস’ এবং ২. করুণাময় গোস্বামীর ‘বাংলা গানের বিবর্তন’

২৩. প্রশ্ন: আধুনিক ভারতের কয়েকজন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পীর নাম লেখো।

উত্তর: আধুনিক ভারতের কয়েকজন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী হলেন উদয়শঙ্কর, অমলাশঙ্কর, রুক্মিনী দেবী, মল্লিকা সারাভাই, পণ্ডিত বিরজু মহারাজ, অনিতা রত্নম প্রমুখ ।

২৪. প্রশ্ন: নৃত্যকলার ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তর: নৃত্যকলার ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য গবেষক হলেন ক্যারল ওয়েলস, জে. অ্যাডশিড ল্যান্সডেল, ওয়াং কেফেন, রাগিনী দেবী, আকৃতি সিনহা, শোভনা গুপ্তা, গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ।

২৫. প্রশ্ন: নৃত্যের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: নৃত্যের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো— ১. রাগিনী দেবীর ‘ডান্স ডায়ালেক্টস অব ইন্ডিয়া’ (Dance Dialects of India) এবং ২. গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভারতের নৃত্যকলা’

২৬. প্রশ্ন: ইতিহাসচর্চায় নাটকের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উত্তর: ইতিহাসচর্চায় নাটকের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এর মাধ্যমে— ১. কোনো সমাজের সমকালীন বিনোদন সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায় । ২. বহু নাটক সমকালীন সমাজজীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে, যা থেকে ঐতিহাসিক উপাদান সংগ্রহ করা যায় ।

২৭. প্রশ্ন: নাটকের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তর: নাটকের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক হলেন ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজীবন মুখোপাধ্যায়, আশুতোষ ভট্টাচার্য, বালদুন ধিংরা প্রমুখ ।

২৮. প্রশ্ন: নাটকের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: নাটকের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো— ১. ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস’ এবং ২. বালদুন ধিংরার ‘এ ন্যাশনাল থিয়েটার ফর ইন্ডিয়া’ (A National Theatre for India)

২৯. প্রশ্ন: ‘স্থাপত্যশিল্প’ নিয়ে ইতিহাসচর্চা করেছেন এমন কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তর: স্থাপত্যশিল্প নিয়ে ইতিহাসচর্চা করেছেন এমন কয়েকজন গবেষক হলেন জে. ফার্গুসন, জর্জ মিশেল, পার্সি ব্রাউন, প্যাট্রিক নাটগেন্স, অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাপদ সাঁতরা, প্রণব রায় প্রমুখ ।

৩০. প্রশ্ন: ‘স্থাপত্যশিল্পের’ ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো—১. জে. ফার্গুসনের ‘হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইস্টার্ন আর্কিটেকচার’ (History of India and Eastern Architecture) এবং ২. পার্সি ব্রাউনের ‘ইন্ডিয়ান আর্কিটেকচার’ (Indian Architecture)

৩১. প্রশ্ন: স্থানীয় ইতিহাসচর্চা গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উত্তর: স্থানীয় ইতিহাসচর্চা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর মাধ্যমে—১. কোনো স্থানীয় অঞ্চলের সমাজ, অর্থনীতি, শিল্পকলা প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় । ২. জাতীয় ইতিহাসচর্চার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান পাওয়া যায়, কারণ স্থানীয় ইতিহাসকে ভিত্তি করেই জাতীয় ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ রূপ নেয় ।

৩২. প্রশ্ন: স্থানীয় ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তর: স্থানীয় ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক হলেন কালীকমল সার্বভৌম, কুমুদনাথ মল্লিক, নিখিলনাথ রায়, সতীশচন্দ্র মিত্র, রাধারমণ সাহা, কালীনাথ চৌধুরী প্রমুখ ।

৩৩. প্রশ্ন: স্থানীয় ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: স্থানীয় ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো— ১. কুমুদনাথ মল্লিকের ‘নদীয়া কাহিনি’ এবং ২. সতীশচন্দ্র মিত্রের ‘যশোহর-খুলনার ইতিহাস’

৩৪. প্রশ্ন: প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র কোনটি? এটি কার পরিচালনায় কবে মুক্তি পায়?

উত্তর: প্রথম ভারতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হলো ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ (নির্বাক) । এটি দাদাসাহেব ফালকের পরিচালনায় ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পায় ।

৩৫. প্রশ্ন: প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র কোনটি? এটি কার পরিচালনায় কবে মুক্তি পায়?

উত্তর: প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র হলো ‘বিল্বমঙ্গল’ (নির্বাক) । এটি জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পায় ।

৩৬. প্রশ্ন: ‘চলচ্চিত্রের ইতিহাসচর্চা’ করেছেন এমন কয়েকজন ব্যক্তির নাম লেখো।

উত্তর: চলচ্চিত্রের ইতিহাসচর্চা করেছেন এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হলেন— ঋত্বিক কুমার ঘটক, সত্যজিৎ রায়, তপন সিংহ, ফারহানা মিলি, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, অপূর্ব কুণ্ডু প্রমুখ। তাঁরা তাঁদের বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন।

৩৭. প্রশ্ন: চলচ্চিত্রের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: চলচ্চিত্রের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো— ১. ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘চলচ্চিত্র, মানুষ এবং আরও কিছু’ এবং ২. সত্যজিৎ রায়ের ‘একেই বলে শুটিং’ ও ‘বিষয় চলচ্চিত্র’

৩৮. প্রশ্ন: ছবির দৃশ্যশিল্প বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: ছবির দৃশ্যশিল্প বলতে মূলত দুই ধরনের ছবিকে বোঝানো হয়— এক ধরনের ছবি হলো শিল্পীর হাতে আঁকা ছবি (চিত্রকলা) এবং অন্য ধরনের হলো ক্যামেরায় তোলা আলোকচিত্র বা ফোটোগ্রাফি। এই দুটি মাধ্যমই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৩৯. প্রশ্ন: দৃশ্যশিল্প অর্থাৎ ছবি আঁকা ও ফোটোগ্রাফি নিয়ে ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য গবেষকের নাম লেখো।

উত্তর: দৃশ্যশিল্প অর্থাৎ ছবি আঁকা ও ফোটোগ্রাফি নিয়ে ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য গবেষক হলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, অশোক মিত্র, কবিতা সিং, গীতা কাপুর প্রমুখ।

৪০. প্রশ্ন: দৃশ্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: দৃশ্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো— ১. অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী’ এবং ২. বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের ‘চিত্রকথা’

যানবাহন ও যোগাযোগের ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

যানবাহন ও যোগাযোগের ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

৪১. প্রশ্ন: আধুনিক ইতিহাসচর্চায় যানবাহন ও যোগাযোগের ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী?

উত্তর: আধুনিক ইতিহাসচর্চায় যানবাহন ও যোগাযোগের ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, এর মাধ্যমে— ১. যানবাহন ও যোগাযোগের বিবর্তন সম্পর্কে জানা যায়। ২. এই বিবর্তন বিভিন্ন সমাজ ও সভ্যতাকে কতটা প্রভাবিত করেছে সে বিষয়ে জ্ঞানলাভ করা যায়।

৪২. প্রশ্ন: ভারতে রেলপথের প্রতিষ্ঠার দুটি প্রভাব উল্লেখ করো।

উত্তর: ভারতে রেলপথ প্রতিষ্ঠার দুটি প্রভাব হলো— ১. রেলপথের প্রসারের ফলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়, যা ঐক্য ও জাতীয়তাবোধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ২. রেলপথের মাধ্যমে ব্রিটিশরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিজেদের দেশে পাঠাতো এবং তৈরি পণ্য ভারতের বাজারে বিক্রি করত, যা ভারতের অর্থনৈতিক শোষণের একটি কারণ ছিল।

৪৩. প্রশ্ন: ব্রিটিশরা ভারতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির উদ্দেশ্যে কী কী ব্যবস্থা চালু করে?

উত্তর: ব্রিটিশরা ভারতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির উদ্দেশ্যে যেসব ব্যবস্থা চালু করেছিল, সেগুলি হলো— ১) রেলপথের প্রতিষ্ঠা , ২) ডাক-ব্যবস্থার উন্নতি এবং ৩) টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার প্রবর্তন প্রভৃতি।

৪৪. প্রশ্ন: যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চায় খ্যাতি অর্জন করেছেন এমন কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তর: যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চায় খ্যাতি অর্জন করেছেন এমন কয়েকজন গবেষক হলেন জন আর্মস্ট্রং, ইয়ান কের, সুনীল কুমার মুন্সি, নীতিন সিনহা, গৌতম চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

৪৫. প্রশ্ন: যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো— ১. ইয়ান কেরের ‘ইঞ্জিন্স অফ চেঞ্জ: দ্য রেলরোডস দ্যাট মেড ইন্ডিয়া’ (Engines of Change: The Railroads That Made India) এবং ২. সুনীল কুমার মুন্সির ‘জিওগ্রাফি অব ট্রান্সপোর্টেশন ইন ইস্টার্ন ইন্ডিয়া আন্ডার ব্রিটিশরাজ’ (Geography of Transportation in Eastern India under British Rule)।

শহরের ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

৪৬. প্রশ্ন: শহরের ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী?

উত্তর: শহরের ইতিহাসচর্চার প্রধান গুরুত্ব হলো, এই ধরনের ইতিহাসচর্চা থেকে— ১. শহরের স্থানীয় সমাজ, অর্থনীতি, শিল্পকলা প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায় । ২. শহরের প্রতিষ্ঠা ও বিবর্তনের ইতিহাস এবং তার স্থাপত্যরীতি ও নগরপরিকল্পনা সম্পর্কেও জানা যায় ।

৪৭. প্রশ্ন: শহরের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তর: শহরের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য গবেষক হলেন রাধাপ্রসাদ গুপ্ত, পূর্ণেন্দু পত্রী, নিখিল সরকার, রাধারমণ মিত্র, সৌমিত্র শ্রীমানী, নারায়ণী গুপ্ত প্রমুখ।

৪৮. প্রশ্ন: শহরের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: শহরের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো— ১. পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘কলকাতা সংক্রান্ত’ এবং ২. রাধারমণ মিত্রের ‘কলিকাতা দর্পণ’

সামরিক ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

সামরিক ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

৪৯. প্রশ্ন: সামরিক ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী?

উত্তর: সামরিক ইতিহাসচর্চার প্রধান গুরুত্ব হলো, এর দ্বারা— ১. সময়ের সঙ্গে যুদ্ধের বিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়। ২. যুদ্ধে কোনো শক্তির জয় বা পরাজয়ের ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়।

৫০. প্রশ্ন: সামরিক ইতিহাসচর্চা করেছেন এমন কয়েকজন গবেষকের নাম উল্লেখ করো।

উত্তর: সামরিক ইতিহাসচর্চা করেছেন এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য গবেষক হলেন যদুনাথ সরকার, সুরেন্দ্রনাথ সেন, রবার্ট আর্ম, সুবোধ ঘোষ, দীপ্তনীল রায়, কৌশিক রায় প্রমুখ।

৫১. প্রশ্ন: সামরিক ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: সামরিক ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো— ১. যদুনাথ সরকারের ‘মিলিটারি হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া’ (Military History of India) এবং ২. সুরেন্দ্রনাথ সেনের ‘মিলিটারি সিস্টেম অব দ্য মারাঠাস’ (Military System of the Marathas)

পরিবেশের ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

Chipko Movement Madhyamik History Chapter 1 Question Answer

৫২. প্রশ্ন: পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্ব কী?

উত্তর: পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্ব হলো— ১. মানবসভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে পরিবেশের ভূমিকা চিহ্নিত করে পরিবেশ সচেতনতা ও পরিবেশ সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। ২. পরিবেশের সংকটজনক পরিস্থিতি ও বিপর্যয় সম্পর্কে মানুষকে অবগত করা।

৫৩. প্রশ্ন: পরিবেশ রক্ষার দাবিতে ভারতে শুরু হওয়া দুটি আন্দোলনের উল্লেখ করো।

উত্তর: পরিবেশ রক্ষার দাবিতে ভারতে শুরু হওয়া দুটি উল্লেখযোগ্য আন্দোলন হলো— ১. চিপকো আন্দোলন (১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ) এবং ২. নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন (১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ)

৫৪. প্রশ্ন: পরিবেশের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তর: পরিবেশের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য গবেষক হলেন র‍্যাচেল কারসন, আলফ্রেড ক্রসবি, রিচার্ড গ্রোভ, ইরফান হাবিব, রামচন্দ্র গুহ প্রমুখ।

৫৫. প্রশ্ন: পরিবেশের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: পরিবেশের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো— ১. র‍্যাচেল কারসনের ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’ (Silent Spring) এবং ২. আলফ্রেড ক্রসবি-র ‘ইকোলজিক্যাল ইম্পিরিয়ালিজম’ (Ecological Imperialism)

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

৫৬. প্রশ্ন: বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী?

উত্তর: বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার প্রধান গুরুত্বগুলি হলো—১. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার বিবর্তনের ধারাটি অনুধাবন করা যায়। ২. সমকালীন আর্থসামাজিক ও অন্যান্য দিক প্রভাবিত হওয়ার মাত্রা বিচার করা যায়।

৫৭. প্রশ্ন: বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো।

উত্তর: বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো— ১. টমাস কুহনের ‘দ্য স্ট্রাকচার অব সায়েন্টিফিক রেভোলিউশনস’ (The Structure of Scientific Revolutions) এবং ২. আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ‘এ হিস্ট্রি অব হিন্দু কেমিস্ট্রি’ (A History of Hindu Chemistry)

History of Medicines

৫৮. প্রশ্ন: চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তর: চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য গবেষক হলেন দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, ডেভিড আর্নল্ড, পার্থসারথি চক্রবর্তী, তপন চক্রবর্তী প্রমুখ।

৫৯. প্রশ্ন: চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো।

উত্তর: চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো— ১. দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাবিজ্ঞান’ এবং ২. ডেভিড আর্নল্ড-এর ‘সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড মেডিসিন ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’ (Science, Technology and Medicine in Colonial India)।

নারী ইতিহাস: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

৬০. প্রশ্ন: নারী ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী?

উত্তর: নারী ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব হলো, এর দ্বারা— ১. ইতিহাসে নারীর ভূমিকা সম্পর্কে জানা যায়। ২. ইতিহাসে নারীর যথার্থ ভূমিকা ও অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে তাকে মর্যাদা দেওয়া হয়।

৬১. প্রশ্ন: আধুনিককালে নারী ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তর: আধুনিককালে নারী ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য গবেষক হলেন জোয়ান কেলি, গের্ডা লার্নার, জোয়ান স্কট, নীরা দেশাই, জেরাল্ডিন ফোর্বস প্রমুখ।

৬২. প্রশ্ন: নারীর ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: নারীর ইতিহাসচর্চা বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো— ১. জেরাল্ডিন ফোর্বসের ‘উইমেন ইন মডার্ন ইন্ডিয়া’ (Women in Modern India) এবং ২. জোয়ান কেলির ‘ডিড উইমেন হ্যাভ আ রেনেসাঁস?’ (Did Women have a Renaissance?)

৬৩. প্রশ্ন: ভারতের প্রথম শব ব্যবচ্ছেদকারী চিকিৎসক কে ছিলেন?

উত্তর: ভারতের প্রথম শব ব্যবচ্ছেদকারী চিকিৎসক ছিলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজের ছাত্র মধুসূদন গুপ্ত। তিনি ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে এই যুগান্তকারী কাজটি সম্পন্ন করেন।

৬৪. প্রশ্ন: ‘জেন্ডার অ্যান্ড দ্য পলিটিক্স অব হিস্ট্রি’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

উত্তর: ‘জেন্ডার অ্যান্ড দ্য পলিটিক্স অব হিস্ট্রি’ (Gender and the Politics of History) গ্রন্থটি রচনা করেন প্রখ্যাত নারী ইতিহাসবিদ জোয়ান স্কট

৬৫. প্রশ্ন: আধুনিক শিল্পের ইতিহাসচর্চার প্রধান কয়েকটি শাখা বা বিষয়ের নাম লেখো।

উত্তর: আধুনিক শিল্পের ইতিহাসচর্চার প্রধান কয়েকটি শাখা বা বিষয় হলো— ১. সংগীত ২. নৃত্য ৩. নাটক এবং ৪. চলচ্চিত্র

৬৬. প্রশ্ন: ‘ডিড উইমেন হ্যাভ আ রেনেসাঁস?’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

উত্তর: ‘ডিড উইমেন হ্যাভ আ রেনেসাঁস?’ (Did Women have a Renaissance?) গ্রন্থটি রচনা করেন বিখ্যাত নারীবাদী ইতিহাসবিদ জোয়ান কেলি

৬৭. প্রশ্ন: ‘ইকো-ফেমিনিজম’-এর প্রবক্তা কে?

উত্তর: ‘ইকো-ফেমিনিজম’ বা পরিবেশ-নারীবাদ নামক মতবাদের প্রবক্তা হলেন ফরাসি নারীবাদী চিন্তাবিদ ফ্রাঁসোয়া দোবান (Françoise d’Eaubonne)

৬৮. প্রশ্ন: সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে পালিত হয়?

উত্তর: ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ই মার্চ রাষ্ট্রসংঘ প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে, যা পরবর্তীকালে প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে।

৬৯. প্রশ্ন: ‘এ হিস্ট্রি অব হিন্দু কেমিস্ট্রি’ গ্রন্থটি কে লিখেছিলেন?

উত্তর: ‘এ হিস্ট্রি অব হিন্দু কেমিস্ট্রি’ (A History of Hindu Chemistry) গ্রন্থটি লিখেছিলেন বিশ্ববরেণ্য বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়

৭০. প্রশ্ন: রবীন্দ্রনাথ মণিপুরি নৃত্যকে কোথায় শেখানোর ব্যবস্থা করেন?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মণিপুরি নৃত্যকে শান্তিনিকেতনে শেখানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি এই নাচের ধারাকে অত্যন্ত পছন্দ করতেন এবং একে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।

৭১. প্রশ্ন: ‘দ্য একজোটিক ইন ওয়েস্টার্ন মিউজিক’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

উত্তর: ‘দ্য একজোটিক ইন ওয়েস্টার্ন মিউজিক’ (The Exotic in Western Music) গ্রন্থটি রচনা করেন জোনাথান বেলম্যান

৭২. প্রশ্ন: ‘বাঙালির বেশবাস, বিবর্তনের রূপরেখা’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

উত্তর: ‘বাঙালির বেশবাস, বিবর্তনের রূপরেখা’ গ্রন্থটি রচনা করেছেন পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস বিষয়ক গবেষক মলয় রায়

✒️ খ) বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (Analytical – প্রতিটি ৪ নম্বর)

১. প্রশ্ন: নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা বলতে কী বোঝায়? এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? 👥

উত্তর: ভূমিকা: বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে প্রচলিত রাজনৈতিক ও রাজা-কেন্দ্রিক ইতিহাসচর্চার বাইরে গিয়ে সমাজের সাধারণ মানুষকে নিয়ে যে নতুন ধারার ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে, তাই নতুন সামাজিক ইতিহাস নামে পরিচিত ।

বৈশিষ্ট্য:

নিম্নবর্গের প্রাধান্য: এই ইতিহাসচর্চায় সমাজের উচ্চবর্গের পরিবর্তে নিম্নবর্গের সাধারণ মানুষ (যেমন – কৃষক, শ্রমিক, নারী) এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আলোচনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় ।

History from below: এই ধারার ইতিহাসকে ‘History from below’ বা নীচ থেকে দেখা ইতিহাস বলা হয়, যেখানে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনাকে বিশ্লেষণ করা হয় ।

নতুন বিষয়বস্তু: এতে যুদ্ধ, রাজনীতি, রাজবংশের উত্থান-পতনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিক, যেমন – খেলাধুলা, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, শিল্পকলা, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ও আলোচনার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ।

নতুন উপাদান: এই ইতিহাসচর্চায় সরকারি নথিপত্রের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ডায়েরি, চিঠিপত্র, স্মৃতিকথা, লোকগাথার মতো উপাদানকেও গুরুত্ব দেওয়া হয় ।

উপসংহার: নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা ইতিহাসকে আরও समग्र (সার্বিক), বস্তুনিষ্ঠ এবং আকর্ষণীয় করে তুলেছে, যা সমাজের সকল স্তরের মানুষের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়।

২. প্রশ্ন: আধুনিক ইতিহাসচর্চায় খেলার ইতিহাসের গুরুত্ব আলোচনা করো। ⚽🏏

উত্তর: ভূমিকা: আধুনিক ইতিহাসচর্চায় খেলাধুলার ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। খেলাধুলা শুধুমাত্র অবসর বিনোদন বা শরীরচর্চার বিষয় নয়, এটি সমাজের গভীরে প্রোথিত এবং এর সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম।

গুরুত্ব:

সামাজিক প্রতিফলন: কোনো সমাজের খেলাধুলা থেকে সেই সমাজের মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি এবং নারী-পুরুষের সম্পর্ক সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় ।

জাতীয়তাবাদের প্রকাশ: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনেক সময় জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগকে উৎসাহিত করে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯১১ সালে মোহনবাগান ক্লাবের আই.এফ.এ. শিল্ড জয় ছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের এক বিরাট জাতীয়তাবাদী জয় ।

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক: খেলাধুলা বিভিন্ন দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন বা নষ্ট করতেও পারে। অলিম্পিকের মতো মঞ্চ বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।

সামাজিক পরিবর্তন: খেলাধুলা সামাজিক পরিবর্তনেও অনুঘটকের কাজ করতে পারে। যেমন, দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবিদ্বেষ প্রথার বিরুদ্ধে ক্রীড়াক্ষেত্রে বয়কট একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, খেলাধুলার ইতিহাস শুধুমাত্র খেলার মাঠের বিবরণ নয়, এটি বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

৩. প্রশ্ন: আধুনিক ইতিহাসচর্চায় খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসের গুরুত্ব কী? 🥣

উত্তর: ভূমিকা: আধুনিক নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস। মানুষের খাদ্যাভ্যাসের বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে একটি যুগের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় পাওয়া যায়।

গুরুত্ব:

অর্থনৈতিক অবস্থার সূচক: কোনো অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাস থেকে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা, কৃষি উৎপাদন এবং বাণিজ্য সম্পর্কে ধারণা করা যায় ।

সাংস্কৃতিক পরিচয় ও বিনিময়: খাদ্যাভ্যাস একটি নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর পরিচয় বহন করে । আবার, বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে আদান-প্রদানের ফলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটে, যেমন – পোর্তুগিজদের থেকে ভারতীয়দের আলুর ব্যবহার শেখা ।

ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি: খাদ্যাভ্যাসের ওপর ধর্মীয় বিশ্বাস ও সামাজিক রীতিনীতির গভীর প্রভাব থাকে। যেমন – পালযুগে বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে বাংলায় নিরামিষ খাবারের প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছিল ।

প্রযুক্তি ও পরিবেশ: রান্নার পদ্ধতি, মশলার ব্যবহার এবং খাদ্যের সহজলভ্যতা তৎকালীন প্রযুক্তি ও পরিবেশগত অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেয় ।

উপসংহার: খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস শুধুমাত্র রান্নার ইতিহাস নয়, বরং এটি একটি সমাজের সামগ্রিক জীবনযাত্রাকে বোঝার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

৪. প্রশ্ন: পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা কেন গুরুত্বপূর্ণ? 👕👗

উত্তর: ভূমিকা: পোশাক-পরিচ্ছদ শুধুমাত্র লজ্জা নিবারণের উপায় নয়, এটি একটি সমাজের সভ্যতা, সংস্কৃতি, রুচিবোধ এবং পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। আধুনিক ইতিহাসচর্চায় তাই পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে।

গুরুত্ব:

সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন: পোশাক-পরিচ্ছদের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক অবস্থা বোঝা যায় ।

সাংস্কৃতিক পরিচয়: বিভিন্ন জাতি বা জনগোষ্ঠীর পোশাক তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করে। আবার, জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর প্রবর্তিত ‘ব্রাহ্মিকা’ শাড়ি পরার রীতি বাঙালি নারীর আধুনিক হয়ে ওঠার প্রতীক ছিল ।

রাজনৈতিক প্রতীক: পোশাক অনেক সময় রাজনৈতিক প্রতিবাদের ভাষা হয়ে ওঠে। যেমন – মহাত্মা গান্ধীর হাঁটু পর্যন্ত ধুতি পরা এবং খাদি বস্ত্রের ব্যবহার ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতীক ।

লিঙ্গবৈষম্য: পোশাকের মাধ্যমে সমাজে নারী-পুরুষের ভূমিকার পার্থক্য এবং লিঙ্গবৈষম্যের দিকটিও বোঝা যায়।

উপসংহার: পোশাকের ইতিহাস শুধুমাত্র ফ্যাশনের ইতিহাস নয়, এটি একটি সমাজের মানসিকতা, মূল্যবোধ ও পরিবর্তনের ইতিহাসকে বোঝার এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

৫. প্রশ্ন: আধুনিক ইতিহাসচর্চায় শিল্পকলার (সংগীত, নৃত্য, নাটক, চলচ্চিত্র) গুরুত্ব আলোচনা করো। 🎨🎭

উত্তর: ভূমিকা: আধুনিক ইতিহাসচর্চায় শিল্পকলার বিভিন্ন শাখা, যেমন – সংগীত, নৃত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। এগুলির মাধ্যমে একটি যুগের মানুষের অনুভূতি, রুচিবোধ, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।

গুরুত্ব:

সংগীত: সংগীতের মাধ্যমে একটি যুগের মানুষের ভক্তি, প্রেম, আনন্দ, বেদনা এবং জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রকাশ ঘটে। যেমন – রবীন্দ্রনাথের ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি স্বদেশী আন্দোলনের সময় জাতীয়তাবোধের সঞ্চার করেছিল ।

নৃত্য: নৃত্যকলার মাধ্যমে কোনো সমাজের ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক রীতিনীতি এবং সাংস্কৃতিক বিবর্তনের পরিচয় পাওয়া যায়। উদয়শঙ্করের মতো শিল্পীরা ভারতীয় নৃত্যকলাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন ।

নাটক: নাটক হলো সমাজের দর্পণ। দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটক নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’ নাটক মন্বন্তরের ভয়াবহতার বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ছিল ।

চলচ্চিত্র: চলচ্চিত্র সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির এক জীবন্ত দলিল। সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ বা ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ তৎকালীন বাংলার সামাজিক বাস্তবতাকে বিশ্বস্তভাবে তুলে ধরেছিল ।

উপসংহার: শিল্পকলার এই বিভিন্ন মাধ্যমগুলি শুধুমাত্র বিনোদনের উপকরণ নয়, এগুলি ইতিহাসের জীবন্ত উপাদান যা একটি যুগের আত্মাকে বুঝতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন ৬: আধুনিক ইতিহাসচর্চায় স্থানীয় ইতিহাসের গুরুত্ব কী? 🏘️

উত্তর: ভূমিকা: আধুনিক ইতিহাসচর্চায় কোনো একটি সুনির্দিষ্ট ও অপেক্ষাকৃত ছোটো অঞ্চলের (যেমন – গ্রাম, শহর, জেলা) নিজস্ব ইতিহাস নিয়ে আলোচনাকে স্থানীয় ইতিহাসচর্চা বলা হয় । জাতীয় ইতিহাসকে সঠিকভাবে বোঝার জন্য স্থানীয় ইতিহাসচর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গুরুত্ব:

  • জাতীয় ইতিহাসের ভিত্তি: কোনো দেশের সামগ্রিক বা জাতীয় ইতিহাস রচনার মূল ভিত্তিই হলো বিভিন্ন স্থানীয় বা আঞ্চলিক ইতিহাস। স্থানীয় ইতিহাসচর্চার ওপর ভিত্তি করেই জাতীয় ইতিহাস রচনার পটভূমি গড়ে ওঠে ।
  • সম্পূর্ণ ইতিহাস রচনা: স্থানীয় ইতিহাসচর্চা ছাড়া জাতীয় ইতিহাসের আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন স্থান, অঞ্চল বা সম্প্রদায়ের ইতিহাস একত্রিত করেই কোনো দেশের পূর্ণাঙ্গ জাতীয় ইতিহাস গড়ে ওঠে।
  • ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জানা: স্থানীয় ইতিহাসের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রাচীনত্ব এবং আর্থসামাজিক বিবর্তন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা যায় ।
  • জাতীয়তাবোধের উন্মেষ: স্থানীয় ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে ওই অঞ্চলের অধিবাসীরা নিজেদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হয় এবং জাতীয়তাবাদী মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ হয় ।

উপসংহার: জাতীয় ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে স্থানীয় ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই বাংলায় কুমুদনাথ মল্লিকের ‘নদীয়া কাহিনী’ বা সতীশচন্দ্র মিত্রের ‘যশোহর-খুলনার ইতিহাস’-এর মতো গ্রন্থগুলি অত্যন্ত মূল্যবান

প্রশ্ন ৭: আধুনিক ইতিহাসচর্চায় শহরের ইতিহাসচর্চা গুরুত্বপূর্ণ কেন? 🏙️

উত্তর: ভূমিকা: স্থানীয় ইতিহাসচর্চার মতোই আধুনিক ইতিহাসচর্চায় শহরের ইতিহাসচর্চা একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। কোনো শহরের উদ্ভব, বিকাশ ও বিবর্তনের ইতিহাস শুধুমাত্র সেই শহরের কথাই বলে না, তা বৃহত্তর জাতীয় ইতিহাসেরও অংশ হয়ে ওঠে।

গুরুত্ব:

  • নগরায়ণের ধারা বোঝা: শহরের ইতিহাস থেকে তৎকালীন সময়ের নগরায়ণের ধারা, তার কারণ এবং সমাজের ওপর তার প্রভাব সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় ।
  • সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্ব: শহরগুলি সাধারণত কোনো বৃহৎ ভূখণ্ডের প্রাণকেন্দ্র হয়। তাই শহরের ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে সেই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা, রীতিনীতি, সংস্কৃতি এবং চিন্তা-চেতনার বিবর্তন বোঝা যায় ।
  • জাতীয়তাবোধের উন্মেষ: শহরের ইতিহাস সেই শহরের অধিবাসীদের মনে নিজেদের শহরের প্রাচীনত্ব ও ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ জাগিয়ে তোলে এবং তাদের মধ্যে একাত্মতা ও জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটায় ।
  • ঐতিহাসিক উপাদান: শহরের ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য জাতীয় ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। যেমন, বাংলার নবজাগরণ আলোচনায় কলকাতা শহরের ইতিহাস অপরিহার্য ।

উপসংহার: সামগ্রিকভাবে, শহরের ইতিহাসচর্চা জাতীয় ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। এক্ষেত্রে রাধারমণ মিত্রের ‘কলিকাতা দর্পণ’ একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ

প্রশ্ন ৮: পরিবেশের ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী? 🌳

উত্তর: ভূমিকা: আধুনিক ইতিহাসচর্চার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো পরিবেশের ইতিহাস। মানবসভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, তাই এই ইতিহাসচর্চা আজ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ।

গুরুত্ব:

  • মানব-প্রকৃতি সম্পর্ক: পরিবেশের ইতিহাসচর্চা মানবসভ্যতার সঙ্গে পরিবেশের পারস্পরিক সম্পর্ককে তুলে ধরে। এটি দেখায় কীভাবে মানুষ পরিবেশকে প্রভাবিত করেছে এবং পরিবেশও কীভাবে মানুষের জীবনযাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে ।
  • পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি: এই ইতিহাসচর্চা পরিবেশের সংকটজনক পরিস্থিতি, দূষণের ভয়াবহতা এবং তার কারণগুলি সম্পর্কে মানুষকে অবগত করে। এর ফলে মানুষের মধ্যে পরিবেশ রক্ষার তাগিদ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি পায় ।
  • আন্দোলনের প্রেক্ষাপট: পরিবেশ রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন সময়ে যে সমস্ত আন্দোলন (যেমন – চিপকো আন্দোলন , নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন ) গড়ে উঠেছে, তার প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব বুঝতে পরিবেশের ইতিহাসচর্চা সাহায্য করে।
  • সরকারি নীতি নির্ধারণ: পরিবেশের ইতিহাস পাঠ করে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত নীতি নির্ধারণ করতে পারে।

উপসংহার: মানবসভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা অপরিহার্য। তাই পরিবেশের ইতিহাসচর্চা বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে

প্রশ্ন ৯: বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী? 🔬🩺

উত্তর: ভূমিকা: আধুনিক ইতিহাসচর্চায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এর মাধ্যমে মানবসভ্যতার অগ্রগতির একটি স্পষ্ট রূপরেখা পাওয়া যায়।

গুরুত্ব:

  • সভ্যতার অগ্রগতি অনুধাবন: বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে মানবসভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারা এবং তার অগ্রগতির বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে জানা যায়। প্রাচীনকালে চাকা বা আগুনের আবিষ্কার থেকে শুরু করে আজকের দিনের ইন্টারনেট—সবই এই ইতিহাসের অন্তর্গত ।
  • নতুন আবিষ্কারের প্রেক্ষাপট: এই ইতিহাসচর্চা থেকে জানা যায় কোন পরিস্থিতিতে, কোন প্রয়োজনে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে এবং সেগুলি কীভাবে সমাজের অন্যান্য দিককে প্রভাবিত করেছে ।
  • কুসংস্কার দূরীকরণ: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাস পাঠ করলে মানুষের মন থেকে অনেক কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দূর হয় এবং বিজ্ঞানমনস্কতা বৃদ্ধি পায়।
  • সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন: এর মাধ্যমে ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন এবং তার ফলে যে নতুন প্রযুক্তি ও চিন্তাধারার উদ্ভব ঘটেছিল, তা জানা যায়।

উপসংহার: মানবসভ্যতার সামগ্রিক ইতিহাস রচনার জন্য বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চা অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে

প্রশ্ন ১০: নারী ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী? 👩‍⚖️💪

উত্তর: ভূমিকা: আধুনিক ইতিহাসচর্চার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো নারী ইতিহাস। ইতিহাসে এতদিন ধরে নারীদের ভূমিকা উপেক্ষিত হলেও, বর্তমানে এই নতুন ধারার চর্চা ইতিহাসকে আরও সম্পূর্ণ করে তুলেছে ।

গুরুত্ব:

  • ইতিহাসে নারীর ভূমিকা জানা: নারী ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে যুগে যুগে ইতিহাসে নারীর অসামান্য অবদান (যেমন – রাজনৈতিক ক্ষমতায়, সামাজিক আন্দোলনে, স্বাধীনতা সংগ্রামে) সম্পর্কে জানা যায় ।
  • নারীর বঞ্চনার ইতিহাস: পুরুষের পাশাপাশি নারীদের নেতৃত্ব, অধিকার, দাবিদাওয়া, আন্দোলন, মর্যাদা ও শিক্ষাসংস্কৃতির মতো বিষয়গুলি যে উপেক্ষিত হতো, সেই বঞ্চনার ইতিহাসও এই চর্চার মাধ্যমে জানা যায় ।
  • নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা: নারী ইতিহাসচর্চা সমাজে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও লিঙ্গসাম্য প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এর ফলে নারীরা তাদের নিজেদের সামাজিক অবস্থার উন্নতিতে আরও বেশি সচেতন ও সক্রিয় হয়।
  • ইতিহাসকে সম্পূর্ণ করা: নারীদের ভূমিকাকে বাদ দিয়ে কোনো দেশের ইতিহাসই সম্পূর্ণ হতে পারে না। তাই নারী ইতিহাসচর্চা সামগ্রিক ইতিহাসকে আরও বস্তুনিষ্ঠ ও পূর্ণাঙ্গ করে তোলে ।

উপসংহার: ১৯৭০-এর দশক থেকে শুরু হওয়া এই নতুন ইতিহাসচর্চার ধারাটি ইতিহাসকে লিঙ্গবৈষম্য মুক্ত করে এক নতুন দিকে চালিত করেছে

প্রশ্ন ১১: আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় ফোটোগ্রাফির ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করো। 📸

উত্তর: ভূমিকা: ক্যামেরার সাহায্যে কোনো ঘটনা বা বিষয়ের ছবি তোলার প্রক্রিয়া সাধারণভাবে ফোটোগ্রাফি বা আলোকচিত্র নামে পরিচিত । আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফির ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় । ফোটোগ্রাফির ব্যবহার:

  • তথ্য প্রদান: ক্যামেরায় তোলা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার ছবি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে । যেমন, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের বিভিন্ন ছবি মহাবিদ্রোহের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয় ।
  • তথ্যকে সমর্থন: ফোটোগ্রাফ বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্যকে আরও জোরালো করে তোলে । যেমন, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় যে ভয়াবহ দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল, তার বিভিন্ন ছবি সেই দাঙ্গার ভয়াবহতাকে আরও জোরালোভাবে প্রমাণ করে ।
  • তথ্যের যথার্থতা নির্ণয়: কোনো ঘটনা সম্পর্কে লোকমুখে গুজব বা ভ্রান্ত তথ্য থাকলেও, সেই ঘটনার ফোটোগ্রাফ থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া যেতে পারে । যেমন, দেশভাগের (১৯৪৭ খ্রি.) সময়কার উদ্বাস্তুধারার ছবি দেশভাগের ভয়াবহতাকে প্রমাণ করে ।
  • সাবধানতা: তবে ফোটোগ্রাফ ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হয়, কারণ অনেক সময় ফোটোগ্রাফারের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি বা ছবি তোলার কোণের কারণে তা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে বা ঘটনার প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে ব্যর্থ হতে পারে ।

উপসংহার: কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, ফোটোগ্রাফি আধুনিক ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য উপাদান হয়ে উঠেছে ।

প্রশ্ন ১২: দৃশ্যশিল্পের ক্ষেত্রে চিত্রকলা ও ফোটোগ্রাফির ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো। 🎨🖼️

উত্তর: ভূমিকা: দৃশ্যশিল্পের অন্তর্গত দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা হলো চিত্রকলা বা ছবি আঁকা এবং ফোটোগ্রাফি বা আলোকচিত্র । শিল্পীরা রং-তুলির সহায়তায় ছবি আঁকেন, আর ফোটোগ্রাফার ক্যামেরার সাহায্যে ছবি তোলেন ।

ইতিহাসচর্চায় গুরুত্ব:

  • চিত্রকলার ইতিহাসচর্চা: প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই ছবি আঁকার প্রচলন রয়েছে। চিত্রকররা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমকালীন বিষয়ের ছবি আঁকেন, যা থেকে ইতিহাসের নানা উপাদান পাওয়া যায় । যেমন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি স্বদেশি আন্দোলনের সময় জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছিল ।
  • ফোটোগ্রাফির ইতিহাসচর্চা: ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে ক্যামেরা আবিষ্কারের পর থেকে ফোটোগ্রাফি চর্চা জনপ্রিয়তা লাভ করে । ফোটোগ্রাফাররা ক্যামেরার সাহায্যে কোনো ঘটনার যথার্থ ছবি তোলেন, যা পরবর্তীকালে ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজে লাগে । ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহের ছবি বা দেশভাগের ছবি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
  • তুলনা: চিত্রকলায় শিল্পীর কল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব থাকে, কিন্তু ফোটোগ্রাফি সাধারণত ঘটনার বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। তাই ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফিকে অনেক সময় বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করা হয়।

উপসংহার: আঁকা ছবি ও ফোটোগ্রাফি—দুটিই আধুনিক ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তবে উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফি অনেক বেশি জীবন্ত ও প্রাসঙ্গিক ।

প্রশ্ন ১৩: সামরিক ইতিহাস ও এই বিষয়ে ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো। ⚔️

উত্তর: ভূমিকা: প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত সভ্যতা, রাষ্ট্র ও রাজনীতির ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক উপাদান ছিল সামরিক শক্তি । যুদ্ধের জন্য সামরিক শক্তি অপরিহার্য ছিল।

বিষয়বস্তু:

  • ধারাবাহিক পরিবর্তন: প্রয়োজনের তাগিদে প্রতিটি দেশ, জাতি ও সভ্যতায় সামরিক কাঠামো, যুদ্ধাস্ত্র প্রভৃতির ধারাবাহিক পরিবর্তন ঘটেছে ।
  • সামরিক ইতিহাসচর্চার প্রসার: উনিশ শতক পর্যন্ত যুদ্ধ-সংক্রান্ত আলোচনা যুদ্ধের কারণ ও ফলাফলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানকালে এই ধারার পরিবর্তন ঘটেছে । বর্তমানে যুদ্ধাস্ত্র, সামরিক সজ্জা, রণকৌশল, সামরিক পোশাক প্রভৃতি খুঁটিনাটি বিষয়ও ইতিহাসচর্চার মধ্যে প্রবেশ করেছে ।
  • ভারতে সামরিক ইতিহাসচর্চা: ভারতে বিগত শতকে সামরিক ইতিহাসচর্চা শুরু হয় । ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার, সুরেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা করেছেন । এ ছাড়া রবার্ট আর্ম, সুবোধ ঘোষ, দীপ্তনীল রায়, নিখিলেশ ভট্টাচার্য প্রমুখ এবিষয়ে আলোচনা করেছেন ।

উপসংহার: রাষ্ট্র তার সামরিক শক্তির দ্বারা যুদ্ধবিগ্রহ, সাম্রাজ্যবিস্তার প্রভৃতির মাধ্যমে ইতিহাসের ঘটনাবলিকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে । তাই সামাজিক ইতিহাসচর্চায় সামরিক ইতিহাসচর্চা আজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ।

প্রশ্ন ১৪: পরিবেশের ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো। 🌳

উত্তর: ভূমিকা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত পরিবেশ নিয়ে মানুষের ভাবনাচিন্তা ছিল যথেষ্ট কম । কিন্তু মানুষ যেভাবে পরিবেশের ধারাবাহিক ক্ষতি করে চলেছে তাতে মানবসভ্যতার অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে পড়েছে ।

বিষয়বস্তু:

  • আন্দোলন: পরিবেশের ধ্বংসসাধন ও দূষণের সম্পর্কে মানুষ ক্রমাগত সচেতন হয়ে উঠেছে । শুরু হয়েছে পরিবেশবাদী নানা আন্দোলন। ভারতে চিপকো আন্দোলন, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন, তেহরি-গাড়োয়াল আন্দোলন প্রভৃতি পরিবেশবাদী আন্দোলন যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ।
  • ইউরোপে পরিবেশের ইতিহাসচর্চা: সাম্প্রতিককালে ইউরোপে পরিবেশের ইতিহাসচর্চার যথেষ্ট প্রসার ঘটেছে । এই বিষয়ে ইউরোপের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্ম হল র‍্যাচেল কারসন রচিত ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’, আলফ্রেড ক্রসবি রচিত ‘ইকোলজিক্যাল ইম্পিরিয়ালিজম’, রিচার্ড গ্রোভ রচিত ‘গ্রিন ইম্পিরিয়ালিজম’ প্রভৃতি ।
  • ভারতে ও বাংলায় পরিবেশের ইতিহাসচর্চা: পরিবেশের ইতিহাস নিয়ে সাম্প্রতিককালে ভারতে এবং বাংলায়ও যথেষ্ট চর্চা হচ্ছে। ইরফান হাবিব, ড. মণীষ প্রধান, সুধাংশু পাত্র, অশোক কুমার বসু, তরুণ সরকার, অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, শমিত কর, সাহিদা বেগ এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন ।

উপসংহার: মানবসভ্যতার সমস্ত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পরিবেশ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাই পরিবেশের ইতিহাসচর্চার বিকাশ ও অগ্রগতি বর্তমানে বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে ।

প্রশ্ন ১৫: নারী ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন ধারাগুলি আলোচনা করো। 👩‍🏫

উত্তর: ভূমিকা: ইতিহাসের বিষয়বস্তু সমগ্র মানবজাতি, যার অর্ধেক অংশ হল নারী । অথচ বিগত শতাব্দীতেও ইতিহাসচর্চায় নারীজাতিকে পুরুষের সমান গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হত না । ইতিহাসে নারী কী ভূমিকা পালন করেছে তা নিয়ে বর্তমানকালে চর্চা শুরু হয়েছে। এই চর্চাই হল নারী ইতিহাস ।

ধারা:

  • ইতিহাসে নারীর ভূমিকা: যুগে যুগে ইতিহাসে নারীর অসামান্য অবদান রয়েছে । নেফারতিতি, ক্লিওপেট্রা, রাজিয়া, নূরজাহান, দুর্গাবতী প্রমুখ নারী নিজের যোগ্যতার দ্বারা প্রাচীন ও মধ্যযুগে রাজনৈতিক ক্ষমতার অসীম আধারে পরিণত হয়েছিলেন ।
  • ইতিহাসে নারীর বঞ্চনা: ইতিহাসের আলোচনায় পুরুষের আন্দোলন, যুদ্ধ, রাজনীতি, কূটনীতি প্রভৃতি গুরুত্ব পেলেও নারীদের নেতৃত্ব, অধিকার, দাবিদাওয়া, আন্দোলন, মর্যাদা, শিক্ষাসংস্কৃতি প্রভৃতির যথেষ্ট আলোচনা ইতিহাসে করা হত না ।
  • নারী ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত: ইতিহাসে নারীদের ভূমিকা নিয়ে আধুনিককালে গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটছে এবং পুরুষের সঙ্গে নারী ইতিহাসের চর্চাও গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে । ১৯৭০-এর দশক থেকে নারী ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত ঘটেছে ।

উপসংহার: নারীদের ভূমিকাকে বাদ দিয়ে ইতিহাসচর্চা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই বর্তমান যুগের ইতিহাসচর্চায় নারী ইতিহাসচর্চা অবশ্যই অপরিহার্য ।

প্রশ্ন ১৬: টীকা লেখো: স্থানীয় ইতিহাসচর্চা। 🏘️

উত্তর: ভূমিকা: জাতি, দেশ বা মহাদেশের অতীত ঘটনাবলির আলোচনা ও বিশ্লেষণ বিগত শতকেও ইতিহাসচর্চার প্রচলিত ও স্বীকৃত প্রথা ছিল । দেশ বা জাতির অভ্যন্তরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্থানীয় অঞ্চলের ইতিহাসচর্চা তখন বিশেষ গুরুত্ব পেত না ।

বিষয়বস্তু:

  • স্থানীয় ইতিহাসের গুরুত্ব: ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন স্থান, অঞ্চল বা সম্প্রদায়ের ইতিহাস একত্রিত হয়ে কোনো দেশের জাতীয় ইতিহাস গড়ে ওঠে । তাই বিংশ শতকে স্থানীয় ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ।
  • স্থানীয় ইতিহাসের বিষয়: বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্থানীয় ইতিহাসের চর্চা হয়ে থাকে । স্থানীয় অঞ্চলের আর্থসামাজিক বিবর্তন, শিল্প-স্থাপত্য, লোকসংস্কৃতি, স্থানীয় শাসকের ইতিবৃত্ত প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় স্থানীয় ইতিহাসের আলোচনায় উঠে আসে ।
  • জেলাস্তরের ইতিহাসচর্চা: স্থানীয় ইতিহাসচর্চার একটি উল্লেখযোগ্য ধারা হল জেলাস্তরের ইতিহাসচর্চা। বাংলায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গবেষক এই বিষয়ে চর্চা করছেন ।

উপসংহার: বিভিন্ন স্থানের স্থানীয় বা আঞ্চলিক ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে কোনো দেশের জাতীয় ইতিহাস রচিত হয় । তাই স্থানীয় ইতিহাসচর্চা ছাড়া জাতীয় ইতিহাসের চর্চা করা খুবই কঠিন ।

প্রশ্ন ১৭: টীকা লেখো: শহরের ইতিহাস। 🏙️

উত্তর: ভূমিকা: কোনো ক্ষুদ্র ও জনবিরল গ্রাম সময়ের ধারা বেয়ে কোনো একসময়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরে পরিণত হয়ে ওঠে । তাই গ্রাম থেকে শহরের উদ্ভব, বিকাশ ও বিবর্তনের একটি ইতিহাস থাকে ।

বিষয়বস্তু:

  • শহরের ইতিহাসের গুরুত্ব: স্থানীয় ইতিহাসচর্চার মতো শহরের ইতিহাসচর্চাও অনেকটাই ক্ষুদ্র অঞ্চল নিয়ে হয়ে থাকে । কিন্তু শহরগুলি কোনো বৃহৎ ভূখণ্ডের প্রাণকেন্দ্র হয় ওঠায় দেশ বা জাতির ইতিহাসে শহরের ইতিহাসচর্চার বিশেষ গুরুত্ব থাকে । যেমন-বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসচর্চায় কলকাতা শহরের উদ্ভব ও বিকাশের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে ।
  • শহরের ইতিহাসের বিষয়: শহরের ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হল শহরের আর্থসামাজিক অবস্থা, রাজনৈতিক চর্চা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, স্থাপত্য-ভাস্কর্যের উন্নতি, শিল্প-সংস্কৃতির ধারা, ধর্মের প্রভাব, নগরায়ণ প্রক্রিয়া প্রভৃতি ।
  • ইউরোপে শহরের ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত: বিংশ শতকের প্রথমার্ধে শহরের ইতিহাসচর্চার প্রচলন থাকলেও এই বিষয়ে ইতিহাসচর্চায় গতি আসে ১৯৭০-এর দশকে । এই সময়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিফেন থার্নস্টর্মের নেতৃত্বে শহরের ইতিহাসচর্চার ধারাটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ।

উপসংহার: শহরের ইতিহাসচর্চা আজ সামগ্রিক ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মূলত শহরের প্রকৃতি আলোচনাই এই ইতিহাসচর্চার মূল বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

প্রশ্ন ১৮: টীকা লেখো: অ্যানাল স্কুল।

উত্তর: ভূমিকা: ‘অ্যানাল স্কুল’ হল ফ্রান্সের একটি পত্রিকাগোষ্ঠী । মার্ক ব্লখ ও লুসিয়েন ফেবর-এর উদ্যোগে ‘আনাল্স অব ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল হিস্ট্রি’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে এই গোষ্ঠী গড়ে ওঠে ।

বিষয়বস্তু:

  • এই গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চায় সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাধারণ মানুষ, পরিবার, মনস্তত্ব প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় স্থান পেয়েছে ।
  • ফ্রান্সের এই অ্যানাল পত্রিকাগোষ্ঠী নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ।
  • এই গোষ্ঠীর ফার্নান্দ ব্রদেল, লাদুরি প্রমুখ সাধারণ মানুষের পরিসংখ্যান, পরিবার, মনস্তত্ব, সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি প্রভৃতি ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করেছেন ।
  • ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মার্ক ব্লখ ও লুসিয়েন ফেবর ‘অ্যানালস অব ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল হিস্ট্রি’ নামে পত্রিকার প্রকাশ করেন ।

উপসংহার: নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চায় ইতিহাসের বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না । মার্ক ব্লখ, লুসিয়েন ফেবর প্রমুখ এই কাজে যে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা আজকের দিনে আরও যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে ।

প্রশ্ন ১৯: টীকা লেখো: নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা। 🧑‍🌾

উত্তর: ভূমিকা: ১৯৮০-র দশক থেকে ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন দেশের গবেষকের উদ্যোগে জাতি, শ্রেণি, লিঙ্গ, ধর্ম প্রভৃতি নির্বিশেষে নিম্নবর্গের মানুষদের নিয়ে ইতিহাসচর্চা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধারা নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বা সাবলটার্ন স্টাডিজ নামে পরিচিত । বিষয়বস্তু:

  • আলোচনায় নিম্নবর্গীয়দের প্রাধান্য: গত শতাব্দীর ৯-এর দশক থেকে ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়ার সাবলটার্ন বা নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার মধ্য দিয়ে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে । জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে সমাজের নিম্নস্তরের মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে এই ইতিহাসচর্চা এগিয়ে চলেছে ।
  • ভারতের ঐতিহাসিকদের ভূমিকা: ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ১৯৮০-র দশক থেকে নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা (সাবলটার্ন স্টাডিজ) ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । রণজিৎ গুহ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে, শাহিদ আমিন, সুমিত সরকার, দীপেশ চক্রবর্তী, গৌতম ভদ্র প্রমুখ ঐতিহাসিক জাতিধর্মনির্বিশেষে সমাজের নিম্নস্তরের মানুষের ইতিহাসচর্চা করে নিম্নবর্গের ইতিহাসকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন ।

উপসংহার: বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে যে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার সূচনা হয় তা ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে এক নব দিগন্তের সূচনা করে । এর ফলে ইতিহাসচর্চার নতুন নতুন উৎসমুখ খুলে যায়, যা প্রকৃত ইতিহাসচর্চাকে সার্থক করে তোলে ।

প্রশ্ন ২০: টীকা লেখো: সামরিক ইতিহাসচর্চা। ⚔️

উত্তর: ভূমিকা: প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত সভ্যতা, রাষ্ট্র ও রাজনীতির ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক উপাদান ছিল সামরিক শক্তি । যুদ্ধের জন্য সামরিক শক্তি অপরিহার্য ছিল।

বিষয়বস্তু:

  • ধারাবাহিক পরিবর্তন: প্রয়োজনের তাগিদে প্রতিটি দেশ, জাতি ও সভ্যতায় সামরিক কাঠামো, যুদ্ধাস্ত্র প্রভৃতির ধারাবাহিক পরিবর্তন ঘটেছে ।
  • সামরিক ইতিহাসচর্চার প্রসার: উনিশ শতক পর্যন্ত যুদ্ধ-সংক্রান্ত আলোচনা যুদ্ধের কারণ ও ফলাফলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানকালে এই ধারার পরিবর্তন ঘটেছে । বর্তমানে যুদ্ধাস্ত্র, সামরিক সজ্জা, রণকৌশল, সামরিক পোশাক প্রভৃতি খুঁটিনাটি বিষয়ও ইতিহাসচর্চার মধ্যে প্রবেশ করেছে ।
  • ইউরোপে সামরিক ইতিহাসচর্চা: বিংশ শতকে ইউরোপে সামরিক ইতিহাসচর্চার প্রসার ঘটে । বার্নেট, কোরেলি, শেলফোর্ড বিডওয়েল, জন টেরাইন প্রমুখ প্রাচীন ও আধুনিক যুদ্ধবিদ্যার তুলনামূলক গবেষণা করেছেন ।
  • ভারতে সামরিক ইতিহাসচর্চা: ভারতে বিগত শতকে সামরিক ইতিহাসচর্চা শুরু হয় । ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার, সুরেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা করেছেন ।

উপসংহার: রাষ্ট্র তার সামরিক শক্তির দ্বারা যুদ্ধবিগ্রহ, সাম্রাজ্যবিস্তার প্রভৃতির মাধ্যমে ইতিহাসের ঘটনাবলিকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে । তাই সামাজিক ইতিহাসচর্চায় সামরিক ইতিহাসচর্চা আজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ।

প্রশ্ন ২১: টীকা লেখো: দৃশ্যশিল্পের ইতিহাস। 🖼️

উত্তর: ভূমিকা: দৃশ্যশিল্পের অন্তর্গত চিত্রশিল্পের দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা হল চিত্রকলা বা ছবি আঁকা এবং ফোটোগ্রাফি । শিল্পীরা রং-তুলির সহায়তায় কোনো দৃশ্য বা বিষয়ের ছবি আঁকেন, আর ফোটোগ্রাফার তাঁর ক্যামেরার সাহায্যে কোনো দৃশ্যের ছবি তোলেন ।

বিষয়বস্তু:

  • ছবি আঁকা: মানবসমাজে প্রাগৈতিহাসিক যুগেই ছবি আঁকার সূত্রপাত ঘটে । চিত্রকররা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমকালীন কোনো বিষয়ের ছবি এঁকে থাকেন । তবে সেই ছবিতে শিল্পীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব পড়লেও ছবির বিষয়বস্তু যে তথ্যনিষ্ঠ হয়ে থাকে, তা পণ্ডিতরা স্বীকার করেন ।
  • চিত্রকলার ইতিহাসচর্চা: বর্তমানে বিভিন্ন পণ্ডিত চিত্রকলার ইতিহাসচর্চা করে চলেছেন । এই চর্চার ক্ষেত্রে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণাকার্য হল অশোক মিত্র রচিত ‘ভারতের চিত্রকলা’, ড. নীলিমা আফরিন রচিত ‘বাংলাদেশের শিল্পকলার উৎস সন্ধান’, সৈয়দ লুৎফল হক রচিত ‘চিত্রকলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ প্রভৃতি ।
  • গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস হিসেবে ফোটোগ্রাফি: ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার ওয়ালকট ক্যামেরা আবিষ্কারের পর থেকে ক্যামেরার সাহায্যে ছবি তোলা অর্থাৎ ফোটোগ্রাফি চর্চার বিষয়টি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে । সাধারণ ক্যামেরায় সাদা-কালো ও রঙিন ছবির যুগ পেরিয়ে বর্তমানে ডিজিট্যাল ক্যামেরায় উন্নতমানের ছবি তোলা সম্ভব হচ্ছে ।

উপসংহার: ইতিহাসের উপাদান হিসেবে আঁকা ছবি ও ফোটোগ্রাফ-দুটিই ইতিহাসচর্চার কাজে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । তবে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফ অনেকটাই জীবন্ত, এবং আধুনিক ইতিহাসচর্চায় এর প্রাসঙ্গিকতাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

প্রশ্ন ২২: যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো। 🚂

উত্তর: ভূমিকা: যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রাচীনকাল থেকেই সভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আসছে । প্রাচীনকালে চাকার আবিষ্কার থেকে শুরু করে হাল আমলের ইনটারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন এক নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া । এই ব্যবস্থা বিভিন্ন দেশের ইতিহাসকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে ।

বিষয়বস্তু:

  • ইউরোপে প্রভাব: আধুনিক যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ইউরোপের ইতিহাসকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছে । জাতীয় ঐক্য বৃদ্ধি, শিল্পবিপ্লব প্রভৃতি ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম ।
  • ভারতে প্রভাব: আধুনিক যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষ করে ভারতের রেল, সড়ক, ডাক প্রভৃতি ব্যবস্থা দেশের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও ঐক্য বৃদ্ধি করে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটিয়েছে ।
  • অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা: সাম্প্রতিককালে ইনটারনেট ব্যবস্থা সমগ্র বিশ্বে নিমেষে যোগাযোগ স্থাপন করার সুযোগ করে দিয়েছে । ফলে আজ সমগ্র বিশ্ব যেন ঘরের দোরগোড়ায় চলে এসেছে। ফলে এখন যে-কোনো তথ্য বা খবর নিমেষে বিশ্বের যে-কোনো প্রান্তে পৌঁছে যাওয়ায় এর দ্বারা বিশ্ব ইতিহাস যথেষ্ট প্রভাবিত হচ্ছে ।

উপসংহার: সামগ্রিক বিচারে দেখা যায়, যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ইতিহাসের গতিকে প্রভাবিত করেছে । যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত হয়ে ইতিহাসের অনেক দিককে তুলে ধরেছে ।

২. 📖 আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদান ব্যবহারের পদ্ধতি ✍️Madhyamik History Chapter 1 Question Answer

এই বিভাগে তুমি জানবে আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য কী কী ধরনের উপাদান (যেমন – সরকারি নথি, আত্মজীবনী, চিঠিপত্র, সংবাদপত্র) ব্যবহার করা হয় এবং সেগুলি ব্যবহার করার সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।


📜 ক) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (SAQ – প্রতিটি ২ নম্বর)

সরকারি নথিপত্র: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

১. প্রশ্ন: সরকারি নথিপত্র বলতে কী বোঝায়? এগুলি কোথায় সংরক্ষিত থাকে? 📂

সরকারি নথিপত্র: Madhyamik History Chapter 1 Question Answer

উত্তর: বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী, সেনাপতি, বা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সমকালীন বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ঘটনা সম্পর্কে যে তথ্য লিখে গিয়েছেন, সেইসব সরকারি দলিলকে সরকারি নথিপত্র বলা হয় । এগুলি মূলত মহাফেজখানা বা লেখ্যাগারে (Archive), যেমন দিল্লির জাতীয় মহাফেজখানায়, সংরক্ষিত থাকে ।

২. প্রশ্ন: ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের দুটি গুরুত্ব উল্লেখ করো। 🏛️

উত্তর: ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের দুটি গুরুত্ব হলো: ১) বিভিন্ন সরকারি চিঠিপত্র, পুলিশ ও গোয়েন্দা প্রতিবেদন ইত্যাদি থেকে বিভিন্ন বৈপ্লবিক কার্যকলাপ ও আন্দোলন সম্পর্কে জানা যায় । ২) সরকার কর্তৃক নিযুক্ত বিভিন্ন কমিশনের রিপোর্ট (যেমন – নীল কমিশন, হান্টার কমিশন) থেকে সমকালীন শিক্ষাব্যবস্থা বা নীলচাষিদের অবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় ।

৩. প্রশ্ন: সরকারি নথিপত্রের দুটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো। 🤔

উত্তর: সরকারি নথিপত্রের দুটি সীমাবদ্ধতা হলো: ১) এই নথিপত্রগুলিতে মূলত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভাব প্রতিফলিত হয়, তাই এগুলি প্রায়শই একপেশে ও পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে । ২) পুলিশ বা গোয়েন্দা বিভাগের প্রতিবেদন অনেক সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল তথ্যে ভরা থাকে, যা প্রকৃত ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে ।

৪. প্রশ্ন: মহাফেজখানা বা আর্কাইভস থেকে কীভাবে ইতিহাস জানা যায়? 🏢

উত্তর: মহাফেজখানাগুলিতে সমকালীন বিভিন্ন সরকারি প্রতিবেদন, চিঠিপত্র, পুলিশ ও গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে । এইসব নথিপত্র থেকে তৎকালীন বিভিন্ন ঘটনা (যেমন – বিভিন্ন আন্দোলন, সরকারি নীতি) সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব এবং এই তথ্য বিশ্লেষণ করে সমকালীন ইতিহাস জানা যায় ।

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

Autobiography

৫. প্রশ্ন: আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার মধ্যে মূল পার্থক্য কী? 📖

উত্তর: যখন কোনো ব্যক্তি তাঁর নিজের জীবনের কথা নিজেই লেখেন, তখন তা হলো আত্মজীবনী । অন্যদিকে, যখন কোনো ব্যক্তি অতীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা দীর্ঘদিন পর স্মৃতি থেকে স্মরণ করে লিপিবদ্ধ করেন, তখন তা হয়ে ওঠে স্মৃতিকথা । প্রসঙ্গত, সব আত্মজীবনীই স্মৃতিকথামূলক, কিন্তু সব স্মৃতিকথাই আত্মজীবনী নয় ।

৬. প্রশ্ন: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার গুরুত্ব কী? ✍️

উত্তর: আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলির মাধ্যমে লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তৎকালীন সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতির বিভিন্ন ঘটনার জীবন্ত বিবরণ পাওয়া যায় । সরকারি নথিতে যা পাওয়া যায় না, এমন অনেক তথ্যও এই রচনাগুলি থেকে পাওয়া যেতে পারে।

৭. প্রশ্ন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থটি কেন গুরুত্বপূর্ণ? 🕊️

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর মাধ্যমে তৎকালীন ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের কথা, ধনী পরিবারের শিশুদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি, স্বদেশি চেতনা জাগরণে বিভিন্ন সভা-সমিতির (যেমন – হিন্দুমেলা) প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে জানা যায় ।

৮. প্রশ্ন: বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’ গ্রন্থটি থেকে কী ধরনের তথ্য পাওয়া যায়?

উত্তর: বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর’ থেকে তাঁর বাল্য ও কৈশোর কালের কথা, জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে তাঁর বিবর্তন এবং উনিশ শতকের বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি (যেমন – ব্রাহ্মসমাজে যোগদান, জাতীয় নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা) সম্পর্কে নানা মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায় ।

৯. প্রশ্ন: সরলাদেবী চৌধুরানির ‘জীবনের ঝরাপাতা’ গ্রন্থটির গুরুত্ব কী? 👩

উত্তর: সরলাদেবী চৌধুরানির আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’ থেকে উনিশ শতকে নারীমুক্তি আন্দোলনের কথা, বাঙালি তরুণদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মনোভাবের প্রসার (যেমন – প্রতাপাদিত্য উৎসব, বীরাষ্টমী ব্রত) এবং তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন বিপ্লবীদের কার্যকলাপ সম্পর্কে জানা যায় ।

১০. প্রশ্ন: আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো। 🤔

উত্তর: আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা ব্যবহারের দুটি সীমাবদ্ধতা হলো: ১) লেখকের ব্যক্তিগত মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এগুলি অনেক সময় পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। ২) লেখক অনেক সময় স্মৃতি থেকে লেখার কারণে অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু ভুল তথ্য দিতে পারেন বা কোনো ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করতে পারেন।

১১. প্রশ্ন: ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’ গ্রন্থটি কে রচনা করেছেন? এটি কোন ধরনের গ্রন্থ? 📖

উত্তর: ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’ গ্রন্থটি রচনা করেছেন দক্ষিণারঞ্জন বসু । এটি একটি স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ, যেখানে দেশভাগের ফলে পূর্ববঙ্গ থেকে ছিন্নমূল হয়ে আসা মানুষের দুঃখ-দুর্দশার এক মর্মস্পর্শী কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।

১২. প্রশ্ন: ‘একাত্তরের ডায়েরি’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে? এটি কোন সময়ের দলিল?

উত্তর: ‘একাত্তরের ডায়েরি’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন বাংলাদেশের সুফিয়া কামাল। এটি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের এক জীবন্ত ও মর্মস্পর্শী দলিল, যেখানে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যুদ্ধের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে।

চিঠিপত্র: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

চিঠিপত্র: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

১৩. প্রশ্ন: ইতিহাসের উপাদান হিসেবে চিঠিপত্রের গুরুত্ব কী? ✉️

উত্তর: ব্যক্তিগত চিঠিপত্র গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলি থেকে সমকালীন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ঘটনার তথ্য, লেখকের ব্যক্তিগত মতামত এবং সমাজের সাধারণ মানুষের মনোভাব সম্পর্কেও জানা যায় । এগুলি অনেক সময় সরকারি নথির থেকেও বেশি নির্ভরযোগ্য হয়।

১৪. প্রশ্ন: ইন্দিরা গান্ধিকে লেখা জওহরলাল নেহরুর চিঠিগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী? 👨‍👧

উত্তর: জওহরলাল নেহরুর তাঁর কন্যা ইন্দিরাকে লেখা চিঠিগুলি (‘Letters from a Father to his Daughter’) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলির মাধ্যমে নেহরু অত্যন্ত সহজ ভাষায় এবং গল্পচ্ছলে বিশ্ব ইতিহাস, মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশ এবং প্রাচীন সভ্যতাগুলির কথা তুলে ধরেছেন, যা শিক্ষামূলক উপাদান হিসেবে মূল্যবান ।

১৫. প্রশ্ন: “কল্যাণীয়াসু ইন্দু” শিরোনামে কী প্রকাশিত হয়েছে? 📝

উত্তর: পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু তাঁর কন্যা ইন্দিরা গান্ধিকে যে চিঠিগুলি লিখেছিলেন, সেগুলি বাংলা ভাষায় “কল্যাণীয়াসু ইন্দু” শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে । এই চিঠিগুলি ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান।

সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র: (Madhyamik History Chapter 1 Question Answer)

১৬. প্রশ্ন: ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের গুরুত্ব কী? 📰

উত্তর: সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলি থেকে সমকালীন আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির জীবন্ত চিত্র পাওয়া যায় । এগুলির মাধ্যমে জনমত প্রতিফলিত হয় এবং সরকারের বিভিন্ন নীতি ও কাজের সমালোচনা করা হয় ।

১৭. প্রশ্ন: ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল? 🗞️

উত্তর: দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ এটিই ছিল প্রথম বাংলা সংবাদপত্র যা বলিষ্ঠ রাজনৈতিক আলোচনা শুরু করে। এটি নীল চাষিদের ওপর অত্যাচার এবং সরকারের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করে জনমত গঠনে সাহায্য করেছিল ।

১৮. প্রশ্ন: ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার গুরুত্ব কী? 📖

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ এটি তৎকালীন বাংলা ও বাঙালির মনন এবং সংস্কৃতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল । এই পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বন্দেমাতরম্’ সংগীতটি পরবর্তীকালে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূলমন্ত্র হয়ে ওঠে ।

১৯. প্রশ্ন: সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো। 📰🆚📖

উত্তর: সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের দুটি পার্থক্য হলো: ১) সংবাদপত্র সাধারণত প্রতিদিন প্রকাশিত হয়, কিন্তু সাময়িকপত্র একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর (সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক) প্রকাশিত হয় । ২) সংবাদপত্রে সাম্প্রতিক খবরের প্রাধান্য থাকে, কিন্তু সাময়িকপত্রে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদির প্রাধান্য থাকে ।

২০. প্রশ্ন: ব্রিটিশ সরকার কেন ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েছিল? 🚫

উত্তর: ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা নির্ভীকভাবে ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন নীতি ও কাজের সমালোচনা করত । এই কারণে পত্রিকাটি সরকারের রোষানলে পড়ে। এরপর ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে বড়লাট লর্ড লিটন ‘দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন’ প্রবর্তন করলে, সরকারি নিষেধাজ্ঞায় পত্রিকাটির প্রকাশ এক বছর বন্ধ থাকে ।

২১. প্রশ্ন: প্রথম বাংলা সংবাদপত্র বা মাসিক পত্রিকা কোনটি? 📰

উত্তর: প্রথম বাংলা সংবাদপত্র বা মাসিক পত্রিকা হলো ‘দিগদর্শন’ । এটি ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন থেকে জন ক্লার্ক মার্শম্যানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হতো।

২২. প্রশ্ন: প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা কোনটি? 🗞️

উত্তর: প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা হলো ‘সমাচার দর্পণ’ । এটিও ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন থেকে মার্শম্যানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হতো।

২৩. প্রশ্ন: প্রথম বাঙালি পরিচালিত সংবাদপত্রের নাম কী?

উত্তর: প্রথম বাঙালি পরিচালিত সংবাদপত্রের নাম হলো ‘বাঙ্গাল গেজেট’। এর প্রকাশক ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য

২৪. প্রশ্ন: ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’র সম্পাদক কে ছিলেন? এই পত্রিকার একটি গুরুত্ব লেখো। 📖

উত্তর: ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’র প্রথম সম্পাদক ছিলেন অক্ষয়কুমার দত্ত , যদিও এটি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে প্রকাশিত হতো । এই পত্রিকার একটি গুরুত্ব হলো, এটি ব্রাহ্মধর্মের আদর্শ প্রচারের পাশাপাশি বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসারেও সাহায্য করেছিল।

২৫. প্রশ্ন: ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইন্টারনেটের দুটি সুবিধা লেখো। 🌐✅

উত্তর: ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইন্টারনেটের দুটি সুবিধা হলো: ১) এর মাধ্যমে অতি সহজে এবং ঘরে বসে বিপুল পরিমাণ তথ্য পাওয়া যায় । ২) বইপত্র কেনা বা গ্রন্থাগারে যাওয়ার খরচ ও সময় বাঁচে, অর্থাৎ এটি সময় ও অর্থ সাশ্রয়কারী

২৬. প্রশ্ন: ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইন্টারনেটের দুটি অসুবিধা লেখো। 🌐❌

উত্তর: ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইন্টারনেটের দুটি অসুবিধা হলো: ১) ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা খুব কঠিন এবং অনেক সময় ভুল বা মনগড়া তথ্য থাকে । ২) অনেক সময় কোনো বিষয়ের অসম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়, যা গবেষণার কাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ।

২৭. প্রশ্ন: ‘ডুডলস’ (Doodles) কী? 🎨

উত্তর: গুগলের একটি বিশেষ সাজ ‘ডুডলস’ নামে পরিচিত । সাধারণত বিশেষ কোনো দিনে বা সময়ে কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে বা ঘটনাকে সম্মান জানাতে গুগলের হোমপেজের লোগোটি যে বিশেষ সৃজনশীল সাজে সেজে ওঠে, তাকেই ডুডলস বলে ।

✒️ খ) বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (Analytical – প্রতিটি ৪ নম্বর)

প্রশ্ন ১: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব কী? 🏛️

উত্তর: ভূমিকা: আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি নথিপত্র, যেমন—সরকারি প্রতিবেদন, পুলিশ, গোয়েন্দা, সরকারি আধিকারিকদের প্রতিবেদন, বিভিন্ন বিবরণ, চিঠিপত্র প্রভৃতি উপাদানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে ।

গুরুত্ব:

  • সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি জানা: সরকারি নথিপত্র পাঠ, পুনঃপাঠ ও বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে সমসাময়িক নানা ঘটনার পিছনে সরকারের ভূমিকা ও মনোভাব স্পষ্টভাবে জানা যায় । ঔপনিবেশিক শাসকের দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতের ইতিহাস পর্যালোচনার জন্য এগুলি অপরিহার্য।
  • আন্দোলনের তথ্য: ব্রিটিশ সরকার যে বিভিন্ন বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের প্রতি গোপনে নজরদারি চালাত, সে বিষয়ে সমকালীন পুলিশ ও গোয়েন্দাদের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা সম্ভব হয়েছে । হোমরুল বা বিভিন্ন বিপ্লবী আন্দোলন সম্পর্কে প্রচুর তথ্য এগুলি থেকে পাওয়া যায় ।
  • কমিশনের রিপোর্ট: সরকার কর্তৃক নিযুক্ত বিভিন্ন কমিশনের রিপোর্ট (যেমন – নীল কমিশন, হান্টার কমিশন) থেকে সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ের (যেমন – নীলকরদের অত্যাচার, শিক্ষাব্যবস্থা) গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় ।
  • একমাত্র নির্ভরযোগ্যতা: কোনো কোনো ক্ষেত্রে, যেমন—নেতাজি সুভাষচন্দ্রের অন্তর্ধান রহস্যের মতো বিষয়ে, সরকারি নথিপত্রই ইতিহাসের একমাত্র নির্ভরযোগ্য উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে ।

উপসংহার: সরকারি নথিপত্র ইতিহাসের অনেক লুকোনো দিক উন্মোচন করতে পারে এবং শাসকের কার্যকলাপ জানার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে ।

প্রশ্ন ২: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বিভিন্ন আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক রচনার গুরুত্ব আলোচনা করো। 📖✍️

উত্তর: ভূমিকা: আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার যেসব উপাদান রয়েছে সেগুলির মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথামূলক রচনা । এগুলি থেকে সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির জীবন্ত ছবি পাওয়া যায়।

গুরুত্ব:

  • প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ: বিভিন্ন ব্যক্তি তাঁদের প্রত্যক্ষ করা বিভিন্ন ঘটনাবলি প্রসঙ্গক্রমে তাঁদের লেখা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় উল্লেখ করে থাকেন । সরকারি নথিতে উল্লেখ নেই এমন বহু ঘটনার উল্লেখ এসব রচনায় পাওয়া যায় ।
  • রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের রচনা: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের বিভিন্ন জাতীয় নেতৃবৃন্দ (যেমন – বিপিনচন্দ্র পাল, মহাত্মা গান্ধি, জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু) তাঁদের আত্মজীবনীতে সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনার মূল্যবান তথ্য লিপিবদ্ধ করেছেন ।
  • অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের রচনা: বিভিন্ন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের লেখা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথাতেও আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বিভিন্ন উপাদান পাওয়া যায় । যেমন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’ বা সরলাদেবী চৌধুরানির ‘জীবনের ঝরাপাতা’ ।
  • বিশেষ ঘটনার বিবরণ: বিশেষ বিশেষ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ জানার ক্ষেত্রে এই উপাদানগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ।

উপসংহার: উত্তম পুরুষে লেখা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথাগুলি ইতিহাসের বহু ঘটনার সাক্ষী। এগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্য আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনা করতে বিশেষ সহায়তা করে।

প্রশ্ন ৩: ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর’-এর গুরুত্ব কী?

উত্তর: ভূমিকা: রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সমাজসংস্কারক বিপিনচন্দ্র পালের লেখা আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর’ আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয় ।

গুরুত্ব:

  • ঐতিহাসিক তথ্যের ভাণ্ডার: বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর’ আধুনিক বাংলার নানা ঐতিহাসিক তথ্যে সমৃদ্ধ । বিপিনচন্দ্র নিজেই লিখেছেন, “…আমার সত্তর বৎসরের জীবনকথা বাস্তবিক এই বাংলাদেশের আধুনিক ইতিহাসের কথা।”
  • প্রাথমিক জীবনের তথ্য: ‘সত্তর বৎসর’ গ্রন্থে বিপিনচন্দ্রের প্রথম জীবনের বিভিন্ন তথ্য, যেমন—শ্রীহট্টে তাঁর জন্ম, গ্রামের পরিচয়, এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করতে আসার মতো বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
  • রাজনৈতিক জীবনের সূচনা: এই গ্রন্থে বিপিনচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবনের প্রথম পর্বের বিভিন্ন তথ্য, যেমন—জাতীয় নেতা আনন্দমোহন বসু ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, ব্রাহ্মসমাজে যোগদান, স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় ।
  • পরিণত জীবনের তথ্য: বিপিনচন্দ্র পাল পরিণত বয়সে যখন কংগ্রেসের নেতৃত্বে উঠে আসেন, সেসময়ের বিভিন্ন তথ্যও তাঁর আত্মজীবনীতে উঠে এসেছে। পুরোনো কলকাতার কথা, ব্রাহ্মসমাজের ইতিহাস, ধর্মভীরু বাঙালির জাতীয়তাবাদী মানসিকতা ইত্যাদি নানা দিকের আলোচনা তাঁর গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।

উপসংহার: বিপিনচন্দ্র পাল তাঁর ‘সত্তর বৎসর’ নামক আত্মজীবনীতে যে স্মৃতি রোমন্থন করেছেন তার মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে এক ব্যক্তিনিরপেক্ষ সমাজদর্শন । সমকালীন সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা প্রকটভাবে ধরা পড়েছে তাঁর এই গ্রন্থটিতে।

প্রশ্ন ৪: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’-এর গুরুত্ব কী? 🕊️

উত্তর: ভূমিকা: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা । এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে ।

গুরুত্ব:

  • বাঙালির স্বাদেশিকতা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে ঔপনিবেশিক বাংলার, বিশেষ করে কলকাতার ধনী পরিবারগুলির জীবনযাত্রার আভাস দিয়েছেন । এ যুগে অভিজাত বাঙালি পরিবারের বিভিন্ন বিদেশি প্রথার প্রচলন শুরু হলেও স্বদেশের প্রতি অনুরাগও জাগ্রত ছিল ।
  • ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল: ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলে বৃহৎ পরিবার, শিশুদের বাল্যকাল, নারীদের স্বাধীনতা প্রভৃতি বিভিন্ন ঘটনার ছবি তুলে ধরা হয়েছে । এগুলি থেকে সমকালীন বাংলার সামাজিক ইতিহাসের নানা তথ্য পাওয়া যায়।
  • রাজনৈতিক ঘটনাবলি: ‘জীবনস্মৃতি’-তে রবীন্দ্রনাথ তাঁর দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘স্বাদেশিকতার সভা’ এবং রাজনারায়ণ বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার উল্লেখ করেছেন ।
  • হিন্দুমেলা: ‘জীবনস্মৃতি’-তে নবগোপাল মিত্রের ‘হিন্দুমেলা’ সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায় । ‘হিন্দুমেলা’র স্বদেশপ্রেম সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “ভারতবর্ষকে স্বদেশ বলিয়া ভক্তির সহিত উপলখির চেষ্টা সেই প্রথম হয়।”

উপসংহার: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’ মূলত তাঁর নিজের আত্মজীবনী হলেও এই গ্রন্থে তাঁর সমকালীন বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন দিক আলোচিত হয়েছে, যেগুলি আধুনিক ভারতের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান ।

প্রশ্ন ৫: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরলাদেবী চৌধুরানির আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’-এর গুরুত্ব কী? 👩💪

উত্তর: ভূমিকা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগনি সরলাদেবী চৌধুরানির লেখা ‘জীবনের ঝরাপাতা’ বাংলা সাহিত্যের একটি মূল্যবান ও সুখপাঠ্য আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা । এটি আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনায় বিভিন্নভাবে তথ্য সরবরাহ করে ।

গুরুত্ব:

  • বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড: সরলাদেবী চৌধুরানি ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনকে সমর্থন করতেন । তিনি সহিংস বিপ্লবের দ্বারা ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন দেখতেন । ‘জীবনের ঝরাপাতা’র ছত্রে ছত্রে ভারতের সশস্ত্র বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নানা তথ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ।
  • অর্থনৈতিক শোষণ: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে অর্থনৈতিক শোষণের নানা ছবি ‘জীবনের ঝরাপাতা’ গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে । নীলচাষি, চা বাগানের কুলি ও শ্রমিক, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ কীভাবে ব্রিটিশ এবং তাদের সহযোগীদের অত্যাচার ও শোষণের শিকার হয়েছিল তা তিনি স্পষ্টভাবে আলোচনা করেছেন ।
  • ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল: ঠাকুরবাড়ির সাংস্কৃতিক চর্চা, ঈশ্বরভাবনা, বিভিন্ন সামাজিক বিধান পালন, শিশুদের একসঙ্গে বেড়ে ওঠা প্রভৃতি নানা ঘটনার খণ্ডচিত্র ‘জীবনের ঝরাপাতা’-য় উঠে এসেছে ।
  • স্বদেশি আন্দোলন: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের স্বদেশি আন্দোলন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ‘জীবনের ঝরাপাতা’য় পাওয়া যায় । স্বদেশি আন্দোলনের যুগে স্বদেশি পণ্যের উৎপাদন ও প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন ।

উপসংহার: সরলাদেবী চৌধুরানির আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’ আধুনিক ভারত ইতিহাসের এক সংগ্রামী অধ্যায়কে তুলে ধরে । ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে নানান আলোড়ন জীবন্ত হয়ে উঠেছে তাঁর এই গ্রন্থে ।

প্রশ্ন ৬: আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে চিঠিপত্রের গুরুত্ব আলোচনা করো। ✉️

উত্তর: ভূমিকা: সরকারি নথিপত্রের মতো বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা ব্যক্তিগত চিঠিপত্রও আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয় । বিভিন্ন ব্যক্তিগত চিঠিপত্র থেকে সমকালীন বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায় ।

গুরুত্ব:

  • গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র: ব্রিটিশ শাসনকালে লেখা আধুনিক ভারতের ঐতিহাসিক তথ্যে সমৃদ্ধ এরূপ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র হলো টিপু সুলতান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরী, স্বামী বিবেকানন্দ, মহাত্মা গান্ধি, সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু প্রমুখের লেখা চিঠিপত্র ।
  • রাজনৈতিক তথ্য: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের লেখা চিঠিপত্রগুলি থেকে সমকালীন বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা সম্পর্কে যথার্থ তথ্য পাওয়া যায় ।
  • সামাজিক তথ্য: বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের চিঠিপত্রে সমকালীন সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন । এসব চিঠিপত্র থেকে সমকালীন ভারতীয় সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।
  • সাধারণ মানুষের মতামত: যুদ্ধ, বিদ্রোহ বা বড়ো কোনো রাজনৈতিক ঘটনায় মানুষ যে প্রচুর চিঠিপত্র লিখে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করে, তা থেকে সেই বিষয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায় ।

উপসংহার: বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা চিঠিপত্রগুলি আধুনিক ভারতের ইতিহাসের নানান তথ্য তুলে ধরেছে । তাই চিঠিপত্র হয়ে উঠেছে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান ।

প্রশ্ন ৭: ইতিহাসের উপাদান হিসেবে কন্যা ইন্দিরাকে লেখা পিতা জওহরলাল নেহরুর চিঠিগুলির গুরুত্ব কী? 👨‍👧💌

উত্তর: ভূমিকা: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যক্তিগত চিঠিপত্রকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয় । এরূপ ব্যক্তিগত চিঠিপত্রের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল ‘লেটার্স ফ্রম আ ফাদার টু হিজ ডটার’ (Letters from a Father to His Daughter)

গুরুত্ব:

  • পিতার উপদেশ: পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদ জেল থেকে মহীশূরে তাঁর ১০ বছর বয়সি কন্যা ইন্দিরা গান্ধিকে অসংখ্য চিঠি লিখেছিলেন । এরূপ ৩০টি চিঠির একটি সংকলন পরবর্তীকালে ‘Letters from a Father to His Daughter’ শিরোনামে এলাহাবাদ থেকে প্রকাশিত হয়েছে । এই চিঠির সংকলন হল কন্যার প্রতি একজন স্নেহময় পিতার অমূল্য তত্ত্বাবধান ও উপদেশ ।
  • উদ্দেশ্য: জওহরলাল নেহরু তাঁর কন্যা ইন্দিরাকে আমাদের বিশ্বের বিভিন্ন বিস্ময়, প্রাকৃতিক ইতিহাস এবং সভ্যতার গল্প শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে এসব চিঠি লিখেছিলেন ।
  • সভ্যতার প্রতিষ্ঠা: বুদ্ধি কীভাবে মানুষকে অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে চতুর ও শক্তিশালী করে তুলল, কীভাবে ধর্মবিশ্বাসের প্রচলন হল, কীভাবে সমাজ, সভ্যতা, রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হল প্রভৃতি বিষয়ে সহজ ভাষায় সুন্দর গল্প লিখে জওহরলাল তাঁর কন্যা ইন্দিরাকে পাঠাতেন ।
  • সভ্যতার অগ্রগতি: প্রাচীন ভারতে সভ্যতার অগ্রগতি, আর্যদের আগমন, রামায়ণ ও মহাভারতের আদর্শ, শক্তিশালী রাজবংশ, দরিদ্র শ্রেণির দুরবস্থা প্রভৃতির আলোচনাও জওহরলাল নেহরুর চিঠিপত্রে স্থান পেয়েছে ।

উপসংহার: পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু তাঁর কন্যা ছোট্ট ইন্দিরাকে বিভিন্ন চিঠির মাধ্যমে সমাজ, দেশ ও বিশ্বকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে যে সকল বিষয়ের অবতারণা করেছেন তাতে ভারতের ইতিহাসের বহু দিকের প্রতিফলন ঘটেছে ।

প্রশ্ন ৮: আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের গুরুত্ব আলোচনা করো। 📰🗞️

উত্তর: ভূমিকা: উনিশ শতকের শেষভাগে ভারতে সংবাদপত্রের প্রকাশ শুরু হয় । আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল সমসাময়িক বিভিন্ন সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র ।

গুরুত্ব:

  • রাজনৈতিক তথ্য: ব্রিটিশ শাসনকালে প্রকাশিত সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রগুলি সমকালীন রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এগুলিতে ব্রিটিশদের শাসননীতি, ভারতীয়দের মনোভাব প্রভৃতি বিভিন্ন রাজনৈতিক খবরাখবর ছাপা হত ।
  • সামাজিক তথ্য: সমকালীন ভারতীয় সংবাদপত্রগুলিতে উচ্চবিত্ত থেকে সাধারণ মানুষের সমাজ, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ক বিভিন্ন ঘটনার খবরাখবর নিয়মিত ছাপা হত । এসব তথ্যাদি থেকে ব্রিটিশ-ভারতীয় সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে নানা ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়।
  • শোষণের চিত্র: আধুনিক ভারতের ইতিহাসে ব্রিটিশ শোষণ ও অত্যাচারের নানা ঘটনাবলি সমসাময়িক সংবাদপত্রগুলিতে নিয়মিত ছাপা হত । এসব তথ্যাদি শোষণ ও অত্যাচারের ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
  • জনমতের প্রতিফলন: বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কী তা সমকালীন সংবাদপত্রগুলিতে প্রকাশিত হয় । ফলে সংবাদপত্রগুলিতে সমকালীন সাধারণ মানুষের মতামতেরও প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায় ।

উপসংহার: সার্বিক সাম্প্রতিক তথ্যে সমৃদ্ধ সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রগুলি সমকালীন সময়ের প্রতিদিনকার তথ্য সরবরাহ করে থাকে । তাই আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে এগুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ।

প্রশ্ন ৯: সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের মধ্যে পার্থক্য কী? 📖🆚🗞️

উত্তর: ভূমিকা: সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র আধুনিককালের ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয় । সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র উভয়ই সংবাদ পরিবেশন করে থাকে, তবে উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্যও আছে ।

পার্থক্য:

  • আত্মপ্রকাশের কাল: সাময়িকপত্রের আবির্ভাব অষ্টাদশ শতকে । কিন্তু রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সময় থেকেই সংবাদপত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে বলে মনে করা হয়।
  • আকৃতি: আকৃতি এবং দৃশ্যমানতার ক্ষেত্রেও সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের মধ্যে পার্থক্য চোখে পড়ে । সাময়িকপত্রগুলির পৃষ্ঠা আকারে ছোটো হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে তা বইয়ের মতো বাঁধাই করা থাকে । আর সংবাদপত্রগুলির পৃষ্ঠা আকারে বড়ো হয় এবং তার পৃষ্ঠাগুলি খোলা থাকে ।
  • প্রকাশের সময়কাল: সাময়িকপত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে (সাপ্তাহিক, পাক্ষিক বা মাসিক) প্রকাশিত হয় । কিন্তু সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় প্রতিদিন, এমনকি দিনে দুইবারও ।
  • প্রকাশনার বিষয়: সাময়িকপত্র কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিকও হতে পারে । কিন্তু সংবাদপত্রগুলির অধিকাংশই হয় সার্বিক, অর্থাৎ সাম্প্রতিক সমস্ত বিষয়ের খবরাখবর সংবাদপত্রে ছাপা হয় ।

উপসংহার: সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও, সমকালীন ইতিহাসের উপাদান সংগ্রহের কাজে উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।

প্রশ্ন ১০: ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনায় সহায়তা করতে পারে? 📖

উত্তর: ভূমিকা: আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সমসাময়িক যেসব সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সেগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হল অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা

সহায়তা:

  • শিক্ষিত সমাজের মুখপত্র: ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা আত্মপ্রকাশের পর থেকেই তৎকালীন বাঙালি সমাজের প্রধান মুখপত্র হয়ে ওঠে । এই পত্রিকাতেই বাঙালি জাতির আধুনিক চিন্তার প্রতিফলন ঘটত ।
  • সমকালীন তথ্য: ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় সমাজ, সাহিত্য, বিজ্ঞান, রাজনীতি, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ ও বিভিন্ন উপন্যাস প্রকাশিত হত । এসব রচনা থেকে সেসময় বাংলায় ইংরেজ সরকার ও জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচার, সামাজিক পরিস্থিতি, সাধারণ মানুষের অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যায় ।
  • জাতীয়তাবাদে প্রভাব: ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা তৎকালীন ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিল । বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা ‘বন্দেমাতরম’ সংগীতটি প্রথম ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয় । ‘বন্দেমাতরম’ পরবর্তীকালে ভারতীয় বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূলমন্ত্রে পরিণত হয় ।
  • সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা: ‘বঙ্গদর্শন’-এ প্রকাশিত ‘সাম্য’-সহ বিভিন্ন প্রবন্ধ বাঙালি সমাজে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার প্রসারে যথেষ্ট সহায়তা করে ।

উপসংহার: বঙ্কিমচন্দ্র সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকাটি সমকালের তথ্যাদিকে যেভাবে তুলে ধরত তা আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রশ্ন ১১: ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনায় সহায়তা করতে পারে? 🗞️

উত্তর: ভূমিকা: উনিশ শতকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার পাতায় পাতায় আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার নানা উপাদান ছড়িয়ে রয়েছে ।

সহায়তা:

  • দরিদ্র চাষিদের সমর্থন: ‘সোমপ্রকাশ’ দরিদ্র চাষিদের সমর্থনে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ করে । এই পত্রিকা কৃষকদের দিয়ে জোর করে নীল ও চা-চাষের প্রতিবাদ করে ।
  • রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধিতে ভূমিকা: বাংলায় ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকাতেই প্রথম রাজনৈতিক খবরাখবর পরিবেশন শুরু হয় । পত্রিকায় নিয়মিত ব্রিটিশ সরকার ও জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচার, সামাজিক ও রাজনৈতিক বঞ্চনা প্রভৃতি ঘটনাগুলি তুলে ধরে পাঠকদের সচেতন করে তোলা হয় ।
  • সামাজিক সচেতনতাবৃদ্ধিতে ভূমিকা: বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কৌলিন্য প্রথা, মদ্যপান প্রভৃতির বিরুদ্ধে এবং নারীশিক্ষা, বিধবাবিবাহ প্রভৃতির পক্ষে নিয়মিত রচনা প্রকাশ করে ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা এসব বিষয়ে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
  • সংবাদপত্র আইনের প্রতিবাদ: ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে বড়লাট লর্ড লিটন ‘দেশীয় সংবাদপত্র আইন’ পাস করে ভারতীয় সংবাদপত্রগুলির ওপর হস্তক্ষেপ করলে ‘সোমপ্রকাশ’ এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় ।

উপসংহার: ব্রিটিশ কুশাসনের প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছিল ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকা। এই পত্রিকাটি সমকালীন ভারতীয় আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাবলির বর্ণনা প্রদান করে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে উঠেছে ।

প্রশ্ন ১২: ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সুবিধা কী? 🌐✅

উত্তর: ভূমিকা: ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে ।

সুবিধা:

  • তথ্যের সহজলভ্যতা: ইন্টারনেটের সহায়তায় অতি সহজে এবং ঘরে বসে ইতিহাস-সহ দুনিয়ার যাবতীয় তথ্য জেনে নেওয়া যায় । অন্য কোনো মাধ্যম থেকে এরূপ সহজে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়।
  • স্বল্প অর্থব্যয়: বিভিন্ন বইপত্র কিনে, গ্রন্থাগার বা গবেষণাগারে নিয়মিত যাতায়াত করে ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে যে বিপুল পরিমাণ অর্থব্যয় করতে হয়, তা ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে করতে হয় না । খুব সামান্য অর্থব্যয় করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেসব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব ।
  • সময় সাশ্রয়: বইপত্র বা অন্য কোনো সূত্র থেকে কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয় । কিন্তু ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে খুব বেশি সময় ব্যয় করতে হয় না ।
  • দুর্লভ তথ্যপ্রাপ্তি: ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানা ধরনের অনলাইন লাইব্রেরি থেকে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কোনো বইয়ের কপি, অনলাইন আর্কাইভ থেকে আসল রিপোর্টের কপি প্রভৃতি পাওয়া সম্ভব ।

উপসংহার: ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের নানান সুবিধা থাকা সত্ত্বেও একে অতিমাত্রায় নির্ভরযোগ্য ভাবা ভুল হবে ।

প্রশ্ন ১৩: ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের অসুবিধাগুলি কী? 🌐❌

উত্তর: ভূমিকা: বর্তমানকাল ‘তথ্য বিস্ফোরণের যুগ’ নামে পরিচিত । এই তথ্য বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে সম্প্রতি ইন্টারনেট ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার । তবে ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের কিছু অসুবিধাও রয়েছে ।

অসুবিধা:

  • নির্ভরযোগ্যতার অভাব: ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলি কতটা যথার্থ বা নির্ভরযোগ্য তা যাচাই করা খুব কঠিন । একই বিষয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পৃথক পৃথক তথ্য থাকায় পাঠক বা গবেষকরা বিভ্রান্ত হন।
  • মনগড়া তথ্য: ইন্টারনেটে আজকাল যে-কেউ নিজের মনগড়া ভুল তথ্য আপলোড করছে । ফলে তা গবেষণার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অসুবিধার সৃষ্টি করছে।
  • গবেষণার মান হ্রাস: ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন অসত্য বা অর্ধসত্য তথ্য ব্যবহার করতে গিয়ে পাঠক ও গবেষকগণ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং গবেষণার গুণগত মান কমে যাচ্ছে ।
  • তথ্যের অসম্পূর্ণতা: বহু ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে বই বা গবেষণার অংশবিশেষ পাওয়া যায় । এর পূর্ণাঙ্গ কাজটি পাওয়া না যাওয়ায় পাঠক ও গবেষকগণ নানা সমস্যার সম্মুখীন হন ।

উপসংহার: উক্ত অসুবিধাগুলি সত্ত্বেও আজকের এই ‘তথ্য বিস্ফোরণের যুগে’ ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটকে অস্বীকার করার উপায় নেই ।

প্রশ্ন ১৪: আত্মজীবনী কীভাবে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে? ✍️🤔

উত্তর: ভূমিকা: বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা আত্মজীবনী ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হতে পারে ।

ব্যবহার:

  • রাজনৈতিক ঘটনাবলি: আত্মজীবনী থেকে অনেক সময় সমকালীন সময়ের রাজনৈতিক ঘটনাবলির কথা জানা যায় ।
  • সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: আত্মজীবনীতে উল্লিখিত সমকালীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে ।
  • আর্থসামাজিক ঘটনাবলি: আত্মজীবনীতে উল্লিখিত সমকালীন আর্থসামাজিক ঘটনাবলিও ইতিহাস রচনায় ব্যবহৃত হতে পারে ।
  • লেখকের অভিজ্ঞতা: আত্মজীবনীতে উল্লিখিত লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিগুলি ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে কাজে লাগতে পারে ।

উপসংহার: নিজের জীবন ও সেই সংক্রান্ত ঘটনাগুলো যখন কোনো ব্যক্তি নিজেই লিপিবদ্ধ করেন, সেই লিপিবদ্ধ কাহিনিকে আত্মজীবনী বলা হয় । তাই এটি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

অধ্যায় ১ এর প্রস্তুতি কেমন? এখনই মক টেস্ট দাও!

ইতিহাসের ধারণা অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১ নম্বরের বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ) এবং সত্য/মিথ্যা (ঠিক/ভুল) প্রশ্ন দিয়ে নিজের প্রস্তুতি যাচাই করে নাও।

ইতিহাসের ধারণা: একনজরে সম্পূর্ণ অধ্যায়ের নোটস!

প্রথম অধ্যায়ের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পয়েন্ট করে সহজ ভাষায় আলোচনা। পরীক্ষার আগে দ্রুত রিভিশনের জন্য এই সম্পূর্ণ নোটস পড়ে নাও।

error: Content is protected !!
Scroll to Top