📜 Best Madhyamik History Chapter 8 Question Answer | উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত Q&A 📜

স্বাধীনতার ঠিক পরের উত্তাল সময়, অর্থাৎ ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ভারতের ইতিহাস ছিল নানা চ্যালেঞ্জে ভরা। দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি, দেশভাগের ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ উদ্বাস্তু সমস্যা এবং ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যগুলির পুনর্গঠন – এই সব গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল বিষয়গুলি নিয়েই আমাদের অষ্টম অধ্যায়। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষায় কেমন প্রশ্ন আসতে পারে, সেই ধারণা পেতে এবং তোমার প্রস্তুতিকে আরও মজবুত করতে এই Madhyamik History Chapter 8 Question Answer পৃষ্ঠাটি বিশেষভাবে সাহায্য করবে। এখানে তুমি পাবে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ও তার বিস্তারিত উত্তর, যা তোমাকে প্রতিটি বিষয় গভীরভাবে বুঝতে ও আত্মবিশ্বাসের সাথে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে সাহায্য করবে। চলো, শুরু করা যাক!

---

🇮🇳 প্রথম ভাগ: দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক 🇮🇳

---

✏️ সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (Madhyamik History Chapter 8 Question Answer)

১. স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতে কতগুলি দেশীয় রাজ্য ছিল এবং তাদের মোট আয়তন কত ছিল?

উত্তর: স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতে ৬০০টির বেশি (বিভিন্ন হিসাবে ৬০১টি বা ৫৬৫টির বেশি) ছোটবড় দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এই রাজ্যগুলির মোট আয়তন ছিল সমগ্র ভারতের প্রায় ৪৮ শতাংশ।

২. ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’ কে, কবে এবং কেন গঠন করেন? এই দপ্তরের সচিব কে ছিলেন?

উত্তর: পরাধীন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন তারিখে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’ গঠন করেন। এই দপ্তরের সচিব ছিলেন ভি. পি. মেনন।

৩. ‘ভারতের লৌহমানব’ কাকে এবং কেন বলা হয়?

উত্তর: স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে ‘ভারতের লৌহমানব’ বলা হয়। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টা, অনমনীয় মনোভাব, কূটকৌশল এবং কঠোর পদক্ষেপের ফলে বেশিরভাগ দেশীয় রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, তাই তাঁর এই পরিচিতি।

৪. ‘ভারতভুক্তির দলিল’ (Instrument of Accession) বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর যে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যের শাসকেরা তাঁদের রাজ্যকে ভারতীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মত হয়েছিলেন, সেই চুক্তিপত্রকেই ‘ভারতভুক্তির দলিল’ বলা হয়।

৫. কোন তিনটি দেশীয় রাজ্য প্রাথমিকভাবে ভারতে যোগ দিতে অস্বীকার করেছিল?

উত্তর: প্রাথমিকভাবে জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ এবং কাশ্মীর – এই তিনটি প্রধান দেশীয় রাজ্য ভারতে যোগ দিতে অস্বীকার করে স্বাধীন থাকার চেষ্টা করেছিল।

৬. জুনাগড় রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়েছিল?

উত্তর: জুনাগড়ের মুসলিম নবাব পাকিস্তানে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিলে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু প্রজারা প্রবল গণবিক্ষোভ শুরু করে। নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এরপর ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত গণভোটে প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষ ভারতে যোগদানের পক্ষে মত দিলে, ১৯৪৯ সালের জানুয়ারি মাসে জুনাগড় ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

৭. কাশ্মীরের রাজা কে ছিলেন? তিনি কেন ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন?

উত্তর: কাশ্মীরের রাজা ছিলেন ডোগরা বংশীয় মহারাজা হরি সিং। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর পাকিস্তান-সমর্থিত হানাদার বাহিনী কাশ্মীর আক্রমণ করলে এবং ব্যাপক অত্যাচার শুরু করলে, মহারাজা হরি সিং ভারতের কাছে সামরিক সাহায্য চান। ভারত সরকার ভারতভুক্তির শর্তে সাহায্য করতে রাজি হলে, তিনি ২৬ অক্টোবর ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন।

৮. ‘অপারেশন পোলো’ কী?

উত্তর: হায়দ্রাবাদের নিজাম ওসমান আলি খান স্বাধীন থাকার চেষ্টা করলে এবং রাজাকার বাহিনীর অত্যাচার বৃদ্ধি পেলে, ভারত সরকার ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে হায়দ্রাবাদে যে সামরিক অভিযান চালায়, সেটি ‘অপারেশন পোলো’ নামে পরিচিত।

৯. পরাধীন ভারতে থাকা দুটি ফরাসি ও দুটি পোর্তুগিজ উপনিবেশের নাম লেখো।

উত্তর: পরাধীন ভারতে থাকা দুটি ফরাসি উপনিবেশ হল চন্দননগর ও পন্ডিচেরি। দুটি পোর্তুগিজ উপনিবেশ হল গোয়া এবং দমন ও দিউ।

১০. গোয়া কবে এবং কীভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?

উত্তর: পোর্তুগাল গোয়া ছাড়তে অস্বীকার করলে এবং সেখানে গণ-আন্দোলন তীব্র হলে, ভারত সরকার ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে সামরিক অভিযান চালায়। এর ফলে পোর্তুগিজরা আত্মসমর্পণ করে এবং গোয়া ১৯৬১ সালে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

---

📖 বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (Madhyamik History Chapter 8 Question Answer)

১. 💬 দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ও ভি. পি. মেননের ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তর: ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর নবগঠিত রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ও স্থায়িত্বের জন্য দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি ছিল অত্যন্ত জরুরি। এই কঠিন কাজটি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ভি. পি. মেনন নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন।

• দৃঢ় ও বাস্তববাদী নীতি: প্যাটেল ও মেনন উভয়েই উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব ভারতের ঐক্য ও নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। প্যাটেল এই বিষয়ে কঠোর কিন্তু বাস্তববাদী নীতি গ্রহণ করেন। তিনি মেননকে বলেছিলেন যে, এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান না হলে ভারতের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে।
• কূটনীতি ও বোঝাপড়া: তাঁরা বেশিরভাগ দেশীয় রাজ্যের শাসকদের বোঝাতে সক্ষম হন যে, ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়াই তাদের নিজেদের স্বার্থে প্রয়োজন। রাজন্যভাতা, খেতাব এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বহু শাসককে ‘ভারতভুক্তির দলিলে’ স্বাক্ষর করতে রাজি করানো হয়।
• চাপ প্রয়োগ ও সামরিক পদক্ষেপ: যেসকল রাজ্য (যেমন জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ) সহজে রাজি হয়নি, তাদের উপর প্যাটেল কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেন এবং প্রয়োজনে সামরিক অভিযানেরও ভয় দেখান। তাঁর এই দৃঢ় মনোভাবের জন্যই হায়দ্রাবাদে ‘অপারেশন পোলো’ পরিচালিত হয়েছিল।
• ভি. পি. মেননের ভূমিকা: ভি. পি. মেনন ‘দেশীয় রাজ্য দপ্তর’-এর সচিব হিসেবে দেশীয় রাজ্যগুলির শাসকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংযুক্তিকরণের প্রক্রিয়াকে মসৃণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বিভিন্ন চুক্তিপত্র তৈরি এবং শর্তাবলী নির্ধারণে প্যাটেলকে যোগ্য সহায়তা প্রদান করেন।
• ফলাফল: তাঁদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ আগস্টের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি দেশীয় রাজ্য ভারতভুক্তিতে সম্মত হয়। কাশ্মীর, জুনাগড় ও হায়দ্রাবাদের মতো проблемপূর্ণ রাজ্যগুলিও পরবর্তীকালে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে, প্যাটেলের এই দৃঢ়তার কারণেই ভারত বলকান অঞ্চলের মতো বহুধা বিভক্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিল।

এভাবে সর্দার প্যাটেলের লৌহকঠিন সংকল্প এবং ভি. পি. মেননের কূটনৈতিক দক্ষতা ও প্রশাসনিক বিচক্ষণতার ফলেই প্রায় অসম্ভব এই কাজটি সম্পন্ন হয়েছিল এবং অখণ্ড ভারতরাষ্ট্রের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়েছিল।

২. 💬 কাশ্মীর সমস্যা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল? অথবা, কাশ্মীর কীভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল?

উত্তর: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে কাশ্মীরকে নিয়ে সবচেয়ে জটিল ও বিতর্কিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।

• কাশ্মীরের ভৌগোলিক ও জনবিন্যাসগত পরিস্থিতি: কাশ্মীর ছিল ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় রাজ্য। এখানকার মহারাজা ছিলেন হিন্দু ডোগরা বংশীয় হরি সিং, কিন্তু রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশই ছিল মুসলিম।
• স্বাধীন থাকার আকাঙ্ক্ষা: মহারাজা হরি সিং প্রাথমিকভাবে ভারত বা পাকিস্তান কোনো রাষ্ট্রেই যোগ না দিয়ে কাশ্মীরকে একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন এবং কাশ্মীরের প্রধান রাজনৈতিক দল ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স’-এর নেতা শেখ আবদুল্লা কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার পক্ষে থাকলেও, মহারাজা তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন।
• পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণ: এই পরিস্থিতিতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর পাকিস্তান সরকার মদতপুষ্ট পাঠান উপজাতি হানাদার বাহিনী কাশ্মীরে প্রবেশ করে ব্যাপক হত্যালীলা, লুণ্ঠন ও নির্যাতন শুরু করে। তাদের লক্ষ্য ছিল কাশ্মীর দখল করা। এই আক্রমণে কাশ্মীরের প্রশাসন কার্যত ভেঙে পড়ে।
• ভারতের কাছে সাহায্য প্রার্থনা ও ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর: পাক হানাদাররা শ্রীনগরের কাছাকাছি চলে এলে মহারাজা হরি সিং অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় ভারতের কাছে সামরিক সাহায্যের জন্য আবেদন জানান (২৪ অক্টোবর)। ভারত সরকার জানায় যে, কাশ্মীর ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করলেই একমাত্র সামরিক সাহায্য পাঠানো সম্ভব। বাধ্য হয়ে মহারাজা হরি সিং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ অক্টোবর ‘ভারতভুক্তির দলিলে’ (Instrument of Accession) স্বাক্ষর করেন এবং শেখ আবদুল্লা তা সমর্থন করেন।
• ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপ ও যুদ্ধবিরতি: পরের দিন (২৭ অক্টোবর) ভারতীয় সেনাবাহিনী বিমানযোগে শ্রীনগরে পৌঁছে পাক হানাদারদের বিতাড়িত করতে শুরু করে এবং কাশ্মীরের দুই-তৃতীয়াংশ উদ্ধার করে। পাকিস্তান সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ভারত সরকার বিষয়টি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করে (৩১ ডিসেম্বর, ১৯৪৭)। নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপে ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয় এবং কাশ্মীরে গণভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, যদিও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

এভাবেই কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলেও, তার একটি অংশ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থেকে যায় (আজাদ কাশ্মীর), যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বিরোধের কারণ হয়ে রয়েছে।

৩. 💬 হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল? এই প্রসঙ্গে ‘রাজাকার বাহিনী’ এবং ‘অপারেশন পোলো’র ভূমিকা উল্লেখ করো।

উত্তর: ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে আয়তনে সর্ববৃহৎ হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে অস্বীকার করে, যা এক জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে।

• হায়দ্রাবাদের পরিস্থিতি ও নিজামের ভূমিকা: হায়দ্রাবাদের শাসক ছিলেন নিজাম মীর ওসমান আলি খান। রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৮৫-৮৭ শতাংশ হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও, নিজাম মুসলিম অভিজাতদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হায়দ্রাবাদকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। তিনি ভারত বা পাকিস্তান কোনো ডোমিনিয়নেই যোগ দিতে রাজি ছিলেন না।
• রাজাকার বাহিনীর অত্যাচার: নিজাম তাঁর কর্তৃত্ব বজায় রাখার উদ্দেশ্যে কাশিম রিজভির নেতৃত্বে ‘ইত্তেহাদ-উল-মুসলিমিন’ দলের একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক সশস্ত্র বাহিনী, যা ‘রাজাকার বাহিনী’ নামে পরিচিত, গড়ে তোলেন। এই রাজাকার বাহিনী রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু এবং ভারতভুক্তির সপক্ষ মুসলিমদের উপর ব্যাপক অত্যাচার, লুণ্ঠন ও হত্যালীলা চালাতে থাকে। তারা রাজ্যের অভ্যন্তরে ও সীমান্তবর্তী ভারতীয় ভূখণ্ডে ত্রাসের সঞ্চার করে।
• অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ: নিজামের এই ভারত-বিরোধী নীতি এবং রাজাকারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রাজ্যের অভ্যন্তরে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে তেলেঙ্গানা অঞ্চলে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে শক্তিশালী কৃষক বিদ্রোহ চলছিল। এছাড়া, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাস থেকে হায়দ্রাবাদ রাজ্য কংগ্রেস ভারতভুক্তির দাবিতে ব্যাপক সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে, যার ফলে প্রায় কুড়ি হাজার সত্যাগ্রহী কারারুদ্ধ হন।
• ভারতের উদ্যোগ ও ‘অপারেশন পোলো’: ভারত সরকার নিজামের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে এবং একটি ‘স্থিতাবস্থা চুক্তি’ (Standstill Agreement) স্বাক্ষর করে। কিন্তু নিজাম পাকিস্তান থেকে অস্ত্র আমদানি, সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের ইত্যাদি ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যান। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার নিজামকে এক চরমপত্র দেয়, যা তিনি অগ্রাহ্য করেন। অবশেষে, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নির্দেশে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে হায়দ্রাবাদে প্রবেশ করে। এই সামরিক অভিযান ‘অপারেশন পোলো’ নামে পরিচিত।
• আত্মসমর্পণ ও ভারতভুক্তি: ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে নিজামের বাহিনী এবং রাজাকাররা মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই (১৮ সেপ্টেম্বর) আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। নিজাম ওসমান আলি খান ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ‘ভারতভুক্তির দলিলে’ স্বাক্ষর করেন এবং ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে হায়দ্রাবাদ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীকালে নিজামকে হায়দ্রাবাদের সাংবিধানিক প্রধান বা ‘রাজপ্রমুখ’ পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল।

এভাবে, মূলত সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমেই হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি ভারতীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল।

🚶‍♂️🚶‍♀️ দ্বিতীয় ভাগ: ১৯৪৭ পরবর্তী উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ ও বিতর্ক 🚶‍♂️🚶‍♀️

---

✏️ সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (Madhyamik History Chapter 8 Question Answer)

১. উদ্বাস্তু কাদের বলা হয়?

উত্তর: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর সাম্প্রদায়িক হিংসা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে নবগঠিত পাকিস্তান (পূর্ব ও পশ্চিম) থেকে লক্ষ লক্ষ অমুসলিম এবং ভারত থেকে বহু মুসলিম মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি, জমিজমা ও মাতৃভূমি ছেড়ে যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই সহায়-সম্বলহীন, আশ্রয়প্রার্থী মানুষদের উদ্বাস্তু বলা হয়।

২. দেশভাগের পর ভারতে প্রধানত কোন দুটি অঞ্চলে ব্যাপক উদ্বাস্তু আগমন ঘটেছিল?

উত্তর: দেশভাগের পর ভারতে প্রধানত দুটি অঞ্চলে ব্যাপক উদ্বাস্তু আগমন ঘটেছিল:

• পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত শিখ ও হিন্দু উদ্বাস্তুরা মূলত পূর্ব পাঞ্জাব এবং দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আশ্রয় নেয়।
• পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ববঙ্গ) থেকে আগত হিন্দু ও বৌদ্ধ উদ্বাস্তুরা মূলত পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরায় আশ্রয় নেয়।

৩. নেহরু-লিয়াকত চুক্তি কবে এবং কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

উত্তর: নেহরু-লিয়াকত চুক্তি (যা দিল্লি চুক্তি নামেও পরিচিত) ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ৮ এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

৪. নেহরু-লিয়াকত চুক্তির দুটি প্রধান শর্ত উল্লেখ করো।

উত্তর: নেহরু-লিয়াকত চুক্তির দুটি প্রধান শর্ত ছিল:

• উভয় দেশ তাদের নিজ নিজ রাষ্ট্রের সংখ্যালঘুদের পূর্ণ নিরাপত্তা, সমানাধিকার এবং ধর্মের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দেবে।
• উভয় দেশে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে এবং দেশত্যাগী মানুষ ১৯৫০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ফিরে এলে তাদের স্থাবর সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

৫. ‘পুনর্বাসনের যুগ’ বলতে কোন সময়কালকে বোঝানো হয় এবং কেন?

উত্তর: স্বাধীনতার পর প্রায় ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত (মতান্তরে ১৯৫১ পর্যন্ত) পাঁচ বছর সময়কালকে ‘পুনর্বাসনের যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কারণ এই সময়ে ভারত সরকার পাকিস্তান থেকে আগত লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের ত্রাণ, আশ্রয় এবং নতুন করে জীবনধারণের উপযোগী পরিকাঠামো তৈরির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিল।

৬. পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বাঙালি উদ্বাস্তুদের কোথায় কোথায় পুনর্বাসন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বাঙালি উদ্বাস্তুদের মূলত মধ্যপ্রদেশ-উড়িষ্যা সংলগ্ন দণ্ডকারণ্য এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে পুনর্বাসন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।

৭. দেশভাগ সম্পর্কিত দুটি আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: দেশভাগ সম্পর্কিত দুটি উল্লেখযোগ্য আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ হল:

• মণিকুন্তলা সেনের ‘সেদিনের কথা’।
• দক্ষিণারঞ্জন বসুর ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’। (অন্যান্য: খুশবন্ত সিং-এর ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’, প্রফুল্ল রায়ের ‘কেয়াপাতার নৌকা’ ইত্যাদি।)

৮. কোন দুজন মন্ত্রী নেহরু-লিয়াকত চুক্তির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন?

উত্তর: নেহরু-লিয়াকত চুক্তির কিছু শর্তের প্রতিবাদে এবং এই চুক্তিকে অপর্যাপ্ত মনে করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং ক্ষিতীশচন্দ্র নিয়োগী (কে. সি. নিয়োগী)।

৯. পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন তুলনামূলকভাবে দ্রুত হওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করো।

উত্তর: পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন তুলনামূলকভাবে দ্রুত হওয়ার দুটি প্রধান কারণ হল:

• সম্পত্তি বিনিময় ও জনবিনিময়: পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে বহু মুসলিম পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যাওয়ায় আগত শিখ ও হিন্দু উদ্বাস্তুরা তাদের পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি ও জমিতে আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। এই জনবিনিময় ছিল প্রায় সম্পূর্ণ।
• ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত মিল: আগত উদ্বাস্তুদের অনেকেরই ভাষা ও সংস্কৃতি উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় তারা পাঞ্জাব ছাড়াও দিল্লি, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে সহজে মানিয়ে নিতে পেরেছিল।

১০. পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার একটি প্রধান কারণ কী ছিল?

উত্তর: পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার একটি প্রধান কারণ ছিল উদ্বাস্তু স্রোতের ধারাবাহিকতা। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত, এমনকি তার পরেও, পূর্ব পাকিস্তান (পরে বাংলাদেশ) থেকে দফায় দফায় উদ্বাস্তু আগমন অব্যাহত ছিল, যা পশ্চিমবঙ্গ ও সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির উপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়া, পশ্চিমবঙ্গে তেমন কোনও জনবিনিময় হয়নি।

---

📖 বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (Madhyamik History Chapter 8 Question Answer)

১. 💬 দেশভাগের পর ভারতে উদ্ভূত উদ্বাস্তু সমস্যার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে, যার অন্যতম প্রধান পরিণতি ছিল ব্যাপক ও করুণ উদ্বাস্তু সমস্যা। এই সমস্যার প্রকৃতি ছিল বহুমাত্রিক:

• ব্যাপকতা ও সংখ্যা: দেশভাগের ফলে প্রায় এক কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুহারা হয়ে সদ্যগঠিত পাকিস্তান থেকে ভারতে এবং ভারত থেকে পাকিস্তানে পাড়ি দিতে বাধ্য হয়। সংখ্যার বিচারে এটি ছিল বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম দ্বি-মুখী অভিপ্রয়াণ।
• সাম্প্রদায়িক হিংসা ও নিরাপত্তাহীনতা: দেশভাগের অব্যবহিত পরেই দুই নবগঠিত রাষ্ট্রেই ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। লক্ষ লক্ষ মানুষ সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার হয়ে নিহত হয়, এবং আরও বহু মানুষ, বিশেষত নারীরা, অবর্ণনীয় অত্যাচারের সম্মুখীন হয়। এই নিরাপত্তাহীনতাই ছিল দেশত্যাগের মূল কারণ।
• আর্থ-সামাজিক সংকট: ভিটেমাটি, জীবিকা, সহায়-সম্বল সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন ভারতে প্রবেশ করে, তখন তা সদ্যস্বাধীন দেশের অর্থনীতির উপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করে। তাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, চিকিৎসা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ভারত সরকারের কাছে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল।
• আঞ্চলিক তারতম্য: উদ্বাস্তু সমস্যার প্রকৃতি পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব পাঞ্জাবে ভিন্ন ছিল।
  • পূর্ব পাঞ্জাবে প্রায় সম্পূর্ণ জনবিনিময় ঘটেছিল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সক্রিয় উদ্যোগে ও পর্যাপ্ত সাহায্যে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত শিখ ও হিন্দু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন তুলনামূলকভাবে দ্রুত সম্পন্ন হয়েছিল।
  • অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু আগমন ছিল দীর্ঘমেয়াদী (১৯৭১ পর্যন্ত) এবং দফায় দফায়। এখানে সেভাবে জনবিনিময় না হওয়ায় এবং কেন্দ্রীয় সাহায্যের অপ্রতুলতার কারণে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী হয়, যা রাজ্যের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।
• মানসিক ও সাংস্কৃতিক অভিঘাত: দেশত্যাগ শুধুমাত্র আর্থিক ক্ষতিই নয়, উদ্বাস্তুদের জীবনে এক গভীর মানসিক আঘাত ও সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি করেছিল। জন্মভূমি হারানোর বেদনা, প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা এবং নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল।
• পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্জ: ভারত সরকারকে দ্রুত শরণার্থী শিবির স্থাপন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান এবং পরবর্তীকালে উদ্বাস্তুদের স্থায়ী আবাসন, জমি বণ্টন, শিক্ষা ও চাকরির ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। এই কাজে বহু বিতর্ক ও সীমাবদ্ধতাও ছিল।

মোটকথা, দেশভাগজনিত উদ্বাস্তু সমস্যা ছিল একটি জাতীয় বিপর্যয়, যা ভারতের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল।

২. 💬 উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারত সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল? এই উদ্যোগগুলি কতটা সফল হয়েছিল?

উত্তর: ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পাকিস্তান থেকে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য সদ্যস্বাধীন ভারত সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।

গৃহীত উদ্যোগসমূহ:

• শাসনতান্ত্রিক কাঠামো গঠন: উদ্বাস্তু সমস্যার মোকাবিলায় ভারত সরকার দ্রুত একটি শাসনতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করে। বিভিন্ন রাজ্যে উদ্বাস্তু ও পুনর্বাসন দপ্তর খোলা হয়। ডেপুটি কমিশনারদের অধীনে শরণার্থী শিবিরগুলির পরিচালনা এবং ত্রাণ, চিকিৎসা ও স্যানিটেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
• ত্রাণ ও আশ্রয়দান: প্রাথমিকভাবে আগত উদ্বাস্তুদের জন্য বিভিন্ন স্থানে (স্কুল, কলেজ, সরকারি দালান, খোলা মাঠ) অস্থায়ী শরণার্থী শিবির খোলা হয়। সেখানে খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় জল, ওষুধপত্র এবং কিছু নগদ অর্থ সরবরাহ করা হয়। শিশুদের জন্য খেলাধুলো এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য হাতের কাজের ব্যবস্থা করে মানসিক অবসাদ কাটানোর চেষ্টাও করা হয়।
• পুনর্বাসনের ব্যবস্থা:
  • দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য সরকার উদ্বাস্তুদের স্থায়ী পুনর্বাসনের উপর জোর দেয়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগতদের জন্য পাঞ্জাব, দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে নতুন উপনগরী গড়ে তোলা হয় এবং পরিত্যক্ত মুসলিম সম্পত্তি বণ্টনের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসিত করা হয়।
  • পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের একটি বড় অংশকে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে দণ্ডকারণ্য (মধ্যপ্রদেশ-ওড়িশা) এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে পাঠানো হয়। এছাড়া, বিভিন্ন রাজ্যে তাদের জন্য কলোনি স্থাপন ও কৃষিজমি বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
  • কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং সরকারি চাকরিতে কিছু সুযোগ তৈরির চেষ্টাও করা হয়।
• নেহরু-লিয়াকত চুক্তি (১৯৫০): উভয় দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান এবং উদ্বাস্তু সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের নিজ নিজ রাষ্ট্রে থাকার জন্য আস্থা অর্জনের চেষ্টা এবং প্রয়োজনে দেশত্যাগেচ্ছুদের সাহায্য করার কথা বলা হয়।
• আইন ও নীতি প্রণয়ন: উদ্বাস্তুদের সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, ক্ষতিপূরণ এবং নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য বিভিন্ন সময়ে আইন ও নীতি প্রণয়ন করা হয়।

সফলতা ও সীমাবদ্ধতা:

• পশ্চিম রণাঙ্গনে সাফল্য: পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের কাজটি তুলনামূলকভাবে দ্রুত ও সফলভাবে সম্পন্ন করা গিয়েছিল। এর কারণ ছিল প্রায় সম্পূর্ণ জনবিনিময়, কেন্দ্রীয় সরকারের অধিক মনোযোগ এবং ভাষাগত ও সংস্কৃতিগতভাবে মানিয়ে নেওয়ার সুবিধা।
• পূর্ব রণাঙ্গনে জটিলতা: পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বাঙালি উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন ছিল অত্যন্ত জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী। এখানে উদ্বাস্তু স্রোত বহুদিন ধরে অব্যাহত ছিল, জনবিনিময় তেমনভাবে হয়নি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যও তুলনামূলকভাবে কম ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। দণ্ডকারণ্যের মতো দূরবর্তী ও প্রতিকূল পরিবেশে পুনর্বাসনের চেষ্টাও অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়নি এবং তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।
• চুক্তির ব্যর্থতা: নেহরু-লিয়াকত চুক্তি প্রাথমিকভাবে কিছু আশা জাগালেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি উদ্বাস্তু স্রোত বন্ধ করতে বা সংখ্যালঘুদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বিধানে পুরোপুরি সফল হয়নি।
• অর্থনৈতিক চাপ: বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুর পুনর্বাসন সদ্যস্বাধীন ভারতের অর্থনীতির উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে।

সব মিলিয়ে, ভারত সরকার একটি অভূতপূর্ব মানবিক সংকটের মোকাবিলায় সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিল। কিছু ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এলেও, বিশেষত পূর্বাঞ্চলে, উদ্বাস্তু সমস্যা বহু দশক ধরে ভারতের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে প্রভাব ফেলেছে।

৩. 💬 দেশভাগ সম্পর্কিত আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথাগুলি কীভাবে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ? কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর: ১৯৪৭ সালের দেশভাগ ছিল শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়, এটি ছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে ওলটপালট করে দেওয়া এক মানবিক বিপর্যয়। এই সময়ের যন্ত্রণা, ছিন্নমূল হওয়ার বেদনা, সাম্প্রদায়িক হিংসার ভয়াবহতা এবং নতুন করে জীবন শুরু করার সংগ্রাম বহু মানুষের ব্যক্তিগত স্মৃতিতে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। এই স্মৃতিগুলি যখন আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা বা উপন্যাসের আকারে প্রকাশিত হয়, তখন তা দেশভাগের ইতিহাসের এক অমূল্য উপাদান হয়ে ওঠে।

ইতিহাসের উপাদান হিসেবে গুরুত্ব:

• ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রতিফলন: সরকারি নথি বা প্রথাগত ইতিহাসে যে মানবিক অনুভূতি, ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি বা যন্ত্রণার ছবি পাওয়া যায় না, তা এই ধরনের লেখাগুলিতে জীবন্ত হয়ে ওঠে। এগুলি দেশভাগকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝতে সাহায্য করে।
• “নিচ থেকে দেখা ইতিহাস” (History from Below): এই রচনাগুলি তথাকথিত ‘সাধারণ’ মানুষের (নারী, শিশু, সংখ্যালঘু) অভিজ্ঞতা, তাদের কণ্ঠস্বর এবং তাদের দৃষ্টিকোণকে ইতিহাসের আলোচনায় স্থান দেয়, যা প্রথাগত ‘বড়মাপের’ রাজনৈতিক ইতিহাস এড়িয়ে যায়।
• সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব: দেশভাগ কীভাবে পারিবারিক সম্পর্ক, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, ভাষা, সংস্কৃতি এবং পরিচিতিকে প্রভাবিত করেছিল, তার গভীর অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া যায় এই লেখাগুলি থেকে।
• সাম্প্রদায়িক হিংসার স্বরূপ উন্মোচন: এই রচনাগুলি সাম্প্রদায়িক হিংসার ভয়াবহতা, তার কারণ এবং সাধারণ মানুষের উপর তার প্রভাবকে অত্যন্ত মর্মস্পর্শীভাবে তুলে ধরে, যা আমাদের সেই সময়ের অন্ধকার দিক সম্পর্কে সচেতন করে।
• পুনর্বাসন ও সংগ্রামের চিত্র: উদ্বাস্তু জীবনের কষ্ট, শরণার্থী শিবিরের জীবন, নতুন করে বাঁচার লড়াই, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সাফল্য-ব্যর্থতা ইত্যাদি বিষয়গুলি এই স্মৃতিকথাগুলিতে বিস্তারিতভাবে পাওয়া যায়।
• বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়: বিভিন্ন অঞ্চলের, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের এবং বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক স্তরের মানুষের লেখা থেকে দেশভাগের একটি বহুমাত্রিক ও তুলনামূলক চিত্র পাওয়া সম্ভব হয়।

কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ (আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা ও উপন্যাস):

• বাংলা:
  • মণিকুন্তলা সেন – ‘সেদিনের কথা’ (স্মৃতিকথা)
  • দক্ষিণারঞ্জন বসু – ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’ (স্মৃতিকথা)
  • হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় – ‘উদ্বাস্তু’ (তৎকালীন উদ্বাস্তু কমিশনারের অভিজ্ঞতা)
  • প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী – ‘দ্য মার্জিনাল মেন’ (গবেষণামূলক, তবে স্মৃতিনির্ভর)
  • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় – ‘অর্ধেক জীবন’, ‘পূর্ব-পশ্চিম’ (উপন্যাস, স্মৃতিনির্ভর)
  • অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় – ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’ (উপন্যাস)
  • প্রফুল্ল রায় – ‘কেয়াপাতার নৌকা’ (উপন্যাস)
• ইংরেজি:
  • খুশবন্ত সিং – ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’ (উপন্যাস)
  • ভীষ্ম সাহানি – ‘তমস’ (হিন্দি উপন্যাস, ইংরেজিতে অনূদিত)
  • উর্বশী বুটালিয়া – ‘দ্য আদার সাইড অফ সাইলেন্স: ভয়েসেস ফ্রম দ্য পার্টিশন অফ ইন্ডিয়া’
  • অমৃতা প্রীতম – ‘রসিদি টিকিট’ (পাঞ্জাবি আত্মজীবনী, ইংরেজিতে অনূদিত)
• উর্দু:
  • সাদাত হাসান মান্টো – বিভিন্ন ছোটগল্প (যেমন: টোবা টেক সিং)

এই ধরনের সাহিত্য শুধুমাত্র অতীতের দলিল নয়, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান শিক্ষাও বহন করে।

🗺️ তৃতীয় ভাগ: ভাষার ভিত্তিতে ভারতে রাজ্য পুনর্গঠন এর উদ্যোগ ও বিতর্ক 🗺️

---

✏️ সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (Madhyamik History Chapter 8 Question Answer)

১. স্বাধীন ভারতে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের দাবি কেন উঠেছিল?

উত্তর: ভারত বহু ভাষাভাষীর দেশ। স্বাধীনতা লাভের পর বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে পৃথক রাজ্যের দাবি জানায়। তাদের ধারণা ছিল, এর মাধ্যমে নিজ নিজ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক ও সংস্কৃতির বিকাশ সহজ হবে এবং প্রশাসনিক কাজকর্মে সুবিধা হবে।

২. ভাষাভিত্তিক প্রদেশ পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে ভারত সরকার কর্তৃক গঠিত প্রথম দুটি কমিশনের নাম কী?

উত্তর: ভাষাভিত্তিক প্রদেশ পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে ভারত সরকার কর্তৃক গঠিত প্রথম দুটি কমিশন হল:

• দার কমিশন (১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে, বিচারপতি এস. কে. দরের নেতৃত্বে)।
• জে.ভি.পি. কমিটি (১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর, জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিয়ে)।

৩. দার কমিশন (১৯৪৮) ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের বিষয়ে কী সুপারিশ করেছিল?

উত্তর: বিচারপতি এস. কে. দরের নেতৃত্বে গঠিত দার কমিশন (১৯৪৮) তার প্রতিবেদনে (১০ ডিসেম্বর, ১৯৪৮) ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের বিরোধিতা করে। কমিশনের মতে, ভাষার ভিত্তিতে প্রদেশ পুনর্গঠন করা হলে তা জাতীয় ঐক্য ও প্রশাসনিক কাজকর্মের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করতে পারে।

৪. জে.ভি.পি. কমিটির সদস্য কারা ছিলেন? এই কমিটি কী সুপারিশ করেছিল?

উত্তর: জে.ভি.পি. কমিটির সদস্যরা ছিলেন জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং পট্টভি সীতারামাইয়া। এই কমিটিও ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিল তার প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ পুনর্গঠনের বিরোধিতা করে, তবে জানায় যে প্রবল জনমতের ভিত্তিতে এই বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

৫. পত্তি শ্রীরামালু কে ছিলেন? তাঁর স্মরণীয় হওয়ার কারণ কী?

উত্তর: পত্তি শ্রীরামালু ছিলেন একজন বিশিষ্ট তেলুগুভাষী গান্ধিবাদী নেতা। তিনি মাদ্রাজের ১১টি তেলুগুভাষী জেলা নিয়ে পৃথক অন্ধ্র রাজ্য গঠনের দাবিতে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ১৯ অক্টোবর থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন। ৫৮ দিন অনশনের পর ১৫ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে এবং ভারত সরকার পৃথক অন্ধ্র রাজ্য গঠনে বাধ্য হয়।

৬. ভারতে ভাষার ভিত্তিতে গঠিত প্রথম রাজ্য কোনটি এবং এটি কবে গঠিত হয়?

উত্তর: ভারতে ভাষার ভিত্তিতে গঠিত প্রথম রাজ্য হল অন্ধ্রপ্রদেশ। এটি সরকারিভাবে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর গঠিত হয়েছিল।

৭. রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (SRC) কবে এবং কার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল? এই কমিশনের অন্য দুজন সদস্যের নাম লেখো।

উত্তর: ভারত সরকার ১৯৫৩ খ্রিস্টাবdeos ২২ ডিসেম্বর ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ (States Reorganisation Commission – SRC) গঠন করে। এই কমিশনের সভাপতি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ফজল আলি। কমিশনের অন্য দুজন সদস্য ছিলেন কে. এম. পানিক্কর এবং হৃদয়নাথ কুঞ্জরু।

৮. রাজ্য পুনর্গঠন আইন কবে পাস হয়? এই আইন অনুসারে ভারতকে কয়টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল?

উত্তর: রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের (ফজল আলি কমিশন) সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’ পাস হয়। এই আইন অনুসারে ভারতকে ১৪টি রাজ্য এবং ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল।

৯. কোন দুটি প্রধান ভাষাভাষী গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র আন্দোলনের ফলে বোম্বাই রাজ্যকে ভেঙে দুটি পৃথক রাজ্য গঠন করা হয়? নতুন রাজ্য দুটির নাম কী?

উত্তর: মারাঠিভাষী এবং গুজরাটিভাষী জনগণের মধ্যে তীব্র আন্দোলনের ফলে বোম্বাই রাজ্যকে ভাঙা হয়। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে বোম্বাই রাজ্য ভেঙে মহারাষ্ট্র (মারাঠিদের জন্য) এবং গুজরাট (গুজরাটিদের জন্য) নামে দুটি পৃথক রাজ্য গঠন করা হয়।

১০. ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধানে স্বীকৃত মোট কটি ভাষা ছিল? সেগুলির মধ্যে যেকোনো চারটি ভাষার নাম লেখো।

উত্তর: ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলে মোট ১৪টি ভাষা সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত ছিল। এদের মধ্যে চারটি ভাষা হল – বাংলা, হিন্দি, তামিল এবং তেলুগু। (অন্যান্য: অসমিয়া, গুজরাটি, কন্নড়, কাশ্মীরি, মালয়ালম, মারাঠি, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি, সংস্কৃত ও উর্দু)।

---

📖 বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন (Madhyamik History Chapter 8 Question Answer)

১. 💬 স্বাধীনতার পর ভারতে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের দাবি ও বিতর্কগুলি আলোচনা করো।

উত্তর: ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর নবগঠিত ভারত রাষ্ট্রের সামনে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যের অন্তর্ভুক্তি এবং রাজ্যগুলির সীমানা পুনর্নির্ধারণ। এই পুনর্গঠনের প্রধান ভিত্তি কী হবে, তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা দেয়, যার মধ্যে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠনের দাবি ছিল সর্বাধিক জোরালো।

দাবির প্রেক্ষাপট ও কারণ:

• ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিচিতি: ভারত একটি বহু ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিগোষ্ঠীর দেশ। বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে পৃথক রাজ্যের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করত, কারণ তারা মনে করত এর মাধ্যমে তাদের স্বতন্ত্র পরিচিতি ও বিকাশ সুনিশ্চিত হবে।
• প্রশাসনিক সুবিধা: একই ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে রাজ্য গঠিত হলে প্রশাসনিক কাজকর্ম এবং জনগণের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ সহজ হবে বলে মনে করা হত।
• কংগ্রেসের পূর্ব প্রতিশ্রুতি: ভারতের জাতীয় কংগ্রেস স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভাষার ভিত্তিতে প্রদেশ গঠনের নীতিকে সমর্থন জানিয়েছিল। ১৯২০ সালের নাগপুর অধিবেশনে এই মর্মে প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছিল।

বিতর্ক ও প্রাথমিক পদক্ষেপ:

• জাতীয় ঐক্যের প্রশ্ন: স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে জওহরলাল নেহরু সহ অনেক জাতীয় নেতাই ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন। তাঁরা আশঙ্কা করেছিলেন যে, এর ফলে দেশে বিভেদকামী মনোভাব বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সদ্য অর্জিত জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হতে পারে।
• দার কমিশন (১৯৪৮): এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার ১৯৪৮ সালের জুন মাসে বিচারপতি এস. কে. দরের নেতৃত্বে ‘ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন’ (দার কমিশন) গঠন করে। এই কমিশন ডিসেম্বরে তাদের প্রতিবেদনে জানায় যে, শুধুমাত্র ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠন করা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী হবে; বরং প্রশাসনিক সুবিধার উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
• জে.ভি.পি. কমিটি (১৯৪৮): দার কমিশনের সুপারিশ তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করলে, কংগ্রেস ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি (জে.ভি.পি. কমিটি) গঠন করে। এই কমিটিও ১৯৪৯ সালের এপ্রিলে তাদের রিপোর্টে জানায় যে, ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের সময় এখনও আসেনি, তবে প্রবল জনমতের চাপ থাকলে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

আন্দোলনের তীব্রতা ও অন্ধ্রপ্রদেশ গঠন:

• কমিশনগুলির এই সুপারিশ সত্ত্বেও, বিশেষত দক্ষিণ ভারতে, ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠনের দাবি তীব্র হতে থাকে। মাদ্রাজের তেলুগুভাষী অঞ্চল নিয়ে পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের দাবিতে গান্ধিবাদী নেতা পত্তি শ্রীরামালু ১৯৫২ সালে আমরণ অনশন শুরু করেন এবং ৫৮ দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। এর ফলে সমগ্র অন্ধ্র অঞ্চলে তীব্র গণবিক্ষোভ ও হিংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়।
• বাধ্য হয়ে ভারত সরকার ১৯৫২ সালের ডিসেম্বরে পৃথক অন্ধ্র রাজ্য গঠনের দাবি মেনে নেয় এবং ১৯৫৩ সালের ১ অক্টোবর ভাষার ভিত্তিতে ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে অন্ধ্রপ্রদেশ গঠিত হয়।

এই ঘটনা অন্যান্য ভাষাভাষী গোষ্ঠীগুলিকে তাদের পৃথক রাজ্যের দাবিতে আরও উৎসাহিত করে, যা পরবর্তীকালে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠনের পথ প্রশস্ত করে।

২. 💬 রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (১৯৫৩) কেন গঠিত হয়েছিল? এই কমিশনের প্রধান সুপারিশগুলি কী ছিল এবং তার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠন আইন (১৯৫৬) কীভাবে ভারতকে পুনর্গঠিত করেছিল?

উত্তর: ১৯৫৩ সালে ভাষার ভিত্তিতে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠিত হওয়ার পর ভারতের অন্যান্য প্রান্তেও একই দাবিতে আন্দোলন তীব্রতর হতে থাকে। এই জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং রাজ্যগুলির সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি সুসংহত নীতি গ্রহণের উদ্দেশ্যে ভারত সরকার রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন করে।

কমিশন গঠনের প্রেক্ষাপট:

• পত্তি শ্রীরামালুর আত্মত্যাগের পর অন্ধ্রপ্রদেশ গঠিত হলে, মারাঠি, গুজরাটি, কন্নড়, মালয়ালম সহ বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ তাদের নিজ নিজ ভাষার ভিত্তিতে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সোচ্চার হয়।
• দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠনের আন্দোলন জাতীয় ঐক্য ও সংহতির পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, এই আশঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু একটি স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে এই কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (SRC) গঠন:

• ভারত সরকার ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ফজল আলির সভাপতিত্বে তিন সদস্যের ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ (States Reorganisation Commission – SRC) গঠন করে।
• কমিশনের অপর দুজন সদস্য ছিলেন বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ও কূটনীতিক সর্দার কে. এম. পানিক্কর এবং রাষ্ট্রনীতিবিদ পণ্ডিত হৃদয়নাথ কুঞ্জরু।

কমিশনের প্রধান সুপারিশগুলি (১৯৫৫): কমিশন প্রায় দুবছর ধরে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মতামত, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং প্রশাসনিক সুবিধা ইত্যাদি বিচার করে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। প্রধান সুপারিশগুলি ছিল:

• ভারতের রাজ্যগুলির পুনর্গঠনের প্রধান ভিত্তি হবে ভাষা। তবে এর সাথে প্রশাসনিক ও আর্থিক সঙ্গতি এবং দেশের ঐক্য ও নিরাপত্তার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।
• বিদ্যমান রাজ্যগুলির শ্রেণিবিভাগ (ক, খ, গ, ঘ শ্রেণিভুক্ত রাজ্য) বাতিল করে শুধুমাত্র ‘রাজ্য’ (State) এবং ‘কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল’ (Union Territory) – এই দুটি বিভাগ থাকবে।
• কমিশন সমগ্র ভারতকে ১৬টি রাজ্য এবং ৩টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার সুপারিশ করে।
• বোম্বাই এবং পাঞ্জাব রাজ্যকে অখণ্ড রাখার সুপারিশ করা হয়, যা পরবর্তীকালে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

রাজ্য পুনর্গঠন আইন (১৯৫৬) ও ভারতের পুনর্গঠন: রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সুপারিশগুলিকে কিছু পরিমার্জন করে ভারত সরকার ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’ পাস করে। এই আইন অনুসারে ভারতকে নিম্নলিখিতভাবে পুনর্গঠিত করা হয়:

• ১৪টি রাজ্য: অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, বিহার, বোম্বাই, জম্মু ও কাশ্মীর, কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, মাদ্রাজ, মহীশূর, ওড়িশা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ।
• ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল: আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, দিল্লি, হিমাচল প্রদেশ, লাক্ষাদ্বীপ-মিনিকয় ও আমিনদিভি দ্বীপপুঞ্জ (পরে লাক্ষাদ্বীপ), মণিপুর এবং ত্রিপুরা।
• এই আইনের মাধ্যমে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের অবলুপ্তি ঘটানো হয় এবং তার বিভিন্ন অংশ অন্ধ্রপ্রদেশ, বোম্বাই ও মহীশূরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। বিহারের পুরুলিয়া ও পূর্ণিয়ার কিছু অংশ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়। ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন ও মালাবার নিয়ে কেরালা রাজ্য গঠিত হয়।

যদিও এই আইন প্রাথমিকভাবে অনেক সমস্যার সমাধান করেছিল, তবুও বোম্বাই ও পাঞ্জাবের মতো কিছু অঞ্চলে ভাষাগত অসন্তোষ থেকেই যায়, যা পরবর্তীকালে আরও রাজ্য গঠনের পথ প্রশস্ত করে।

৩. 💬 স্বাধীন ভারতে সরকারি ভাষা নির্ধারণের বিতর্কটি সংক্ষেপে আলোচনা করো। এই প্রসঙ্গে ১৯৬৩ সালের সরকারি ভাষা আইনের গুরুত্ব কী ছিল?

উত্তর: ভারতের মতো একটি বহু ভাষাভাষী দেশে স্বাধীনতার পর কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্ম পরিচালনা এবং বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি সাধারণ সরকারি ভাষা নির্ধারণ করা ছিল অত্যন্ত জটিল ও বিতর্কিত বিষয়।

বিতর্কের প্রেক্ষাপট:

• ভারতের সংবিধানে প্রাথমিকভাবে (১৯৫০) দেবনাগরী হরফে লিখিত হিন্দিকে ভারতের সরকারি ভাষা (Official Language) হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে এর পাশাপাশি স্থির হয় যে, সংবিধান প্রবর্তনের দিন থেকে ১৫ বছর (অর্থাৎ ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত) ইংরেজি ভাষাও সরকারি কাজে হিন্দির সহযোগী ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
• উদ্দেশ্য ছিল, এই ১৫ বছরের মধ্যে হিন্দিকে সারা দেশে যোগাযোগের ভাষা হিসেবে প্রস্তুত করে তোলা হবে এবং অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলিও ধীরে ধীরে হিন্দিকে গ্রহণ করবে।

বিতর্ক ও আন্দোলন:

• এই ব্যবস্থা অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে, বিশেষত দক্ষিণ ভারতে, তীব্র অসন্তোষ ও বিতর্কের জন্ম দেয়। তারা আশঙ্কা করে যে, হিন্দি ভাষাকে তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং এর ফলে সরকারি চাকরি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা অসুবিধার সম্মুখীন হবে।
• হিন্দিকে একমাত্র সরকারি ভাষা করার বিরুদ্ধে তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক প্রভৃতি রাজ্যে জোরালো আন্দোলন শুরু হয়। তারা ইংরেজিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সহযোগী সরকারি ভাষা হিসেবে বজায় রাখার দাবি জানায়।

সরকারি ভাষা কমিশন (১৯৫৫) ও পরবর্তী পদক্ষেপ:

• কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে বি. জি. খেরের সভাপতিত্বে একটি ‘সরকারি ভাষা কমিশন’ গঠন করে। এই কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন ভাষাবিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় (পশ্চিমবঙ্গ) এবং পি. সুব্বারোয়ান (তামিলনাড়ু)।
• কমিশন ১৯৫৬ সালে তার প্রতিবেদনে জানায় যে, ১৯৬৫ সালের পর হিন্দিই হবে ভারতের একমাত্র সরকারি ভাষা, তবে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বন্ধ করার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। এই সুপারিশ বিতর্ক আরও বাড়িয়ে তোলে।

১৯৬৩ সালের সরকারি ভাষা আইন ও তার গুরুত্ব:

• অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলির তীব্র আন্দোলনের চাপে এবং জাতীয় সংহতি বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘সরকারি ভাষা আইন’ (Official Languages Act, 1963) পাস করে।
• এই আইনের প্রধান গুরুত্ব ছিল:
  • এটি স্থির করে যে, ১৯৬৫ সালের ২৬ জানুয়ারির পরও হিন্দির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা সরকারি কাজকর্ম, সংসদের কাজ এবং কেন্দ্র ও অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলির মধ্যে যোগাযোগের জন্য অনির্দিষ্টকাল ধরে ব্যবহৃত হতে থাকবে।
  • এটি রাজ্য বিধানসভাগুলিকে নিজ নিজ রাজ্যের জন্য এক বা একাধিক সরকারি ভাষা নির্দিষ্ট করার অধিকার দেয়।
  • এই আইন অ-হিন্দিভাষী জনগণের ভাষাগত উদ্বেগ প্রশমিত করতে এবং জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি প্রমাণ করে যে ভারত সরকার ভাষাগত বৈচিত্র্যকে সম্মান জানায়।

পরবর্তীকালে ১৯৬৭ সালে এই আইন সংশোধন করে দ্বি-ভাষা নীতি (হিন্দি ও ইংরেজি) আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে ভারত একটি বহুভাষিক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ঐক্যের পথ খুঁজে পেয়েছিল।